উত্থানের নতুন গল্প লিখে বিশ্বকাপে আফগানিস্তান

বিশ্বকাপের উত্তপ্ত যুদ্ধে নাম লেখাতে জয়ের কোনো বিকল্প ছিলো না আফগানিস্তানের সামনে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে জয়ের মূল ভিত্তি তারা পেয়ে যায় প্রথম ইনিংসেই, আইরিশদের ২০৯ রানে গুটিয়ে। পরে ২১০ রানের লক্ষ্যটা পূরণ করে আফগানিস্তান লিখে দিলো উত্থানের নতুন গল্প। সর্বশেষ দল হিসেবে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে নাম উঠলো তাদের।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রথম পর্যায়ে টানা তিন ম্যাচ হারার পরও আফগানিস্তানের বিশ্বকাপে উঠাটা এক বিস্ময়েরই জন্ম দিলো। যে বিস্ময়ে মিলেমিশে থাকলো সাহস-ভাগ্য ও পারফর্মের দারুণ সব গল্প।

হারারে স্পোর্টস ক্লাবে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ২০৯ রান করে আয়ারল্যান্ড। আফগানিস্তানের বোলারদের সামনে তাদের ব্যাটসম্যানদের দেখা গেছে দারুণ বিপদে পড়তে।

বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন রশিদ খান। ১০ ওভারে ৪০ রন দিয়ে তিন উইকেট নেন তিনি। মুজিব উর রহমানও দুর্দান্ত বোলিং করেন। কোনো উইকেট না পেলেও তিনি ১০ ওভারে দেন মাত্র ৩১ রান। আইরিশদের হয়ে কেবল মাত্র পল স্টার্লিং কিছুটা দৃঢ়তা দেখান। ৫৫ রন করেন তিনি।

জবাব দিতে নেমে মোহাম্মদ শেহজাদ উড়ন্ত সূচনা এনে দেন আফগানিস্তানকে। ৫০ বলে ৫৪ রান করেন তিনি। মারেন ছয়টি চার ও দুটি ছয়। গুলবাদিন নাইবকে সাথে নিয়ে ওপেনিংয়ে ৮৬ রানের জুটি গড়েন তিনি। ওপেনারদের এই সূচনার উপর দাঁড়িয়ে বাকি কাজটা শেষ করতে তেমন কোনো বেগই পেতে হয়নি আফগানিস্তানকে।

শেষ পর্যন্ত পাঁচ বল বাকি থাকতেই জিতে যায় আফগানিস্তান। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে চার মেরে দলকে জেতান এবং বিশ্বকাপে নিয়ে যান আসগর স্টানিকজাই। আসগর ২৯ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন।

অথচ আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হতে বসেছিলো বাছাই পর্বের গ্রুপ পর্যায়েই। কিন্তু ভাগ্য নাকি সাহসীদের পক্ষে থাকে। এই সত্যটা যেনো প্রমাণ হলো আফগানিস্তানের মাধ্যমেই।

গ্রুপ পর্বে টানা তিন হারের পরও তারা সুপার সিক্সে উঠে যায় গ্রুপের অন্য সদস্যদের ব্যর্থতায়। সবার ব্যর্থতায় নয় অবশ্য। গ্রুপ পর্বে নেপালের কাছে হংকংয়ের হারই মূলত সুপার সিক্সে উঠতে সাহায্য করে আফগানদের।

বাদ পড়তে পড়তে সুপার সিক্সে উঠার সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগায় আফগানিস্তান। প্রথম ম্যাচেই তারা হারিয়ে দেয় উইন্ডিজকে। ওই হারের পরও অবশ্য উইন্ডিজ বিশ্বকাপে চলে গেছে। অন্য দিকে ওই জয় আফগানিস্তানকে দেয় বিশ্বকাপে উঠার সাহস।

এ দিকে, জিম্বাবুয়ে অত্যন্ত বাজেভাবে হেরে যায় স্কটল্যান্ডের কাছে। জিম্বাবুয়ে যদি ম্যচটা জিততো, তাহলে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপে উঠার আর কোনো উপায় থাকতো না। জিম্বাবুয়ে তাদের ঘরের মাঠে শেষ ১২ বলে ১৯ রান নিতে ব্যর্থ হয় এবং হেরে যায় স্কটল্যান্ডের কাছে। যা তাদেরকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেয়। ১৯৮৩ সাল থেকে টানা আট বিশ্বকাপ খেলার পর জিম্বাবুয়ে এই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে পারছে না।

জিম্বাবুয়ের বিদায় আফগানিস্তানের সামনে খুলে দেয় পথ। সমীকরণ দাঁড়ায়— আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে নিশ্চিত বিশ্বকাপ, হারলে বিদায়, ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও বিদায়।

এই অবস্থায় বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার ম্যাচে শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে প্রথমে আফগানিস্তানের বোলাররা দারুণ দক্ষতায় ২০৯ রানে আটকে দেন আইরিশদের। বাকি কাজ সাবধানে সামলে ২১০ রান করেন ব্যাটসম্যানরা। আফগনিস্তান উঠে যায় টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে। পক্ষান্তরে ২০০৭ সাল থেকে টানা বিশ্বকাপ খেলে আসা আয়ারল্যান্ডকে নিতে হয় বিদায়।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফাইনালে এখন উইন্ডিজকে মোকাবেলা করবে আফগানিস্তান। রোববার একই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল। ফাইনালের ফল যাই হোক, বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে গেছে দুই ফাইনালিস্টেরই।