আবারও বড় হার সাকিবদের

টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশই হলো বাংলাদেশ। অ্যান্টিগা টেস্টের দুঃস্বপ্ন তাড়াতে এসেছে জ্যামাইকায়ও দুঃস্বপ্নের অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন সাকিব আল হাসানরা। টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে বাংলাদেশ যে এখনো একটা ছোট নাম, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড হয়ে সাকিবরা যেনো এই সত্যটাই আবার প্রমাণ করে দিলেন।

জ্যামাইকায় শেষ ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিলো ৩৩৫ রান। দুই টেস্ট মিলিয়ে আগের তিন ইনিংসে একটা দুইশ রানের ইনিংসও ছিলো না বাংলাদেশের। সেই তারা ৩৩৫ রান যে করতে পারবে না, তা এক রকম নিশ্চিতই ছিলো।

৩৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে দুই রান উঠতে না উঠতেই দলের এক নম্বর ব্যাটসম্যান তামিমকে হারায় সফরকারিরা। এরপর যতো সময় গেছে, ম্যাচ থেকে ততোই ছিটকে গেছে বাংলাদেশ।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৬৮ রানে। ১৬৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারতে হয় সাকিবদের। ওয়ানডে সিরিজের আগের এই দুমড়ানো-মোচড়ানো হার সাকিবদের আত্মবিশ্বাসে দিলো এক প্রচণ্ড আঘাত।

৪২ ওভারের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়ার আগে স্বাগতিকদের মাত্র ১২৯ রানে অলআউট করে দেন সাকিবরা। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ২০৫ রানে পিছিয়ে থাকার পর বাংলাদেশের আর ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা ছিলো না।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট সাকিব। ৩৩ রান দিয়ে উইকেটগুলো নেন তিনি। যা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা টেস্ট বোলিংয়ের নতুন রেকর্ড। এতো দিন এই রেকর্ড ছিলো পেসা রবিউল ইসলামের। ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে তিনি ৭১ রানে জিম্বাবুয়ের ছয় উইকেট নিয়েছিলেন।

সাকিবের এই কীর্তিটা অবশ্য ম্যাচ শেষে ম্লানই হয়ে থাকলো। সেটা যতোটা না হারের কারণে, তার চেয়ে ঢের বেশি ভুলে যাওয়ার মতো দুর্বল ব্যাটিংয়ের কারণে।

জ্যামাইকায় টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠান সাকিব। ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩৫৪ রান করে তারা। মেহেদি হাসান মিরাজ নেন পাঁচ উইকেট।

জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৪৯ রানে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুঁড়িয়ে দেয়া কেমার রোচ জ্যামাইকায় নেয়। তাতেও তাদের বোলিং লাইনে বাংলাদেশকে আতঙ্কিত করার জন্য অস্ত্রে অভাব ছিলো না।

অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার প্রথম ইনিংসে তুলে নেন পাঁচ উইকেট। এরপর সাকিবের ঘূর্ণিতে পড়ে ১২৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া উইন্ডিজ ম্যাচের শেষ ইনিংসে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেয়। আবারও বল হাতে ছড়ি ঘোরান জ্যাসন হোল্ডার। এবার তিনি তুলে নেন ছয় উইকেট।

জ্যামাইকাতে জ্যাসন হোল্ডারের কাছেই মূলত হারতে হয় সাকিবদের। এই হারের লজ্জার মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে চরম ব্যর্থ ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে নুরুল হাসান সোহান। অ্যান্টিগায় দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি করা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জ্যামাইকায় পেয়েছেন ‘কিং ডাক’। দুই ইনিংসেই প্রথম বলে আউট হন তিনি।

ব্যাট হাতে দুঃস্বপ্নের সময় কাটালেও উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান ছিলেন অসাধারণ। সাকিবের বলে দুটি এবং মিরাজের বলে একটি স্ট্যাম্পিং করেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্ট ইনিংসে তিনটি স্ট্যাম্পিং নেই আর কারো।

টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের সামনে একদমই দাঁড়াতে না পারা বাংলাদেশ ২২ জুলাই থেকে মাঠে নামবে ওয়ানডে সিরিজে। এর মধ্যেই ওয়ানডে বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও সোমবার ক্যারিবিয়ানের উদ্দেশে বিমানে চাপবেন।

টেস্টের নিদারুণ ব্যর্থতা মুছে ফেলতে ওয়ানডে সিরিজ জেতার বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে। এখন নিজের প্রিয় ফরম্যাটে মাশরাফিরা তা পারবেন কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।