শুরুতেই অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি চ্যাম্পিয়ন জার্মানি

শিরোপা অর্জনের চেয়ে ধরে রাখাটাই বেশি কঠিন। অন্যদের তুলনায় বিশ্বকাপে তাই চাপটা একটু বেশি জার্মানির জন্য। শিরোপা ধরে রাখার এমন কঠিন অভিযানে শুরুতেই আবার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে জার্মানদের। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই যে শক্ত প্রতিপক্ষ প্রতিপক্ষ পেয়েছে জোয়াকিম লোর দল।

আজ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই উত্তর আমেরিকার ফুটবল পরাশক্তি মেক্সিকোকে মোকাবেলা করবে জার্মানি। বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় মাঠে গড়াবে ইউরোপ-আমেরিকার দুই জায়ান্টের লড়াইটি। মৃত্যুকূপ খ্যাত ‘এফ’ গ্রুপের উদ্বোধনী ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে মাছরাঙা ও নাগরিক টিভি।

অবশ্য বিশ্বকাপ শুরুর প্রস্তুতিটা ঠিক ভালো হয়নি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। রাশিয়া আসার আগে ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই জয়ের মুখ দেখেনি জার্মানি। শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে সৌদি আরবের মতো প্রতিপক্ষকে হারাতেও (২-১) অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে জোয়াকিম লোর দলকে। অথচ এই সৌদি আরবই এবারের বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ম্যাচে রাশিয়ার কাছে ৫-০ গোলে উড়ে গেছে।

তবে সৌদি ম্যাচে নির্ধারণী ব্যবধান যাই হোক জয়টাই জার্মানির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কষ্টের জয় হলেও সৌদি আরব ম্যাচটা জার্মানদের চিড় ধরা আত্মবিশ্বাসে কিছুটা হলেও জোড়া লাগিয়েছে। জয়ে ফেরার স্বস্তির সঙ্গে দারুণ একটা সুখবরও আছে জার্মান শিবিরে। হাঁটুর ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছেন মধ্যমাঠের সারথি মেসুত ওজিল।

শতভাগ ফিটনেস ফিরে পেয়েছেন আক্রমণভাগের সারথি মার্কো রিউসও। যিনি গত চার বছর আগে জার্মানির সবচেয়ে বড় তারকা হওয়া সত্বেও বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি চোটের কারণে। এবার তিনি শতভাগ ফিট আছেন। তবে রিউসের পজিশন নিয়ে একটা মধুর সমস্যায় আছেন জার্মানি কোচ। জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার নাকি রিউস- লো কাকে রেখে কাকে শুরুর একাদশে খেলাবেন তা নিয়েই ভেবে কুল পাচ্ছেন না।

সেরা একাদশ গঠন করতে মস্তিষ্কে চাপ দিতে হচ্ছে মেক্সিকো কোচ হুয়ান কার্লোস ওসরিওকেও। কিন্তু তার জন্য প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন, বিপাকে পড়েছেন দলে চোটের আগ্রাসন নিয়ে। ইনজুরিতে ভুগছেন দলের প্রধান দুই ডিফেন্ডার- নেস্টর আরাউজো এবং ডিয়েগো রিয়েস। জার্মানির মতো দলের আক্রমণ সামলাতে তাই আজ হিমশিক খাওয়ার কথা মেক্সিকানদের।

শতভাগ জয়ের রেকর্ড নিয়েই রাশিয়ার বিশ্বকাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করেছিল জার্মানি। ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্বে রেকর্ড (যৌথভাবে সর্বোচ্চ) ৪৩ গোলও করেছে জার্মানরা। অথচ বাছাই প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর থেকেই ধুঁকছে গত বিশ্বকাপে শিরোপা জেতা দলটি।

তাই এবারের আসরে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে জার্মানদের পক্ষে বাজি ধরার লোকের সংখ্যাও অনেক কম। রাশিয়ার মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে ইতিহাসই গড়তে হবে জার্মানিকে। যেই ইতিহাসটা একমাত্র ব্রাজিলেরই আছে। পরপর দুটি বিশ্বকাপ জিতেছিল সেলেকাওরা।

শিরোপা ধরে রাখতে হলে জার্মানিকে আরো একটা ইতিহাস পাল্টাতে হবে। কারণ কনফেডারেনস কাপজয়ী কোনো দলের শিরোপা ধরে রাখার নজির নেই। তবে আশারবানী শুনিয়েছেন জার্মান মিডফিল্ডার টনি ক্রুস। মেক্সিকো ম্যাচের আগে তিনি বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্যই আমরা এখানে এসেছি।’

সামগ্রিক ইতিহাস ভয় দেখালেও মেক্সিকোর বিপক্ষে দারুণ সব স্মৃতি আছে জার্মানির। এই তো গেল বছর বিশ্বকাপের মহড়া টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে মেক্সিকানদের ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে জার্মানরা। তাও সেটা আবার জার্মানির দ্বিতীয় সারির দল ছিল!

কিন্তু এই এক বছরে বদলেছে অনেক কিছুই। জার্মানি যেমন ভুগেছে, তেমনি মাঠে দারুণ সময় কেটেছে মেক্সিকোর। এল ট্রিদের এই দলটাতে অভিজ্ঞতার কমতি নেই। এবারের বিশ্বকাপে মেক্সিকোর ২৩ সদস্যের দলের দশ জনেরই অন্তত ৫০টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে। দলটির কলম্বিয়ান কোচ তাতেই দেখছেন আশার আলো। ওসোরিও বলেছেন, ‘জয়ের জন্য আমরা সবকিছুই করব। আমাদের দলে অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে।’

হয়তো দলের খেলোয়াড়দের অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু জার্মানির বিপক্ষে ইতিহাস কখনোই সুখের ছিল না মেক্সিকোর। জার্মানদের সঙ্গে ১১ বারের সাক্ষাতে মাত্র একবারই জিতেছে উত্তর আমেরিকার প্রতিনিধি দলটি। সেই জয়টাও আবার ৩৩ বছর আগের!

এতদিনে মেক্সিকোর সেই স্মৃতির আবরণে জমেছে ধুলোর আস্তরণ। উত্তর আমেরিকার দলটির জন্য আরেকটি হতাশার তথ্য হচ্ছে- বিশ্বকাপে জার্মানির সঙ্গে তিনবার খেললেও একটিতেও জয় নেই তাদের। এবার কি কাটবে জয়খরা? উত্তরটা মিলে যাবে আজ রাতেই।

দুদিন আগে বিশ্বকাপ শুরু হলেও ঠিক পূর্ণতা পায়নি। পাবে কীভাবে ব্রাজিল-জার্মানির মতো বড় দলগুলোর যে আসরই শুরুই হয়নি! যেটা শুরু হবে আজ। এই বড় দুই দলের মাঠে নামার দিনে অনেকটা আড়ালে থেকে যাচ্ছে কোস্টারিকা-সার্বিয়া ম্যাচটা। ‘ই’ গ্রুপে উদ্বোধনী ম্যাচে আজ সন্ধ্যা ছ’টায় মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটো। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে মাছরাঙা ও নাগরিক টেলিভিশনে।