কোন সাহসে বলিয়ান হয়েছিলেন, ব্যাখ্যা দিলেন তামিম

কবজির হাড়ে ধরা পড়েছে চিড়। যে ধরনের চিড় নিয়ে আর যাই হোক, ক্রিকেট খেলা যায় না। চিকিৎসক বলেও দিয়েছেন যে, তার এশিয়া কাপ শেষ। তারপরও তামিম ইকবাল মাঠে নেমে পড়লেন। শুধু নামলেন, তা কিন্তু নয়। নেমে গেলেন সরাসরি ব্যাটিংয়ে!

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই রকম এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। দেশের জন্য, দলের জন্য যেই ঝুঁকি তিনি নিয়েছেন, তাতে শেষ হয়ে যেতে পারতো তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারই। এতো সাহস কোথায় পেয়েছিলেন তামিম? ওই ম্যাচের একদিন পর তিনি দিয়েছেন ব্যাখ্যা।

‘সত্যি বলতে কি নিজেকে প্রচণ্ড সাহসী মনে হচ্ছিলো তখন। স্টেডিয়ামে যে পরিমাণ দর্শক ছিলো এবং তাদের যে সমর্থন ছিলো, সেটাই আমাকে সাহসী করে তুলে। আমি হয়তো আউট হয়ে যেতে পারতাম বা ঘটতে পারতো অন্য অনেক কিছু। কিন্তু ওই মুহূর্তে আমি দল ও দেশের প্রতি প্রচণ্ডভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম।’ বলছিলেন তামিম ইকবাল।

একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তামিম আরো বলেন, ‘এখন যখন ওই সিদ্ধান্তের কথা ভাবছি, মনে হচ্ছে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো সিদ্ধান্তটা। কারণ বলটা খেলার আগে আমার ইনজুরড হাত ছিলো পেছনে। কিন্তু বল খেলার সময় হাত সামনে চলে আসে। সুতরাং আমি যদি বলটা মিস করতাম, তাহলে তা আবার আমার হাতে লাগতে পারতো।’

সুরাঙ্গা লাকমালের বলে বাঁ হাতের কবজিতে আঘাত পেয়ে মাঠ থেকে সরাসরি হাসপাতালে যেতে হয় তামিমকে। স্ক্যান করে দেখা যায় বাঁ হাতের তর্জনির নিচের দিকে চিড় ধরেছে। এ ধরনের চোট সারিয়ে খেলায় ফিরতে লাগে অন্তত ছয় সপ্তাহ।

তামিম হাসপাতাল থেকে ফেরার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি তাকে বলেন যে, তাকে আবার মাঠে নামতে হতে পারে। ওই কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তামিম বলেন, ‘মাশরাফি ভাই যখন বললেন যে আবার আমাকে নামতে হবে, আমি ভাবছিলাম তিনি কৌতুক করছেন! প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিলো, যদি খেলা শেষ ওভারে যায় এবং আমি অফ-স্ট্রাইকে থাকি, তাহলে হয়তো নামবো।’

মাহমুদুল্লাহ, মোসাদ্দেক ও মাশরাফি দ্রুত পড়ে যাওয়ার পর তামিম মাঠে নামার প্রস্তুতি শুরু করেন। তখন উইকেটে ছিলেন রুবেল হোসেন। তামিম বলেন, ‘মুমিনুল এবং অন্যরা আমাকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করছিলো। বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় তাতে গ্লাভস পরা যাচ্ছিলো না। পরে মাশরাফি ভাই গ্লাভস কেটে ব্যান্ডেজ ছাড়া আঙুল গ্লাভসের বাইরে বের করে দেন।’

৪৭ তম ওভারে মোস্তাফিজ আউট হওয়ার পর তামিম মাঠে নামেন। এ সময় মুশফিকের রান ছিলো ১১২। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করে উইকেটে ছিলেন তিনি। তামিম বলেন, ‘মোস্তাফিজ আউট হওয়ার পর আমি কোনো কিছু চিন্তা না করেই মাঠে নামতে শুরু করি। সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি নিশ্চিত কিনা। আমি বলি যে, আমি একদম নিশ্চিত।’

তামিম আরো বলেন, ‘কেউ ভাবেনি যে আমি মাঠে নামবো আর মুশফিক আরো ৩২ রান করবে। সে অসাধারণ মানসিকতা দেখিয়েছে। এখন সবার মতামত দেখে ভালো লাগছে। এ রকম অভিজ্ঞতা আমার জীবনেও হয়নি। কয়েকটা মুহূর্তে কী হয়েছে কিছুই মনে নেই। আমি কেবল দল ও দেশের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম।’