বিশাল ব্যবধানে পরাভূত ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে অ্যাশেজ

স্ট্রাইকে জেমি অ্যান্ডারসন। বল করলেন জস হ্যাজলউড। অ্যান্ডারসনের ব্যাট ছুঁয়ে চলে গেলো টিম পেইনের গ্লাভসে। এবারের অ্যাশেজে যা পেইনের ২৬তম ডিসমিসাল। এর মাধ্যমেই ইনিংস ও ১২৩ রানের ব্যাবধানে সিডনি টেস্ট জিতলো অস্ট্রেলিয়া। যা নিশ্চিত করলো ৪-০ ব্যবধানে তাদের অ্যাশেজ জয়ও।

হ্যাজলউডের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার পর রিভিউ নিতে যাচ্ছিলেন অ্যান্ডারসন। সঙ্গে সঙ্গে আম্পায়ার জানিয়ে দেন যে, তাদের আর কোনো রিভিউ বাকি নেই। এই দৃশ্যটা যেনো হয়ে থাকলো অ্যাশেজের প্রতীকী রূপ— ইংল্যান্ড করতে চাইলো অনেক কিছুই, তাদের করা হলো না!

সিডনি টেস্ট শুরু হয় ইংল্যান্ডের ৩৪৬ রানের ইনিংস দিয়ে। যেখানে সর্বোচ্চ রান ছিলো জো রুটের। তিনি করেছিলেন ৮৩ রান। ৬২ রান আসে ডেভিড মালানের ব্যাট থেকে। আর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চার উইকেট নেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স।

জবাব দিতে নেমে ৬৪৯ রানে পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন উসমান খাজা। অনেক দিন ধরে রান পাচ্ছিলেন না এই ব্যাটসম্যান। ফলে তার দলে থাকা নিয়েও শুরু হয়ে যাচ্ছিলো নানা গুঞ্জন। এর মধ্যেই ১৭১ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলে নিজের ব্যাটসম্যান সত্তার অপূর্ব প্রকাশ ঘটান তিনি।

তবে অস্ট্রেলিয়ার পাহাড়সমান ইনিংসের গল্পে খাজার আলোটা কেড়ে নিয়েছেন ‘মার্শ’ ভাইরা। শন ও মিচেল মার্শ— এক সঙ্গে ক্রিজে থেকে করেছেন সেঞ্চুরি। মার্ক ও স্টিভ ওয়াহর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়া দুই ভাইয়ের সেঞ্চুরিই মূলত রানের পাহাড়ে নিয়ে যায় অসিদের। তাদের প্রথম ইনিংস শেষে ইংল্যান্ড পিছিয়ে পড়ে ৩০৩ রানে।

এই রান তাড়া করতে গিয়ে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় মাত্র ১৮০ রানে। প্যাট কামিন্স আবার নেন চার উইকেট। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও ওঠে তার হাতেই। শেষ ইনিংসেও ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান আসে জো রুটের ব্যাট থেকে। তিনি করেন ৫৮ রান। এই রান করার পর নিজের ইনিংসটা আর এগিয়ে নিতে পারেননি রুট। অতিরিক্ত পানিশূন্যতার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া রুট মাঠ ছেড়ে চলে যান।

যে কারণেই হোক, ম্যাচ শেষের আগেই ইংলিশ অধিনায়কের মাঠ ছাড়ার ব্যাপারটিও অ্যাশেজের প্রতীকী রূপ হিসেবে কল্পনা করা যায়। পুরো সিরিজেই আসলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এভাবে মাঠে কোনো পাত্তা পায়নি ইংলিশরা। অস্ট্রেলীয়দের, বিশেষ স্টিভ স্মিথ এবং তার পেসারদ দাপটে ইংল্যান্ড এই অ্যাশেজে হয়ে থাকলো একেবারে কোণঠাসা।

আগের চার টেস্টের ফল

ব্রিজবেনে অনুষ্ঠেয় প্রথম অ্যাশেজ টেস্টে ১০ উইকেটে জিতে স্বাগতিকরা। ওই ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেন স্টিভ স্মিথ। শেষ ইনিংসে ওপেনিংয়ে ১৭৩ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফট।

পরের টেস্টটি হয় ব্রিজবেনে। সেখানে ১২০ রানে ইংলিশদের হারায় স্বাগতিকরা। এই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন শন মার্শ। পাঁচটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও জেমস অ্যান্ডারসন। ম্যাচ শেষে অবশ্য স্টার্কের পাঁচ উইকেটের জয় হয়। জনি বেয়ারস্টো এবং ডেভিড মালান সেঞ্চুরি করে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট জমিয়ে তুলেন পার্থে। কিন্তু জবাব দিতে নেমে স্টিভ স্মিথের ডাবল সেঞ্চুরি এবং মিচেল মার্শের ১৮১ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া দেয় কঠিন জবাব। ম্যাচ শেষ হয় জস হ্যাজলউডের পাঁচ উইকেট এবং ইংল্যান্ডের ইনিংস ও ৪১ রানের হারে।

মেলবোর্নে সিরিজের চতুর্থ টেস্টটি হয় ড্র। ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরিতে ভর করে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া করে ৩২৭ রান। জবাব দিতে নেমে অ্যালিস্টার কুকের ডাবল সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ড করে ৪৯১ রান। কিছুটা বেকায়দায় পড়ে ‘ম্যারাথন ব্লক’ শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। শেষ ইনিংসে ১২৪ ওভার ব্যাটিং করে মাত্র ২৬৩ রান তুলে ম্যাচের বাকিটা সময় শেষ করে দেয় তারা। স্টিভ স্মিথ ২৭৫ বলে করেন ১০২ রান! তার ইনিংসই প্রমাণ করে যে, অস্ট্রেলিয়া এই ইনিংসে রান করা নয়, কাজ মনে করেছিলো কেবল বল খেলাকে!