নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে আগে ব্যাটিং করে ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। এই্ ম্যাচ জিততে ভারতকে ওভার প্রতি আট রানের বেশি তুলতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন সাব্বির রহমান। তিনি ৫০ বলে ৭৭ রান করেন। শেষ দিকে সাত বলে ১৯ রান করে দলের রান ১৬০-এর উপরে নিয়ে যান মিরাজ। ভারতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করে তিন উইকেট নেন যুজবেন্দ্র চাহাল।
গত ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া জয়দেব উনাদকটকে দিয়ে ফাইনাল শুরু করে ভারত। প্রথম ওভারে তামিম ইকবালের এক চারে নয় রান নেয় বাংলাদেশ। শুরুটা হয় আশাজাগানিয়া। তবে পরের ওভারে চার রানের বেশি নিতে পারেননি তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ওয়াশিংটন সুন্দরকে সাবধানে খেলেন তারা।
তবে তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই উনাদকটকে ছয় মেরে দেন লিটন। পাওয়ার প্লের প্রথম অর্ধেকে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে উঠে যায় ২৬ রান। অর্থাৎ ওভার প্রতি আট রানের বেশি তুলেন তামিম ও লিটন।
কিন্তু চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম আঘাত হানেন ওয়াশিংটন। তাকে সাবধানে খেলার যে পরিকল্পনা ছিলো, ম্যাচের চতুর্থ এবং ওয়াশিংটনের দ্বিতীয় ওভারে তা ভুলে বসেন লিটন। ২৬ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। ওয়াশিংটনের প্রথম দুই ওভারে পাঁচ রানের বেশি নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
পাঁচ রান যোগ হতে না হতেই তামিম ও সৌম্য ফেরেন ড্রেসিংরুমে। যুজবেন্দ্র চাহালের বলে ডাউন দ্য উইকেটে উঠিয়ে মেরেছিলেন তামিম। অনেক উপরে উঠে যাওয়া বল সীমানায় দারুণ দক্ষতায় ধরে ফেলেন শার্দুল ঠাকুর। একই ওভারে ফেরেন সৌম্য। সুইপ করতে গিয়ে তিনি ক্যাচ তুলে দেন শেখর ধাওয়ানের হাতে। পাওয়ার প্লের এক ওভার বাকি থাকতেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে ততক্ষণে যোগ হয়েছে মাত্র ৩৩ রান।
ফাইনালের আগে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ওয়াশিংটন সুন্দর ও যুজবেন্দ্র চাহালকে পাওয়ার প্লেতে সাবধানে খেলতে হবে। কেনো তিনি এ কথা বলেছিন, পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই তা প্রমাণ হয়ে যায়! তাদের কাছে তিন উইকেটে হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান করে বাংলাদেশ।
অষ্টম ওভারে গিয়ে প্রত্যাশিত আক্রমণ করেন সাব্বির রহমান। বিজয় শঙ্করের এই ওভারে আসে ১৪ রান। সাব্বির একটি করে ছয় ও চার মারেন। বাকি চার রান আসে দৌড়ে।
১০ ওভার শেষে মাত্র ৬৮ রান করে বাংলাদেশ। পরের ১০ ওভারে বড় কিছুর সম্ভাবনা দারুণভাবে ধাক্কা খায় একাদশ ওভারের প্রথম বলে মুশফিকের দৃষ্টিকটু আউটে। আবারও যুজবেন্দ্র চাহাল হানেন আঘাত। অফস্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। দারুণ ক্যাচ নেন বিজয় শঙ্কর, যা বিপদে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ ১০০ রান করে ১৪ ওভারে গিয়ে। এরপর শেষ ছয় ওভারে যখন প্রচুর রানের প্রয়োজন, তখনই অদ্ভুতুরে রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
বিজয় শঙ্করের স্লোয়ার মিস করেন মাহমুদুল্লাহ। বিপরীত প্রান্তে থাকা সাব্বির চলে যান রান নিতে। মাহমুদুল্লাহ আর ফিরতে পারেননি। যদিও তার সামনে একটু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু দোটানায় পড়ে ১৬ বলে ২১ রান করেই ফিরতে হয় তাকে। এই জুটিতে ৩৬ রান পায় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহর বিদায় ভারতীয় বোলারদের দারুণ নির্ভার করে দেয়।
কিন্তু সেই নির্ভার সময়ের ছন্দভঙ্গ করতে থাকেন সাব্বির রহমান। ক্যারিয়ারের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন তিনি। সাকিবের সঙ্গে গড়ে তুলেন ২৯ রানের জুটি। কিন্তু সাকিবও বিদায় নেন রান আউটের ফাঁদে পড়ে।
সাব্বিরের ব্যাটে চড়ে শেষ দিকে যখন বাংলাদেশ আবার কিছু বড় শটের অপেক্ষায়, তখনই বোল্ড হয়ে ফেরেন সাব্বির। ৫০ বলে ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। দলীয় ১৪৭ রানে আউট হন সাব্বির। তার বিদায়ের পরের ১০ বলে বাংলাদেশ নেয় ১৯ রান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ১৬৬ রান। সাত বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।