প্রস্তুত লড়াইয়ের মঞ্চ লুঝনিকি স্টেডিয়াম। প্রস্তুত প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ফুটবলপ্রেমীরা। ভক্তদের অপেক্ষাটা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার। আজ রাতেই যে অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রতিক্ষীত দুনিয়া কাঁপানো ফাইনাল। কী হবে মস্কোর এই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে? বিশ বছর পর রাজত্বে ফিরবে ফ্রান্স নাকি রূপকথার বিশ্বকাপে স্বপ্নের প্রথম শিরোপা জিতে নেবে ক্রোয়েশিয়া?

france will face croatia in world cup final at tonight

এটা এমনই এক লড়াই যেটার দিকে গোটা পৃথিবী তাকিয়ে চাতক পাখির চোখে। এই ম্যাচের জন্য টানা এক মাস ফুটবল যুদ্ধ হয়েছে বিশ্ব মানচিত্রের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ায়। ৬২ ম্যাচের পর একুশতম বিশ্বকাপ পেয়েছে সেরা দুই দলকে। ৩২ দলের এ আসর শুরু হয়েছিল ১৪ জুন; সেদিন পর্দা উঠেছিল বিশ্বকাপের। সেই মস্কোতেই আজ রাতে পর্দা নামবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর।

১০টি ভেন্যু ঘুরে বিশ্বকাপ আবার ফিরেছে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। এই মঞ্চেই উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল রাশিয়া ও সৌদি আরব। সেদিন স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন ৮৮ হাজার দর্শক। নিশ্চিতভাবে আজও মস্কোর গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকবে না। ঘটন-অঘটনের বিশ্বকাপের শেষ দৃশ্যপটে কী আছে দেখার জন্য গোটা দুনিয়া মুখিয়ে আছে।

রাশিয়া বিশ্বকাপকে ইতোমধ্যেই লেটার মার্কস দিয়েছে ফিফা। স্বাগতিক হিসেবে রাশিয়া সফল আয়োজন করেছে এজন্য নয়, বিদায়লগ্নে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বকাপটা ফুটবলপিপাসুদের মনে থাকবে অনেক কারণেই। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি ও জার্মানিবিহীন সেমিফাইনাল। নবমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যাবে অল ইউরোপিয়ান ফাইনাল। বাংলাদেশ সময় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে রাত ৯টায়। ধ্রপদী লড়াইটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা, নাগরিক টিভি, সনি সিক্স ও সনি টেন ২।

এই ম্যাচের জন্য সম্ভাব্য সেরা প্রস্তুতি নিয়েছে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। অজেয় থাকার গৌরব নিয়ে স্বপ্নের মঞ্চে নাম লিখিয়েছে দুই দল। আজ যে কোনো একদলের স্বপ্নের সমাধী হয়ে যাবে। মস্কোর একটা অংশ যখন শোকবিহ্বল হবে, তেমনিভাবে অন্য অংশটা মেতে উঠবে উৎসবে। এই উৎসবের রঙ কেমন হবে? এটাই ভেবেই ব্যাকুল হয়ে আছেন বিশ্ববাসী।

১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ আয়োজন করে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। আট বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় শিরোপাটা জিততে পারতো ফরাসিরা। কিন্তু বার্লিনের ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে আশার সমাধী হয়েছিল তাদের। এক যুগ পর আবারো শিরোপার খুব কাছে চলে এসেছে ফ্রান্স। এই দলটা দিদিয়ের দেশমের।

কুড়ি বছর আগে অধিনায়ক হিসেবে তিনি দেশকে উপহার দিয়েছেন স্বপ্নের সোনালী ট্রফি। এবার কোচ হিসেবে বিশ্বজয়ের হাতছানি দেশমের সামনে। আজ ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারলে ইতিহাসের চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে কোচ এবং খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারবেন দেশম।

অবশ্য ফ্রান্সের জন্য এটা তৃতীয় ফাইনাল হলেও ক্রোয়েশিয়ার জন্য এবারই প্রথম। ঠিক বিশ বছর আগে এই ফ্রান্সের কাছেই সেমিফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ক্রোয়াটদের। দুই দশক পর সেই ফরাসিরাই স্বপ্ন জয়ের পথে ক্রোয়েশিয়ার সামনে দাঁড়িয়েছে বাধার প্রাচীর হয়ে।

দুই বছর আগে ঘরের মাঠে ফ্রান্স উঠেছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। কিন্তু অতিমাত্রার আত্মতুষ্টির কারণে সেন্ট ডেনিসের শিরোপা লড়াইয়ে পর্তুগালের কাছে হেরে যায় ফরাসিরা। সেই ভুলটা এবার আর করতে চায় না ফ্রান্স। ইউরোর আসরের অতীতের শিক্ষাটা বিশ্বকাপের মঞ্চে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারুণ্যে ঠাসা দলটি।

