টেস্ট আভিজাত্যের অপেক্ষায় আফগানিস্তান

একবিংশ শতাব্দীতে এসে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় গল্প কোনটা? ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিপুল অর্থের মালিক বনে যাওয়া, শতাব্দীর শুরুতে অবিশ্বাস্য অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত দাপট, ২০০৫ সালের অ্যাশেজ এবং সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের নতুন দিন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তাদের দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় কিংবা ঘরের মাঠে পাকিস্তানের ‘পরবাসী’ হয়ে উঠার গল্পগুলোই নিশ্চয় ঘুরেফিরে সামনে আসবে।

কিন্তু আসল গল্পটা তো তা নয়। আসল গল্পটা লিখেছে আফগানিস্তান। ১০ বছরের মধ্যে আইসিসির ডিভিশন পাঁচ থেকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস, টি-টোয়েন্টি- ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়ে টেস্ট ক্রিকেট; এই অসাধারণ যাত্রার গল্পটাই আসলে এখন পর্যন্ত একবিংশ শতাব্দীর ক্রিকেটে সেরা গল্প।

একবিংশ শতাব্দীর সেরা ক্রিকেট গল্পের কথা এলে সামনে চলে আসে আইপিএল বা টি-টোয়েন্টির লিগগুলোর উত্থানের গল্পও। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি আবেগ ও আশার গল্প আসলে আফগানিস্তানের। পাকিস্তানের শরণার্থী ক্যাম্পে ক্রিকেট ব্যাট-বল চেনা দেশটিই কিভাবে শরণার্থী শিবিরের গন্ধ মোছার আগেই হয়ে উঠলো টেস্টখেলুড়ে দেশ! ভাবতে গেলে ভাবনার ক্ষমতাও যেনো বাধাগ্রস্ত হয়ে আসে!

১৪ জুন থেকে টেস্ট ক্রিকেটের আভিজাত্যের সরোবরে পা ডোবাতে যাচ্ছে আফগানিস্তান। ব্যাঙ্গালুরুতে ঐতিহাসিক ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত। এই ম্যাচে আফগানিস্তান কতোটা ভালো করবে বা কতোটা বাজেভাবে ভারতের কাছে হারবে, সে বিষয়টা আপাতত একেবারেই গৌণ। মোহাম্মদ শাহজাদ, রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানদের টেস্ট খেলাই তো আসলে আধুনিক ক্রিকেট যুগের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তারা কতোটা ভালো খেলবে, সেই আলোচনা এখানে তাই একেবারেই আসতে পারে না!

২০০৮ সালেও আইসিসির ডিভিশন ফাইভের ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তান। সেই পর্যায় থেকে মাত্র দশ বছরের মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যাওয়ার আর কোনো উদাহরণ ক্রিকেট বিশ্বে নেই। অথচ দশ বছর আগে টেনিস বলে খেলতে পারাকেও সৌভাগ্য মনে করতেন, এমন ক্রিকেটারও বর্তমান আফগানিস্তান দলে আছেন। সেই তারাই যখন ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করবেন, তখন তো এই শতাব্দীর ক্রিকেটের সেরা গল্পটাই তৈরি হবে!

নিজেদের ক্রিকেটের নতুন ইতিহাস রচনার সময়ে আফগানিস্তান তাকিয়ে থাকবে রশিদ খানের হাতের দিকে, বিগব্যাশে চমকে দেয়া মোহাম্মদ নবির দিকে, মুজিব উর রহমানের দিকেও আটকে থাকবে তাদের চোখ। সব মিলিয়ে নিজেদের প্রায় অবিশ্বাস্য ইতিহাসটা আরো সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুত আফগানিস্তান। ফুটবল বিশ্বকাপে বিশ্ব যতোই মজে থাকুক, ১৪ জুন থেকে ব্যাঙ্গালুরুতে যে ইতিহাস সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, তাতে মজে থাকা লোকদের তাৎপর্যও কিন্তু কম নয়।

খেলাধুলার জগতে ম্যাচ জেতা, প্রতিযোগিতার ট্রফি জেতাই মুখ্য। কিন্তু ব্যাঙ্গালুরুতে আফগানিস্তানের প্রথম টেস্টে এই মুখ্য উদ্দেশ্য প্রায় গুরুত্বহীন। এই ম্যাচটা আসলে সম্ভাব্য সব রকম বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে কিভাবে একটা জাতি একটা খেলাকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় প্রত্যাশা হিসেবে ধরে নেয়, তার একটা প্রমাণ। এ যেনো ক্রিকেট খেলাটারই অন্য এক উদ্দশ্য!