আগের ১৬টি বিশ্বকাপেই একটা জায়গায় মিল ছিল। প্রতিটি আসরে আয়োজক ছিল একটি দেশ। ২০০২ সালে বদলে যায় ধারাটা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের সুবর্ণ সুযোগ দেওয়া হলো দুটি দেশকে। এশিয়ার মাটিতে প্রথমবার বিশ্বকাপের আয়োজন করল জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া মিলে। ঘটন-অঘটন, নখ কামড়ানো উত্তেজনা, কিংবদন্তিদের উপস্থিতি, অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, নাটকীয়তা, রূপকথা- কী ছিল না ১৭তম বিশ্বকাপে!

Brazil celebrate their fifth world cup trophy

যৌথভাবে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিশ্বকাপ দিয়ে সিংহাসনে প্রত্যাবর্তন হয় ব্রাজিলের। সেলেকাওদের স্বপ্নের আসরের শুরুর পর্বটা সাক্ষ্যি হলো কয়েকটা অঘটনেরও। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও দুইবারের বিশ্বজয়ী হট ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে বিদায় নিতে হলো প্রথম রাউন্ডেই। প্রথম রাউন্ডে অঘটনের শিকার হয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় ইউরোপের পরাশক্তি হয়ে ওঠা লুইস ফিগোর পর্তুগালও। সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চের সেমিফাইনালে উঠে যায় দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ক।

আসরটা স্মরণীয় হয়ে থাকল সেনেগাল রূপকথার জন্যও। অভিষেক আসরের প্রথম ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন দল ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয় আফ্রিকার দলটি। জিনেদিন জিদানবিহীন ফ্রান্সকে নিজেদের প্রথম শিকারে পরিণত করে সেনেগাল। তুলে নেয় ১-০ গোলের জয়। নক আউট পর্বের শুরুতে সুইডেনকে বিদায় করে সেনেগাল জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে। আসরের আরেক চমক তুরস্কের সামনে থমকে যায় তারা। সেমিফাইনালে তুর্কিদের রূপকথার সমাপ্তি টানে তুখোড় ফর্মে থাকা ব্রাজিল।

ফ্রান্সের মতো আর্জেন্টিনাকেও একই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়। জয় দিয়ে শুরুর করার পরও বাতিস্তুতা, ভেরন, সোরিন, ক্রেসপোর মতো তারকাঠাসা দল নিয়ে গ্রুপপর্বে বিদায় নিতে হলো আর্জেন্টাইনদের। ইংল্যান্ডের কাছে ন্যূনতম ব্যবধানে হার এবং সুইডেনের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্রতেই কপাল পুড়ে বাতিস্তুতাদের। নক আউট পর্বে উঠে ইংল্যান্ড ও সুইডেন। তিন বিশ্বকাপ পর প্রত্যাবর্তনটা রাঙাতে পারেনি ফিগোর পর্তুগাল।

আগের সবকটি বিশ্বকাপই হয়েছিল ইউরোপ কিংবা আমেরিকায়। ওই আসরের আয়োজক হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। কিন্তু ভোটাভুটিতে এশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে হেরে যায় মেক্সিকানরা। আর তাতেই ৭২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নতুন কোনো মহাদেশে বসে বিশ্বকাপের আসর।

একে তো আয়োজনের স্বত্ব হারাতে হয়েছে, তার উপর ইউরোপিয়ান ও আমেরিকানদের বিপাকে ফেলে দেয় এশিয়ার সময়সূচি। বিশ্বকাপের ও এশিয়ার সময়র সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সাত-সকালেই টিভি সেটের সামনে বসতে হতো তাদের। বিশ্বকাপকে অগ্রাধীকার দিতে গিয়ে খেলার সময় সবধরণের প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়েছিল ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকানদের!

বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম তিনটি দল সরাসরি বিশ্বকাপের সুযোগ পায় ২০০২ সালেই। বাকি ২৯টি টিকিটের জন্য বাছাইপর্বের লড়াইয়ে নামে ১৯৯টি দল। বাছাইপর্বে নজরকাড়া পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেয় চীন, সেনেগাল, ইকুয়েডর ও স্লোভেনিয়া। যদিও স্লোভেনিয়া এর আগে বিশ্বেকাপে অংশ নিয়েছিল যুগোস্লাভিয়ার ব্যানারে।

অংশগ্রহণকারী ৩২টি দল হলো- জাপান (স্বাগতিক), দক্ষিণ কোরিয়া (স্বাগতিক), ফ্রান্স (ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন), চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, তিউনিশিয়া, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, সেনেগাল, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, ইকুয়েডর, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, রাশিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, জার্মানি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, কোস্টারিকা ও মেক্সিকো।

ঘরের মাঠে দুর্দান্ত সূচনা করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। গ্রুপপর্বেই স্বাগতিকরা হারিয়ে দেয় পর্তুগাল ও পোল্যান্ডকে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা দক্ষিণ কোরিয়ার পরবর্তী শিকার ইতালি। ইতিহাসের প্রথম ‘গোল্ডেন গোল’ টাইমে বাজিমাত করে স্বাগতিকরা (২-১)। কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনকে তারা বিদায় করে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জিতে। তবে কোরিয়ানরা অনেকদূর এগোলেও প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সাফল্য নিয়ে ছিটকে যায় আরেক স্বাগতিক জাপান।

ওই আসরে অবিশ্বাস্য সূচনা করেছিল ফেভারিট জার্মানিও। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবকে ৮-০ গোলে পিষ্ট করে জার্মানরা। সেমিফাইনালে এই জার্মানিই ১-০ গোলে জিতে থামিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়ার স্বপ্নযাত্রা। তবে ফাইনালের টিকিটের জন্য কোরিয়ার বিপক্ষে রীতিমতো হাসফাঁস উঠে যায় বালাক, ক্লোসা ও অলিভার কানদের নিয়ে গড়া তারকাঠাসা জার্মানির।

তবে জার্মানরা শিরোপা লড়াইয়ে নাম লেখালেও সেমিফাইনালেই লাল কার্ড দেখে শেষ হয়ে যায় প্রাণভোমরা বালাকের বিশ্বকাপ। বালাকবিহীন জার্মানি দারুণ ছন্দে থাকা ব্রাজিলের সঙ্গে অনুমিতভাবেই পেরে ওঠেনি। জার্মানদের ২-০ গোলে কাঁদিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে নেন রোনালদো, কাফু, রোনালদিনহো, রিভালদো, কার্লোস, গিলবার্তোদের দুর্দান্ত ব্রাজিল। তবে সবাইকে ছাপিয়ে বিশ্বকাপের নায়ক হয়ে উঠলেন ‘ফেনমেনম’ খ্যাত রোনালদো।

এক আসরে কোনো ফুটবলারের সর্বোচ্চ গোল দেখেছিল এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের সৌজন্যেই। ৮ গোল করে গোল্ডেন বুটের স্বীকৃতি পান বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি। ফাইনালে দুই গোল করে জার্মানদের এক অর্থে তিনিই হারিয়ে দিয়েছেন। রোনালদো ভেঙে দিয়েছিলেন সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক অলিভার কানের বাধার প্রাচীর। ফাইনালের আগে আসরজুড়ে গোল পোস্টের নীচে অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের কারণে অবশ্য গোল্ডেন বল এবং গ্লাভস দুটিই পেয়েছিলেন জার্মান অধিনায়ক।

শুধু বিশ্বকাপের শেষেই নয়, আসর শুরুর আগেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন রোনালদো। অথচ ইনজুরির কারণে তার বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই ছিল সংশয়। সবাই যখন তার ইনজুরি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ডুবেছিলেন, তখনই অদ্ভুত এক চুলের ছাঁট দিয়ে ‘টক অব দ্য’ বিশ্বকাপ হয়ে ওঠেন রোনালদো। দীর্ঘ দেড় দশক পর তিনি উন্মোচন করেছেন সেই ছাঁটের রহস্যটা। আসলে ইনজুরির বিষয়টা আড়াল করতেই সামনের অংশে কিছু চুল রেখে মাথার বাকি অংশ ন্যাড়া করে ফেলেছিলেন রোনালদো।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.