সেই জেদেই কি অমন আগুন মুশফিকের?

শ্রীলঙ্কার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বল। বোলার রুবেল হোসেন। ব্যাটসম্যান কুসাল মেন্ডিস। শর্ট বলটা এলোমেলো টাইমিংয়ে কোনো মতে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগের দিকে ঠেলে এক রান নিলেন কুসাল। দৌড়ে রানটা নেয়ার পথে রুবেলকে কিছুটা একট বললেন ব্যাটসম্যান। রুবেল গেলেন তেড়ে। কুসালও এলেন তার দিকে। এলেন তার সঙ্গে থাকা দানুসকা গুনাথিলাকাও। জড়ো হলেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-তামিম ও আম্পায়ারও। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লো উত্তেজনা। ওই মুহূর্তটাই কি তাতিয়ে দিয়েছিলো মুশফিক-লিটন-তামিমকে?

হলেও হতে পারে। ওই ঘটনা তাতিয়ে দিয়ে থাকতে পারে লঙ্কানদেরও। প্রেমাদাসা স্টেডিয়মে টি-টোয়েন্টিতে ২০৭-এর বেশি রান ছিলো না কোনো দলের। কিন্তু নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে শ্রীলঙ্কা করে ফেলে ২১৪ রান। দারুণ দুটি ইনিংস খেলে প্রেমাদাসায় উপস্থিত হওয়া দর্শকদের উৎসবের সন্ধ্যা উপহার দেয়ার আভাস দেন কুসাল মেন্ডিস ও কুসাল পেরেরা।

বোলিংয়ে বাংলাদেশ ছিলো নিতান্তই দুর্বল। দলের প্রধান তিন বোলারই খরচ করেন অন্তত ৪০ করে রান। মোস্তাফিজ গুনে ফেলেন ৪৮, যা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড। এক দিকে হারতে হারতে মনোবল হারিয়ে কোণঠাসা আত্মবিশ্বাস, তার উপর ২১৪ রানের বোঝা; নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পরাজয়ের অপেক্ষায়ই করতে হচ্ছিলো দর্শকদের।

কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে পরিস্থিতি ঘোরাতে খুব বেশি সময় নেননি তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ওপেনার না হলেও এই ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে যান লিটন। ঢাকা লিগে দুর্দান্ত খেলতে থাকা এই ব্যাটসম্যান প্রেমাদাসার গ্যালারিতে পিনপতন নীরবতা নামিয়ে আনেন সেই দুর্দান্ত রূপ দেখিয়েই। অসাধারণ সব টাইমিংয়ে একটার পর একটা বল সীমানাছাড়া করে বুঝিয়ে দেন যে, সন্ধ্যাটা কেবলই তার।

লিটন অবশ্য টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। মাত্র ১৯ বলে ৪৩ রানের ঝড়ের পর বিদায় নেন তিনি। কিন্তু তার ঝড়ের রেশ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে। তামিম করেন ২৯ বলে ৪৭ রান। ২২ বলে ২৪ করে যান সৌম্য সরকার। কিন্তু এদের সবাইকে ছাপিয়ে নায়ক বনে যান মুশফিকুর রহিম।

কুসাল মেন্ডিস রুবেলকে যদি তখন সত্যিই অপ্রীতিকর কিছু বলে থাকেন, তাহলে ম্যাচ শেষে নিশ্চিত সেই কারণে আফসোসে পুড়েছেন তিনি। কারণ ওই ঘটনাই হয়তো তাতিয়ে দিয়েছিলো মুশফিককে। ২০৫-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৭২ রান করে মুশফিকই তো শ্রীলঙ্কার টানা দ্বিতীয় জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।

বাংলদেশের অন্যতম আগ্রাসী ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকের দারুণ সুনাম আছে। এ দিন সেই আগ্রাসনের অন্য রূপই দেখিয়েছেন তিনি। যার একটা ইনিংসের ১৩ তম ওভারের তৃতীয় বল। দানুসকা গুনাথিলাকা বলটা করতে গিয়েও করেননি। কারণ মুশফিক আগেই তার স্টান্স বদলে ফেলেছিলেন। আবার এগিয়ে গুনাথিলাকা বলটা করতে যাবেন, ওমনিই সরে যান মুশফিক। প্রতিপক্ষের সঙ্গে এই মনস্তাত্ত্বিক লড়াই শেষে সত্যিই যখন বলটা হলো, মুশফিক ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে বলটা আছড়ে ফেললেন সীমানায়!

ওই ছোট্ট লড়াইয়ে হারার পর গুনাথিলাকা হয়তো কুসাল মেন্ডিসকে একটু বকেও থাকতে পারেন। কারণ তার চোখের সামনেই তো রুবেলের দিকে তাচ্ছিল্যের বাণী ছুড়েছিলেন কুসাল!