ক্রিকেট দুনিয়ায় আফগানিস্তানের উত্থানের গল্পটা অসাধারণ। যে গল্পের পরতে পরতে বিস্ময় আর বিস্ময়। যে গল্পের প্যারায় প্যারায় সাহস ও বিশ্বাসের অবিশ্বাস্য উপস্থিতি। মাত্র এক দশকের ব্যাবধানে আফগানিস্তানের ক্রিকেট বিশ্বের কাছে সমীহ জাগানিয়া এক নামে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাদের এই শক্তির উৎস কোথায়? তাদের বিশ্বাস ও সাহসের ভিত্তি কোথায়?

afghanistan close to enter to the world cup

রোববার থেকে ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তান মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশের। দুই দেশের ক্রিকেটীয় ইতিহাস, শক্তি-মত্তা, পারফর্ম্যান্স ও অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে এই সিরিজে চোখ বন্ধ করে বাংলাদেশকে ফেভারিট বলা যায়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বীকৃত ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে আফগানিস্তান গত দুই বছরে এমনই দাপট দেখিয়েছে যে, বাংলাদেশকে রীতিমত আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের নিয়ে গবেষণা করতে হচ্ছে। কারণ সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দেশের সঙ্গে জিতলে বাংলাদেশের গর্বের কিছু থাকবে না। কিন্তু হারলে সম্মান নিয়ে লেগে যাবে টানাটানি।

কিন্তু আফগানিস্তান এতোটা বড় নাম হয়ে উঠলো কী করে! ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ গত তিন বছরে এগিয়ে গেছে আরো অনেকটা পথ। এই সময়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে টেস্টে বধ করেছেন মুশফিকুর রহিমরা। ওয়ানডেতেও এসেছে ঈর্ষণীয় সব সাফল্য। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একেকটা পরাক্রমশালী দল সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। তারপরও আফগানিস্তানের সামনে পড়ে সেই বাংলাদেশকে চিন্তা করতে হচ্ছে কতো কিছু। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান এতো বড় শক্তি কিভাবে হয়ে উঠলো, তা ভেবে তো বিস্ময় জাগবেই।

afghanistan beat bangladesh for second time in odi

আফগানিস্তানের শক্তির উৎস খুঁজতে গেলে তাকাতে হবে তাদের দেশে ক্রিকেট কিভাবে প্রবেশ করলো, সেই ইতিহাসের দিকে। যে ইতিহাসের শুরুতেই আছে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পাহাড়ঘেরা দেশটিতে সোভিয়েত আগ্রাসনের দুঃসহ স্মৃতি। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সেই সময়ের পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখলের পাঁয়তারা শুরু করে। খেটে খাওয়া মানুষের দেশ আফগানিস্তানে হামলা করে বসে তারা। যে হামলায় এক সপ্তাহেই পর্যুদস্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো আফগানদের। কিন্তু তাদের ভিতরের আগুন বেরিয়ে আসে তখনই। সোভিয়েত রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে প্রতিরোধ গড়ে তুলে আফগানিস্তানের বীর-মানুষ। এক দিন দুই দিন বা এক সপ্তাহ নয়, সেই প্রতিরোধের পতাকা উড়তে থাকে প্রায় এক দশক ধরে!

সোভিয়েত আগ্রাসনে প্রাণ যায় ৭৫ হাজারের বেশি মুক্তিকামী আফগানের। এতো প্রাণ চলে গেলেও আফগানদের বিশ্বাসে ফাটল ধরেনি একটুও। মাতৃভূমী থেকে আগ্রাসীদের দূর করতে প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে যায় তারা। এর মধ্যেই লাখ লাখ আফগান প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেয় পাকিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। অনেকে ঢুকে পড়েন পাকিস্তানের পেশোয়ারে।

