সাকিবকে জোর করে খেলানো হচ্ছে না তো?

গত কয়েকটা মাস ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে যে হারের চোরাবালিতে তামিম-মুশফিকদের পা ডুবেছে, তা থেকে এখনো উঠা যায়নি। শ্রীলঙ্কা চলমান নিদাহাস ট্রফির শিরোপা জিততে পারলে, হারের ক্ষতে পড়বে দারুণ সুখের প্রলেপ। এই আশায় সাকিব আল হাসানকে তো আবার জোর করে খেলিয়ে দেয়া হচ্ছে না?

প্রশ্নটা উঠছে সঙ্গত কারণেই। সাকিব সর্বশেষ খেলেছেন গত জানুয়ারির ২৭ তারিখে। এরপর দেড় মাসের বেশি সময় চলে গেছে। কিন্তু সাকিব ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সদ সমাপ্ত সপ্তাহে ‘স্পোর্টিং অ্যাকটিভিটি’তে ফেরার অনুমতি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস কি তিনি ফিরে পেয়েছেন?

গত সোমবার (১২ মার্চ) বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীস চৌধুরী জানান যে, সাকিব শিগগিরই স্পোর্টিং অ্যাকটিভিটিতে ফিরতে পারবে। তবে তার ম্যাচ খেলার মতো ফিট হতে আরো সময়ের প্রয়োজন।

চিকিৎসকের ওই বক্তব্যের তিন দিনের মধ্যেই সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে ডাকা হয়েছে। নিদাহাস ট্রফি খেলতে তিনি কলম্বো উড়েও গেছেন। হয়তো শুক্রবার নেমে পড়বেন মাঠেও। অথচ তার ম্যাচ খেলার ফিটনেস নিয়েই আছে সংশয়।

সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটারকে সংশয়পূর্ণ ফিটনেস নিয়ে খেলানোটা হতে পারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আঘাতের জায়গায় লাগতে পারে আরো বড় আঘাত এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে পড়তে পারেন তিনি। যার কারণে আরো বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ দল।

নিদাহাস ট্রফির দল ঘোষণার সময় সাকিবের ইনজুরির অবস্থা না জেনেই তাকে স্কোয়াডে রেখে দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। তখনই বোঝা গিয়েছিলো, সাকিবকে খেলিয়ে কিছু সাফল্য পেতে কতোটা মরিয়া হয়ে আছে বিসিবি। সাময়িক সাফল্য যে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যর্থতার কারণ হতে পারে, সেটা যেনো বুঝতেই পারছেন না মিনহাজুলরা।

সাকিব দলে ডাক পাওয়ার পর তার বিষয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। তাকে জিজ্ঞেস কর হয়েছিলো, সাকিবকে খেলাতে কি একটু বেশিই মরিয়া বাংলাদেশ। উত্তরে ওয়ালশ বলেন, ‘আমরা তাকে পেতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। তারপরও তাকে কেবল তখনই খেলানো হবে, যখন তার ফিটনেস পুরোপুরি ফিট বলে মনে হবে। না হলে আমরা তাকে খেলাবো না। সাকিবকে নিয়ে আমরা কোনো সংশয় সৃষ্টি করতে চাই না।’

অতীত বলে, বিসিবি বরাবরই দীর্ঘ মেয়াদের সাফল্যের তুলনায় সাময়িক সাফল্যে বেশি মনোযোগী। সে হিসেবে গত কয়েক মাসের ব্যর্থতা মুছতে একটা ট্রফি জেতার জন্য তাদের মরিয়া হওয়া কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় এবং এই জন্য সংশয়পূর্ণ ফিটনেস নিয়ে সাকিবকে খেলতে নামিয়ে দেয়ার মতো হঠকারি সিদ্ধান্তও তারা নিয়ে ফেলতে পারে।

সত্যিই সেটা হলে, সাকিবেরই উচিত বিষয়টি নিয়ে সচেতন থাকা। না হলে দীর্ঘ মেয়াদের সমস্যায় বিপদে পড়বেন তিনিই। সঙ্গে বিপদ বাড়বে বাংলাদেশেরও। তাকে ছাড়া বাংলাদেশ দল পরিপূর্ণ আপাতত, এই সত্য মানার পরও সাকিবের উচিত, শতভাগ ফিটনেস নিশ্চিতেরই পরে মাঠে নামা। একজন পেশাদার অ্যাথলেটের ব্যক্তিগত কর্তব্য এটিই।