আমি অনেক কেঁদেছি, বারবার জিজ্ঞেস করেছি এমন কেন হলো!

ব্রাজিলের সাও পাওলোর মতো ফুটবলের উর্বর ভূমিতে জন্ম। বাবা সিনিয়র নেইমার ছিলেন বেশ ভালো ফুটবলার। এলাকায় বেশ নামডাকও ছিল। আবার তার বাড়ন্ত সময়টাতে এলাকার ‘বড় ভাই’ রবিনহো দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ফুটবলবিশ্ব। ফুটবল নিয়ে নেইমারের মাঠে যাওয়ার কারণ এগুলোই। ছোটবেলা ফুটবল খেলতে ভালোও লাগতো খুব। ওই ফুটবলই এখন নেইমারের দুনিয়া। ফুটবল দুনিয়ার বড় একটা অংশ এখন নেইমার নিজেও ।

২০০৩ সালের শেষ দিকে সান্তোসে চলে আসে নেইমারের পরিবার। সেটাই হয়তো টার্নিং পয়েন্ট ছিল! নেইমার প্রথমে সান্তোসে কোচিং করা শুরু করেন। সেখানে চোখে লেগে যাওয়ায় সান্তোস চুক্তিবদ্ধ করে নেয় নেইমারকে। সেই শুরু, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সান্তোস ছেড়ে ইউরোপে এসেছেন। স্বপ্নের বার্সেলোনায় খেলেছেন পাঁচ বছর, তারপর সেখান থেকে পিএসজিতে। মাঝের সময়টাতে কত ইতিহাস, কত রেকর্ড, কত কি অর্জন হয়ে গেছে নেইমারের।

বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় সেরা ফুটবলার মনে করা হচ্ছে নেইমারকে। বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, লা লিগাসহ বহু শিরোপা জিতেছেন। ব্রাজিলের হয়েও নেইমারের অর্জন কম নয়। ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ জিতিয়েছেন ব্রাজিলকে। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গিয়েছিল নেইমারের ব্রাজিল। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় দুঃখ হয়ে আছে ওই বিশ্বকাপটাই।

কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোমরে এমন চোট পেয়েছিলেন, নেইমারের নাকি মনে হয়েছিল আর বুঝি ফুটবল খেলতেই পারবেন না! পরে নেইমারকে ছাড়া সেমিফাইনাল খেলতে নেমে জার্মানির বিপক্ষে ৭ গোল খায় ব্রাজিল। ব্রাজিল ফুটবলের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক মনে করা হয় যেটাকে। একদিকে জার্মান কলঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিলো পুরো ব্রাজিলকে, অন্য দিকে নেইমারের অমন গুরুতর ইনজুরি। জানতে ইচ্ছা করে, সেই সময়টাতে কিভাবে কাটছিল নেইমারের?

ফিফা ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই দুঃস্মৃতির দুয়ার খুলে দিলেন নেইমার। আগামী রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে নিয়েও বলেছেন খোলামেলা কথা। সেই কথাগুলো জানতে, ফিফা ডটকমকে দেয়া নেইমারের সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ আপনার ক্যারিয়ারে কি ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন? ২০১৪ সালের টুর্নামেন্টটা তো খুবই বাজেভাবে শেষ হয়েছে-

নেইমার: (একটু ভেবে) এটা অদ্ভূত। কারণ আমি যেভাবে চেয়েছিলাম আগের বিশ্বকাপ সেভাবে শেষ হয়নি। অবশ্যই আমার সেবার শিরোপা জেতার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু হয়নি। টুর্নামেন্টটা শেষ হয়েছিল মারাত্মক এক ইনজুরিতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওই বিষয়টির জন্য আমাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।

সেই মুহুর্তে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?

নেইমার: সেটা আমার জন্য খুবই খারাপ একটা সপ্তাহ ছিল। আমি অনেক কেঁদেছি এবং নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করেছি, কেন এমন হলো! আমার মনে হয়, এই বিশ্বকাপটা ব্রাজিলের জন্য বিরাট কিছু হবে। আমি নিজের সবটুকু দিয়ে এটা জিততে চাই।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের ড্র সামনে। কোন দলকে এড়াতে চায় ব্রাজিল?

নেইমার: না। ব্রাজিল কাউকে এড়াতে চায় না। আমরা এমনভাবেই তৈরি হচ্ছি, যাতে কাউকে ভয় না পাই। এটা বিশ্বকাপ, তাই এখানে সেরা দলই খেলবে। প্রতিটি দল মানসম্পন্ন, ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে আসবে। আপনি এখানে কাউকে দুর্বল ভাবতে পারবেন না।

তাহলে আপনার মতে, ড্র কোন বিষয় না? তাহলে বিশ্বকাপ জেতার জন্য ভাগ্য কতটা সহায়ক?

নেইমার: ভাগ্য? খুব কম। আমি এটা বিশ্বাস করি, ভাগ্য কোনো দলকে জিতিয়ে দিতে পারে না। তারাই প্রকৃতপক্ষে চ্যাম্পিয়ন যারা দীর্ঘদিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করে আসছে। এবং গ্রুপপর্বে বা নকআউট পর্বে যে কোন দলকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

 ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিল যে সম্মান হারিয়েছিল, সেটা কি ফেরত পেয়েছে বলে মনে করেন?

নেইমার: হ্যাঁ, আমি মনে করছি পেয়েছে। বিশ্বকাপের পর তিন চার বছর আগে এই দলটার প্রতি সম্মান যে পর্যায়ে ছিল, এখন অন্য পর্যায়ে। মানুষ এখন আমাদের অন্যভাবে দেখছে। ব্রাজিলকে সবাই সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতো, সেটা এখন ফেরত এসেছে। সবাই আত্মবিশ্বাসী এবং বিশ্বকাপের দিকে খুশিমনে তাকিয়ে আছে। আপনি এটার মূল্য দিতে পারবেন না।

শেষ প্রশ্ন, আপনি বাক্যটা শেষ করবেন। ২০১৮ সালে নেইমার...

নেইমার: (এক গাল হেসে) ২০১৮ সালে নেইমার বিশ্বকাপে খুবই খুশিতে থাকবে।