অগ্নিপরীক্ষায় আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া

স্বপ্নযাত্রার শুরুতেই ধাক্কা। এবারের বিশ্বকাপের চমক আইসল্যান্ডের সঙ্গে অপত্যাশিত ড্র। শুরুর ম্যাচের ফলটা রীতিমতো সংশয়ে ফেলে দিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। স্বপ্ন বাঁচাতে গ্রুপপর্বের বাকি থাকা দুটি ম্যাচই মেসিদের জন্য হয়ে উঠেছে ‘ডু অর ডাই’-এর।

‘ডি’ গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল শক্তির দল ভাবা হচ্ছিল আইসল্যান্ডকে। কিন্তু ভূতুড়ে বিশ্বকাপে ‘ছোট’ দল বলে কোনো শব্দ নেই, সেটা গ্রুপপর্বের প্রথম লেগ শেষেই দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। তবু শক্তিমত্তা বিচারে প্রতিপক্ষ হিসেবে আইসল্যান্ডের চেয়ে একটু বেশিই কঠিন ক্রোয়েশিয়া।

তাই বৃহস্পতিবার নিঝনি নোভগোরাদে এই দলটির বিপক্ষে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে মহারণটি। সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা, নাগরিক টিভি ও সনি টেন টু।

হারলেই বেজে যেতে পারে বিদায় ঘণ্টা। ড্র করলেও থাকবে অশনি সংকেতটা। এই ম্যাচে তাই জয়ের বিকল্প ভাবছে না আর্জেন্টিনা। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রণ কৌশলেও পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-৪-৩ ছকে দলকে মাঠে নামিয়ে কিছুটা তোপের মুখে পড়েন তিনি।

ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের একাদশে আমুল পরিবর্তনেরও আভাস আছে। শুরুর একাদশে লিওনেল মেসি সঙ্গী হিসেবে পেতে পারেন তরুণ তুর্কি ক্রিশ্চিয়ান পাভোনকে। গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো এবং মার্কাস অ্যাকুনাকেও দেখা যেতে পারে আর্জেন্টিনার প্রথম একাদশে।

প্রথম ম্যাচে পা হড়কেছেন মেসিরা। মুহুর্মুহু আক্রমণ চালানোর পরও আইসল্যান্ডের বরফে আটকে গেছে আর্জেন্টাইনদের প্রায় সব প্রচেষ্টা। ওই ম্যাচে আক্রমণভাগের ব্যর্থতার সঙ্গে রক্ষণভাগের দুর্বলতাটাও ছিল চোখে পড়ার মতোই। যেটার মাশুল আর্জেন্টিনাকে দিতে হয়েছে পয়েন্ট খুইয়ে।

ক্রোয়েশিয়া অবশ্য পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মিশন শুরু করেছে। ক্রোটরা আভাস দিচ্ছে দুই দশক আগের স্মৃতিটা ফিরিয়ে আনার। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছিল তারা। এরপর তিনটি বিশ্বকাপ খেললেও তাদের যাত্রা থেমে গেছে গ্রুপপর্বেই।

রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া জানান দিয়েছে এবার গ্রুপপর্বের দেওয়াল ভাঙতে প্রস্তুত তারা। বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তাদের হাতছানি দিচ্ছে নক আউট পর্বের টিকিটের।

প্রথম ম্যাচে ড্র করা আর্জেন্টিনা এই ম্যাচটা জিতেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে। সেই প্রত্যয় ঝরেছে দলের রক্ষণপ্রহরী মার্কাদোর কণ্ঠে। বুধবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টাইন প্রতিনিধি বলেছেন, ‘আমাদের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ। আমাদের জিততে হবে। সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

মেসির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে চড়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছিল আর্জেন্টিনা। দেশটির বত্রিশ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর মিশনেও তিনিই প্রধান ভরসা। অথচ সেই তিনিই আইসল্যান্ড ম্যাচে পেনাল্টি মিস করে হয়ে গেছেন খলনায়ক। প্রত্যাশার চাপটা যে মেসিকে ভালোভাবেই পেয়ে বসেছে সেটা বলে দিচ্ছে তার স্পট থেকে গোল করতে না পারাটা।

তবে পারিপার্শ্বিক চাপ যতই তীব্র হোক না কেন আজ নির্ভার হয়েই মাঠে নামছেন মেসি অ্যান্ড কোং। সুন্দর এবং গোছানো ফুটবল খেলতে মরিয়া হয়ে উঠবেন তারা। আশা পূরণ করতে ভাগ্যকেও আজ খুব করে পাশে চাইবেন মেসি। কারণ আইসল্যান্ড ম্যাচে ১১টি শট নিয়েও গোলবঞ্চিত থাকতে হয়েছে তাকে। বিশ্বকাপের ৪৪ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথম যে এতগুলো শট নিয়েও গোল পাননি নির্দিষ্ট কোনো ফুটবলার!

নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারানোর ম্যাচে সেরা দল নিয়ে খেলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অবশ্য পূর্ণশক্তির দল পাচ্ছে ক্রোটরা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামতে পারেন নিকোলা কালিনিক। আক্রমণভাগে মারিও মান্দজুকিচের যোগ্য সঙ্গী তাকেই ভাবা হয়ে থাকে।

তবে ক্রোয়েশিয়ার পুরো চালিকাশক্তিটা থাকে মধ্যমাঠে। যেখানে আছেন স্প্যানিশ ফুটবল মাতানো লুকা মডরিচ এবং ইভান রাকিটিচ। কথাটা মানছেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার মার্কাদো-ও। ম্যাচের আগে তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানি মধ্য মাঠে দুজন খেলোয়াড়ই তাদের মূল শক্তি। মডরিচ-রাটিকিচ দুজনই খুব ভালোভাবে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে ম্যাচের ভাগ্য তৈরি করে দিতে জানেন।’

ম্যাচের আগে তিনি বলেছেন, ‘লিওনেল মেসিকে আটকে রাখার কোনো উপায় নেই। তিনিই এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ফুটবলার। তবে আমরা তাকে আটকানোর চেষ্টা করব। কিন্তু এটা ঠিক, ম্যাচে আমাদের চেয়ে তারা (আর্জেন্টিনা) বেশি চাপে থাকবে।’

এই ম্যাচে ফেভারিট নির্ধারণ করা কঠিন। তবে দুই দেশের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফল অবশ্য এগিয়ে রাখছে আর্জেন্টিনাকেই। চারবারের সাক্ষাতে দুইবারই ক্রোটদের হারিয়েছে দুইবারের বিশ্বসেরারা। যেখানে ক্রোয়েশিয়ার জয় একটি। অন্য ম্যাচটা থেকে আছে অমীমাংসিত।