মাশরাফির এক পরামর্শেই বদলে যান তামিম ইকবাল

১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ চট্টগ্রামের খান পরিবারে ঘর আলো করে পৃথিবীতে আসেন তামিম ইকবাল। তারপর থেকে কেটে গেছে পাক্কা ২৮ বছর। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলেই তামিম খেলে ফেলেছেন ১০ বছরের বেশি। নিজের ২৮তম জন্মদিনের ঠিক আগে তামিম জানালেন কিভাবে মাশরাফির এক পরামর্শে তিনি বদলে গেছেন আমূল। হয়ে গেছেন দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যন, হয়ে চলছেন পৃথিবীর সেরা ব্যাটসম্যানদের একজনও। 

ঘটনা ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পরের। সেই সময়ে তামিম ছিলেন নিজের ছায়া হয়েছে। বিশ্বকাপের ছয় ম্যাচে সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকারের চেয়েও বাজে অবস্থা ছিলো তার। রান করেছিলেন ২৬-এরও কম গড়ে।

ফলে বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে তিনি থাকবেন কিনা, তা নিয়ে চলছিলো তুমুল সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামিমকে সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে করা হচ্ছিলো হেয়। ব্যাটে রান নেই, দলে থাকা নিয়েই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা, এর মধ্যে কঠোর সমালোচনার তীর; তামিম হয়ে উঠেছিলেন দিকহারা।

ওই অবস্থায় তার কাঁধে হাত রাখেন মাশরাফি। বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে। তামিমের প্রজন্মের প্রায় সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য যে কোনোর চেয়ে বেশি তৎপর। ফলে তামিমের জন্য কাজটা সহজ ছিলো না। কিন্তু তিনি মাশরাফির কথা মেনে নিলেন। বন্ধ করতে শুরু করলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিযাতায়াত।

একটা ব্যাপারই তামিমের ব্যাটসম্যান সত্তাকে জাগিয়ে তুললো নতুন করে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তামিম বলেন, ‘ওই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি খুব তৎপর ছিলাম। সেখানে নান সমালোচনা চোখে পড়তো এবং আমি ধীরে ধীরে এর মাধ্যমে নিজের উপর চাপ বাড়িয়ে ফেলতাম। যা আমার প্রভাব ফেলছিলো আমার খেলায়।’

তামিম বলেন, ‘মাশরাফি বয়সে আমার অনেক বড়। কিন্তু একই সাথে তিনি আমার বন্ধুর মতোও। আমি এমন কোনো ব্যাপার নেই, যা তার সাথে শেয়ার করি না। আমি তখন মাশরাফির কথাটা শুনলাম এবং এরপর থেকে নিজের উপর আর কোনো অপ্রয়োজনীয় চাপ নেইনি। বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়। আমি ওই সময়ে ভাবতাম- এবার দেখিয়ে দিবো। এই চিন্তাই আমার খেলা নষ্ট করে দিচ্ছিলো। কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছি।’

মাশরাফির কথাটা শোনার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বপ্নের মতো ব্যাটিং করেন তামিশ। তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে দুই সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে পাকিস্তানকে। তামিম এখন সেই সিরিজকেই তার ব্যাটসম্যান সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের মূল ভিত্তি মনে করেন।

নিজের ২৮তম জন্মদিনটা বাংলাদেশে পালন করতে পারছেন না তামিম। নিদাহাস ট্রফি শেষ হওয়ার পর তিনি উড়ে গেছেন পাকিস্তানে। সেখানে লাহোরে পিএসএলের এলিমিনেটর ম্যাচে তিনি খেলবেন পেশোয়ার জালমির হয়ে।