তারকা সমৃদ্ধ এই ফ্রান্সকে নিয়ে বাজি ধরাটা যতটা সহজ ছিল, ততটাই কঠিন ছিল ক্রোয়েশিয়ার বেলায়। ফ্রান্স শিবিরে আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরওয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে, অ্যান্তনি গ্রিজম্যান। মধ্যমাঠের কাণ্ডারী হিসেবে ফরাসিদের আক্রমণের সুতো টানার দায়িত্বে আছেন পল পগবার মতো প্রতিভাবান ফুটবলার। আজ শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার যত ভয় এই তিনজনকে নিয়েই।

ফেভারিট দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। তবে ক্রোয়েশিয়ার টুর্নামেন্টের শেষ লড়াই পর্যন্ত টিকে থাকাটা ছিল মহাবিস্ময়। এটা সম্ভব হয়েছে ক্রোয়াটদের হার না মানার অদম্য মানসিকতা। বিশ্বকাপ জিততে মডরিচ-রাকিটিচরা কতটা মরিয়া সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে একটা তথ্য। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে নকআউট পর্বের তিন ম্যাচে পিছিয়ে থেকেও শেষ অবধি ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া।

তবে দুই ঘণ্টার টানা তিনটি লড়াই করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ক্রোয়াটরা কিছুটা হলেও ক্লান্ত। কিন্তু দৃষ্টিসীমায় যখন বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সৌধ তখন সেই ক্লান্তিটা এমনিতেই বাতাসে মিলিয়ে যায়। সেরারা কখনো ক্লান্ত হয় না সেটা এই ক্রোয়েশিয়া বুঝিয়ে দিয়েছে। এই পর্যন্ত আসতে তারা হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ডের মতো দলকে। কোয়ার্টার ফাইনালে এই আসরের চমক স্বাগতিক রাশিয়াকেও বিদায় করেছে জ্লাটকো দালিচের দল।

এবার ফ্রান্সকেও হারানোর স্বপ্ন দেখছে ক্রোয়েশিয়া। আজ জিতলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দ্বিতীয় জনবহুল দেশ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হবে ক্রোয়াটরা। সাড়ে ৪৫ লাখ ক্রোয়াটবাসীর সেই স্বপ্নটা পূরণ করতে তৎপর হয়ে উঠেছে লাল-সাদা শিবির। দলটির কোচ দালিচের কথাতেই সেটা পরিষ্কার, ‘এই বিশ্বকাপের তারকানির্ভর দলগুলো বিদায় নিয়েছে। দল হিসেবে যাদের ঐক্য ছিল তারাই টিকে আছে। শেষ ম্যাচেও আমরা সেই ধারাটা ধরে রাখতে চাই। সুযোগটা কাজে লাগাতে চাই।’

ট্রফি একটি। দাবিদার দুই দল। সেরার এই স্বীকৃতিটা পেতে শুরু থেকেই স্বপ্নের জাল বুনেছেন ফ্রান্স কোচ দেশম। তবে প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার মতো দল বলেই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে ফরাসিরা। ফাইনালপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ফ্রেঞ্চ কোচ দেশম বলেছেন, ‘বিশ্বসেরা দল হওয়ার জন্য আমরা সুযোগ তৈরি করেছি। কিন্তু আমরা এখনো চ্যাম্পিয়ন নই। তবে আমরা সুন্দর একটা সমাপ্তি করতে চাই।’

আশা পূরণ করতে সেরা একাদশটিকেই মাঠে নামাতে পারছেন ফ্রান্স কোচ দেশম। কিন্তু মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে ক্রোয়েশিয়া কোচ দালিচকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ইনজুরির গ্রাস। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষের জয়ের নায়ক দুই ফরওয়ার্ড মারিও মান্দজুকিচ এবং ইভান পেরিসিচ পেয়েছেন চোট। যদিও আশার বাণী শুনিয়েছে ক্রোয়াট শিবির। সেরা দল খেলানোর প্রতিশ্রতি দিয়েছেন দলটির কোচ দালিচ।

অথচ এই দলটার বিশ্বকাপ খেলা নিয়েই ছিল সংশয়। বাছাইপর্বে ইউক্রেনের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে হারলে হয়তো রাশিয়ার আসরে দর্শক সারিতে থাকতে হতো ক্রোয়েশিয়াকে। অথচ সেই দলটাই গোটা দুনিয়াকে দর্শক বানিয়ে উঠে গেছে ফুটবল মহাযজ্ঞের শেষ সিঁড়িতে। এখানে আসতে শেষ ম্যাচে ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে খেলেছিলেন মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ। ক্রোয়াটরা মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে এই তথ্যটাই।

মানসিকভাবে এগিয়ে রাখার পাশাপাশি ক্রোয়েশিয়া বরাবরের মতো এ ম্যাচের গ্যালারি থেকে পাচ্ছে অনুপ্রেরণা। খোদ দেশটির প্রধানমন্ত্রী কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ প্রতিটি ম্যাচেই মডরিচদের পাশে ছিলেন দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে! তাকে নিরাশ করেনি ক্রোয়াটদের ভারসাম্যপূর্ণ দলটি। সব ম্যাচেই জয়ের নিশ্ছিদ্র পথে হেঁটেছেন মডরিচ-মান্দজুকিচরা। কোনো সংশয় নেই, আজও সে পথেই হাঁটতে চাইবেন তারা।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.