ঘটনাবহুল ও রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে যে ফরাসি বিপ্লবের শুরু হয়েছিলো, গত কয়েক বছর তা ছিলো নিষ্প্রভ, ক্রমশ ম্রিয়মাণ। কিন্তু অ্যান্টোনি গ্রিজম্যান, পল পগবা, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের নতুন প্রজন্মের ফ্রান্স আবার দেখালেন ফরাসিদের ফুটবল বিপ্লব কী রকম দুর্দান্ত হয়। মস্কোর ফাইনালে তারা ৪-২ গোলো উড়িয়ে দিলেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় চমক ক্রোয়েশিয়াকে।

france the new world champions

এই বিশ্বকাপ জেতার মাধ্যমে ইতিহাসে ঢুকে গেলেন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশাম। পৃথিবীর মাত্র তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ফুটবলার ও কোচ, দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জয়ের অবিশ্বাস্য নজির গড়লেন তিনি।

ম্যাচের ১৯ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। এগিয়ে যায় ফ্রান্স। অ্যান্টোনি গ্রিজম্যানের ফ্রি কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে ঢুকিয়ে দেন মারিও মানজোকিচ। তার গোলেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় ইংল্যান্ড আর ফাইনালে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ফাইনালকে দলকে পিছিয়ে দেন তিনি।

আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গেলেও গ্রিজম্যানের ফ্রি কিকটি ছিলো অসাধারণ। প্রথম ১২ মিনিটে মাত্র একবার বলে পা ছোঁয়ানো গ্রিজম্যানের পা-ই মূলত ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া ঠিক করে দেয়।

বিশ্বকাপ ফাইনালে এর আগে কোনো আত্মঘাতী গোলের নজির ছিলো না। মারিও মানজোকিচই প্রথম দুর্ভাগা, যিনি বিশ্বকাপ ফাইনালে আত্মঘাতী গোল দেয়ার লজ্জায় নিজের নাম লেখালেন। নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে দেয়ার পর মনাজোকিচ যে অনুতাপের আগুনে পুড়ছিলেন, ম্যাচের ২৮ তম মিনিটে তাতে জল ছিটিয়ে দেন ইভান পেরিসিচ। ক্রোয়েশিয়াকে অসাধারণ এক গোলে সমতায় ফেরান তিনি।

ডোমাগজের দেয়া পাস থেকে দুর্দান্ত এক শটে গোলটি করেন পেরিসিচ। তার ডান পায়ের অসাধারণ শটের কোনো উত্তরই জানা ছিলো না ফ্রান্সের গোলরক্ষকের। এর মাধ্যমে বড় কোনো আসরের ১১টি গোলের সাথে নিজের নাম সম্পৃক্ত করেন পেরিসিচ। যা ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

পেরিসিচের এই কীর্তি ম্লান হয়ে যায় ম্যাচের ৩৯ মিনিটে। যখন নিজেদের ডি বক্সে তার হাতে গিয়ে লাগে বল এবং পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। ফরাসিরা ম্যাচের ৩৯ মিনিটে এগিয়ে যায় গ্রিজম্যানের পেনাল্টি থেকে।

এই পেনাল্টির আপিল প্রাথমিকভাবে নাকচ করে দেন রেফারি। কিন্তু পরে ভিএআর-এর সহায়তায় পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নেন আর্জেন্টাইন রেফারি।

প্রথমার্ধ শেষ হয় ফ্রান্সের ২-১ গোলে এগিয়ে থাকার মাধ্যমে। স্কোরলাইনে এগিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধে ছিলো ক্রোয়েশিয়ারই আধিপত্য। প্রথমার্ধে তাদের বল পজেশন ছিলো ৬৬ শতাংশ! ফ্রান্স যেখানে টার্গেটে একটা শটও নিতে পারেনি, ক্রোয়েশিয়া সেখানে শট নিয়েছে ছয়টি! কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, প্রথমার্ধে ফ্রান্সের তুলনায় ভালো ফুটবল খেলেও পিছিয়ে থাকতে হয় ক্রোয়েশিয়াকে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অসাধারণ এ সুযোগ পান আন্তে রেবিচ। গোলবারের বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ এক শটও করেন তিনি। কিন্তু তার চেয়ে বেশি দক্ষতায় বলটি সেভ করেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস। কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন তিনি।
লরিসের এই সেভই যেনো ফ্রান্সকে অনুপ্রাণিত করে তুলে আরো বেশি। যেনো ভাগ্যের পক্ষপাতটা টের পেয়ে যান পল পগবা ও কিলিয়ান এমবাপ্পেরা। ম্যাচের ৫৯ ও ৬৫ মিনিটে দারুণ দুটি গোল করে ফ্রান্সকে ৪-১ গোলে এগিয়ে দেন তারা।

৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া ক্রোয়েশিয়া শেষ দিকে প্রায় টালমাটাল হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই ৬৯ মিনিটে আত্মঘাতী গোল দেয়া মারিও মানজোকিচ একটা গোল পরিশোধ করেন। কিন্তু ম্যাচ থেকে ততক্ষণে অনেক দূরে ছিটকে গেছে ক্রোয়েশিয়া। শেষ পর্যন্ত সেই দূরত্ব আর কমাতে পারেনি তারা।

ফাইনাল খেলতে নামার আগে ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশামের সামনে হাতছানি ছিলো দারুণ এক কীর্তির। যে কীর্তিতে নাম আছে কেবল দুজনের। তারা হলেন মারিও জাগালো ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। যারা খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতেছেন। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জিতে, দেশাম তখন তার দেশের অধিনায়ক ছিলেন।

রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পাওয়া ক্রোয়েশিয়ার জন্য এ হয়ে থাকলো দারুণ অনুপ্রেরণার এক দৃষ্টান্ত। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের কাছে তৃতীয় হওয়া ক্রোয়েশিয়া এবার সেই ফ্রান্সকেই বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায়।

গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়া ছিলো অসাধারণ। প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে তার জয় ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু পরের ম্যাচে আর্জেন্টনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে হৈচৈ ফেলে দেয় তারা। এরপর শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের আরো একটি জয় বুঝিয়ে দেয় যে, বিশ্বকাপটা জমিয়ে দিতেই এসেছে মাত্র ৪২ লাখ মানুষের দেশটি।

বিশ্বকাপে দারুণ আলোড়ন তুলেও শেষটা ঠিক মধুর হলো না ক্রোয়েশিয়ার। ম্যাচে বল পজেশন, গোলে শট এবং আরো নানা পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকলও তাদের বিশ্বকাপ শেষ করতে হলো রানার্স আপ হওয়ার সান্ত্বনা নিয়ে। তাদেরকে হারিয়ে ২০ বছর বিশ্বকাপ জিতে গেলো ফ্রান্স। ফরাসি ফুটবল বিপ্লবের নতুন অধ্যায় দেখলো সারা বিশ্ব।

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.