ইংল্যান্ড-সুইডেন: অচেনা মঞ্চে চেনা লড়াই

ইংল্যান্ড-সুইডেন লড়াই মানে রোমাঞ্চ বৃহস্পতির তুঙ্গে। ইউরোপিয়ান দুই পরাশক্তির প্রায় শতবর্ষী মহারণ অন্য মাত্রায় উঠে গিয়েছিল জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ও ডেভিড বেকহ্যাম দ্বৈরথের কারণে। সময়ের পরিক্রমায় দুজনের একজনও নেই জাতীয় দলে। আজ দুই দেশের কোয়ার্টার ফাইনালের মহারণে দুজনই দর্শক।

তবে লড়াইয়ে না থেকেও আছেন ইংল্যান্ড ও সুইডেনের কিংবদন্তি। শেষ আটের ধ্রুপদী লড়াই শুরুর আগে নিজ দেশের পক্ষে বাজি ধরলেন দুজনই। ইংল্যান্ড জিতলে বেকহ্যামকে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় খাওয়াবেন ইব্রা। আর সুইডেন জিতলে ইব্রাকে তার পছন্দের খাবার খাওয়াবেন বেকহ্যাম।

শেষ অবধি কে জিতবেন ইব্রা নাকি বেকহ্যাম? রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠবেই বা কোন দল- সুইডেন নাকি ইংল্যান্ড? দুটি প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দেবে আজকের ফলটা। বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় সামারা এরিনায় অনুষ্ঠিত হবে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট দল দুটির লড়াই। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা, নাগরিক টিভি, সিক্স ও সনি টেন ২।

স্বপ্ন বাঁচানোর লড়াইয়ে নামার আগে অবশ্য একটা ধাক্কা খেয়েছে সুইডেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে মিকায়েল লাস্টিগকে দলে পাচ্ছে না নীল-হলুদ শিবির। দুই ম্যাচের দুই হলুদ কার্ড দর্শক সারিতে পাঠিয়ে দিয়েছে এই রাইট-ব্যাককে। তার পরিবর্তে আজ একাদশে ঢুকছেন এমিল ক্রাফথ।

তবে দুঃসংবাদের সঙ্গে একটা স্বস্তির খবরও আছে সুইডেনের জন্য। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আজ দলে ফিরছেন মধ্যমাঠের প্রাণ সেবাস্টেইন লারসন। শেষ ষোলোতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও সুইডিসদের একটা অগোছালো মনে হচ্ছিল। লারসনের অনুপস্থিতির কারণে সুইডিসরা কিছুটা হলেও ছন্দ হারিয়েছিল।

নিষেধাজ্ঞার কোনো অস্বস্তি নেই ইংল্যান্ড শিবিরে। তবে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটকে ভাবাচ্ছে তারকা ফুটবলার জেমি ভার্ডির ইনজুরি। চোটের কারণে আজকের ম্যাচে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন অভিজ্ঞ এই ফরওয়ার্ড। কলম্বিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে প্রাপ্ত ইনজুরি তার কোয়ার্টার ফাইনাল ফেলে দিয়েছে সংশয়ের মুখে।

সামারা এরিনায় আজকের লড়াইটা মূলত ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত আক্রমণভাগ বনাম সুইডেনের চোয়ালবদ্ধ রক্ষণদুর্গের। সর্বোচ্চ ছয় গোল করে এই আসরের গোলদাতাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন। আজ গোলের সংখ্যাটা বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠবেন এই স্ট্রাইকার।

ইংল্যান্ডের স্বপ্নযাত্রার প্রধান সারথি এই কেনই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ইংলিশ অধিনায়ক পারবেন তো সুইডেনের আটসাট ডিফেন্সে ফাটল ধরাতে? সুইডিসদের শক্তির মূল উৎস যে এটাই! এরচেয়েও ভয়ঙ্কর হলো তাদের প্রতি আক্রমণগুলো। পাল্টা আক্রমণে সুইডেন কতটা বিধ্বংসী সেটা ইতোমধ্যেই টের পেয়েছে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, মেক্সিকোর মতো দলগুলো।

প্রতিপক্ষের এই সামর্থ্যটা অবশ্য ভালোই জানা আছে ইংল্যান্ডের। সুইডেনের সঙ্গে এবারই তো প্রথম সাক্ষাৎ নয় তাদের। এর আগেও ২৪ বার নীল-হলুদ শিবিরকে মোকাবেলা করেছে ইংল্যান্ড। যেখানে থ্রি লায়নদের জয় ৮টিতে। সাতটিতে জিতেছে সুইডেন। বাকি নয়টা ম্যাচ থেকে গেছে অমীমাংসিত।

শেষবারের দেখায় অবশ্য ব্যবধানটা কমিয়ে এনেছে সুইডেন। প্রায় ছয় বছর আগে ইব্রাহিমোভিচের হ্যাটট্রিকসহ চার গোলে ইংলিশদের (৪-২) উড়িয়ে দিয়েছিল সুইডিসরা। থ্রি লায়নদের জন্য স্বস্তির খবর প্রতিপক্ষের সেই কাণ্ডারি নেই আজকের ম্যাচে।

অবশ্য সার্বিক লড়াইয়ে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও প্রতিযোগিতার মঞ্চে পিছিয়ে আছে তারা। দুইবার বিশ্বকাপের ম্যাচে সুইডেনের সঙ্গে ড্র করলেও ইউরোতে পাঁচবারের দেখায় দুইবারই এই দলটার কাছে হেরেছে ইংল্যান্ড। সবমিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টুর্নামেন্টের আট ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয় মাত্র একটিতে!

অচেনা মঞ্চে চেনা লড়াইয়ে ইংল্যান্ড আজ পারবে তো সুইডিসদের হারাতে? সাম্প্রতিক বিশ্বকাপগুলোতে যে শেষ আট ইংলিশদের জন্য একটা ‘জুজু’ হয়ে দাঁড়িয়েছে! তবে এমন কোনো পিছুটান নেই সুইডেনের। দুই যুগ পর সেমিফাইনালে উঠতে মুখিয়ে আছে তারা।