শরণার্থীদের জন্য পাকিস্তান সরকার যে ক্যাম্প গড়ে দেয়, সেখানে কাটতে থাকে বহু শিশু-কিশোরের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। শরণার্থী শিবিরে বহু আফগান শিশু-কিশোর-তরুণের সময় কাটানোর প্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠে ক্রিকেট। ব্যাস, আফগানদের ডিএনএ-তে ক্রিকেট ঢুকে পড়ে তখনই।

১৯৮৯ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় লেখা হয়ে যায়, লাখ লাখ শরণার্থী তখন ফিরে যায় স্বদেশে। সব কিছু ফেলে এক সময় শরণার্থী শিবিরে জীবন সপে দিয়েছিলো তারা, সেই শরণার্থী শিবির থেকে তারা নিয়ে যায় ক্রিকেট উন্মাদনা। শরণার্থীদের পায়ে পায়ে ক্রিকেট ঢুকে পড়ে আফগানিস্তানের অঞ্চলে অঞ্চলে। শুরু হয় ক্রিকেটের নতুন বিপ্লব। তালেবান শাসনামলের শুরুতে এ বিপ্লব অবশ্য ব্যাহত হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু কী এক আশ্চর্য কারণে তালেবানরাও ক্রিকেটকে ভালো বেসে ফেলে এবং আফগানিস্তানের ক্রিকেট-পাগল জাতি হয়ে উঠার পথে সব বাধা দূর হয়ে যায়।

১৯৯৫ সালে আফগানিস্তানের ক্রিকেট সংস্থা গঠন করা হয়। ২০০১ সালে গিয়ে আইসিসির অ্যাফিলিয়েশন পায় আফগানিস্তান। ২০০৯ সালে তারা পেয়ে যায় ওয়ানডে স্ট্যাটাস। এর মাত্র আট বছর পর, ২০১৭ সালে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হয়ে যায় তারা।

যুদ্ধের তাজা বারুদের গন্ধ গায়ে মেখে ক্রিকেট শিখে আসা আফগানদের সাহসের উৎস কি টের পাওয়া গেলো? যুদ্ধ এবং বাস্তবতার কড়াল গ্রাস যখন তাদের জীবনে কালো অন্ধকার হয়ে নেমে আসে, জীবনের মানে যখন কেবলই মৃত্যু এবং মৃত্যু, তখনই তাদের সেই দুঃসহ সময়ে সঞ্জীবনী শক্তি নিয়ে হাজির হয় ক্রিকেট। ফলে ক্রিকেটটা তাদের কাছে কেবল খেলা থাকে না, বরং ক্রিকেট আফগানদের কাছে হয়ে উঠে বেঁচে থাকার প্রেরণা, ক্রিকেট আফগানদের কাছে হয়ে উঠে সঞ্জীবনী শক্তির অন্য নাম।

এই ইতিহাসই মূলত ক্রিকেটে আফগানদের বিস্ময়কর উত্থানের মূল শক্তি। ক্রিকেটটা তাদের কাছে এখনো অর্থ উপার্জনের উপায় নয়। কেবল ক্রিকেটের প্রতি দুর্ণিবার ভালোবাসা থেকেই রশিদ খানরা বল তুলে নেন। নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। ক্রিকেটের প্রতি বাধভাঙা স্রোতের মতো আকর্ষণের কারণেই মোহাম্মদ শেহজাদরা তেড়েফুড়ে এসে প্রতিপক্ষের বোলারদের কলিজায় কাঁপন ধরিয়ে দেন।

এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ নয় শুধু, বিশ্বের যে কোনো দলকেই এখন বেশি করে ভাবতে হয়। সাহস ও বিশ্বাসই যেখানে মূল শক্তি, ইতিহাস-সামর্থ্য আর যুক্তিবিদ্যা সেখানে অর্থহীন। আফগানিস্তানের ক্রিকেটটা এখনও যুক্তি দিয়ে চলে না, চলে ভালোবাসার অদৃশ্য অথচ দৃঢ় এক শক্তিতে। এই আফগানিস্তানকে হেলাফেলা করা হবে এমন এক ভুল, যার কোনো মাশুল হয় না!

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.