রক্ত দিয়েই যেনো লেখা এক জয়!

ম্যাচের তখন আধাঘন্টারও বেশি সময় বাকি। টিভি পর্দায় হ্যাভিয়ের মাসচেরানোর মুখটা ভেসে উঠতেই আঁতকে উঠার মতো ব্যাপার। একি আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডারের গাল বেয়ে রক্ত বেরুচ্ছে! কখন কার সাথে সংঘর্ষ লেগে হলো সেটা দেখা গেল না, তবে দেখা যাচ্ছে গাল কেটে গেছে, চোখের পাশটাও থেতলে গেছে মাসচেরানোর, রক্ত বেরুচ্ছে। কিন্তু সে দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপই নেই তার!

ফিফার নিয়ম মতে রক্তাক্ত কোনো খেলোয়াড় মাঠে থাকতে পারবেন না। কিন্তু রেফারি মাসচেরানোর অভিব্যক্তি দেখে এই কথা বলতে হয়তো সাহসই পেলেন না! সতীর্থ এভার বানেগা একবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, বানেগাকে হয়তো বলছিলেন ‘এসব নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই ভাই, খেলো’। মাসচেরানো রক্তমাখা মুখ নিয়েই খেললেন, খেলালেন, অনুপ্রাণিতও করলেন।

কাল হয়তো তার কাছ থেকে বড় অনুপ্রেরণাই পেয়েছিল আর্জেন্টিনার বাকি দশজন! গাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাঠের বাইরে গেলেই যার একটা ব্যবস্থা হয়ে যেতো। গালটা মুছে স্প্রে করে আসলে ব্যাথা কমে যেতো। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ড সময় নষ্ট করতে চাননি মাসচেরানো, রক্ত টগবগিয়ে তোলার মতো অনুপ্রেরণা পেতে এর চেয়ে বেশি আর কি দেখতে হয়!

টিভি পর্দায় মাসচেরানোর রক্তমাখা মুখ যখন ভেসে উঠল ম্যাচে তখন ১-১ গোলের সমতা। দ্বিতীয় পর্বে যেতে হলে ম্যাচটা জিততেই হতো আর্জেন্টিনাকে। তার চেয়েও বড় কথা নাইজেরিয়া যে গোলটা পেয়েছে সেটা তার ভুলেই। ৫১ মিনিটে নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়কে ডি-বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন মাসচেরানো। সেই পেনাল্টি গোলেই ১-১ সমতায় নিয়ে এসেছিল নাইজেরিয়া। এই ‘ভুলে’র প্রায়শ্চিত্ত যেভাবে করলেন সেটা উদাহরণ হয়ে থাকার মতোই।

অনেক বছর ধরে আর্জেন্টিনার অধিনায়কের বাহুবন্ধনী মেসির হাতে। সেরা ফুবলারের হাতেই স্বাধারণত থাকে আর্জেন্টিনার অধিনায়ত্বের দায়িত্ব। কিন্তু অধিনায়ক না হলেও আর্জেন্টিনার দলের অঘোষিত অধিনায়ক তিনিই। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে বরাবরই দেখা গেছে মাসচেরানোকে আর্জেন্টিনার নেতা হয়ে উঠতে।

তার ভুলে প্রতিপক্ষ পেনাল্টি পেলো, অতোটুকু বাদ দিলে কাল তো আর্জেন্টিনার নেতা মাসচেরানো। মাঠে সতীর্থদের কি অনুপ্রেরণাই না দিয়ে গেলেন। ৩৫ বছরে পা দিয়ে ফুটবলটাও খেললেন তরুণের মতো। তবে ফুটবলের কারণে যতোটা নয়, তার চেয়ে বেশি কালকের মাসচেরানোকে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা স্বরণ করবে রক্তমাখা মুখটার কারণে।

অমন দৃঢ় মাসচেরানোকে দেখেই হয়তো ডিফেন্ডার মার্কাস রোহো বলের সাথে চলে এসেছিলেন একেবারে নাইজেরিয়ার ডি-বক্সে। আর আর্জেন্টিনা জয়টা পেলো তাতেই। ৮৬ মিনিটে গোল করে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলে দিয়েছেন রোহে। এই জয় যেনো এক রক্তমাখা জয়।