ট্রফি জিতেও ছুঁতে চাননি তিনি!

মানুষের মনোজগত যে কতো রকম হয়, তা বোধহয় কোনো দিনও হিসেব করে বের করা যাবে না! মনোজগতের অদ্ভুত সব চিন্তায় মানুষের কতো বিচিত্র রকমের আচরণ হয় তারই যেনো একটা উদাহরণ দিলেন এনগালো কান্তে। ফ্রান্সের এই ফুটবলার বিশ্বকাপ জেতার পর ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে চাননি। তার নাকি লজ্জা লেগেছে ট্রফি ধরতে!

খুশির আধিক্যে মানুষ কী করে বসে, তা বোঝা মুশকিল। এনগালো কান্তের বোধহয় ওই রকম কিছুই হয়েছিলো। তা না হলে বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁতে কেনো তার লজ্জা লাগবে? ওই ট্রফির জন্যই বিশ্বজুড়ে কতো আয়োজন, কতো হাহাকার। ওই ট্রফিটা জেতার জন্যই শত শত, হাজার হাজার ফুটবলারের সে কী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।

যে কোনো ফুটবলার পেশাদার হওয়ার পরই বিশ্বকাপটা একবার ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন লালন করেন। সেটা যেভাবেই হোক। কান্তে তো সেখানে ট্রফিটা জিতেই নিয়েছেন। রাশিয়ায় বিজয়ঝাণ্ডা উড়ানো ফ্রান্সের মধ্যমাঠের প্রাণই তো ছিলেন কান্তে। কে জানে, তিনি না থাকলে হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটা পূরণই হতো না ফ্রান্সের। তারপরও কান্তের কেনো ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে লজ্জা লাগলো, কে জানে!

জানা গেছে, ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো যখন বিশ্বকাপটা তুলে দেন ফ্রান্সের ফুটবলারদের হাতে, সবাই অন্তত একবার হলেও তা ধরেন, চুমু খান। কিন্তু কান্তে তখন লুকিয়ে ছিলেন একা একপ্রান্তে। পরম সাধনায় পাওয়া বিশ্বকাপটা ছুঁয়েই দেখেননি তিনি।

তার এই 'লজ্জা' দেখে ফেলেন এক সতীর্থ এবং প্রায় জোর করে কান্তের হাতে ট্রফিটা দেয়া হয়। ট্রফিতে হাত ছুঁয়ে নতুন প্রেমিকার সঙ্গে প্রথম দেখায় যে লজ্জা হয়, কান্তেও যেনো হয়ে পড়েন সে রকমই লাজুক প্রেমিক! চোখ-মুখ কুচকে কোনো মতে একটা ছবি তোলার সুযোগ দিয়েই সতীর্থের হাতে বিশ্বকাপটা দিয়ে দেন তিনি!

কান্তের এমন কাণ্ড কি শুধু লজ্জাই, নাকি অন্য কিছু? এমনও তো হতে পারে, ফ্রান্স বিশ্বকাপ দলে খেললেও কান্তে অতো বড় স্বপ্ন দেখেননি। ভাবেননি এখনই বিশ্বকাপটা এসে সালাম ঠুকবে তার পায়ে। হতেও পারে।

ফ্রান্সের আরো অনেক ফুটবলারের মতো কান্তেরও উঠে আসার গল্পটা বড্ড কণ্টাকাকীর্ণ। তারও পথ চলতে হয়েছে নানা রকম বাঁধা-বিপত্তি এড়িয়ে। তাকেও ফুটবলের বুটে পা গলাতে হয়েছে বহু কষ্টে। হয়তো ফুটবলটা এ কারণেই তার কাছে কেবল আনন্দের ব্যাপার। এখানে তিনি কী জিতলেন বা কী হারলেন, তাতে তার একেবারেও তোয়াক্কা নেই।

শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীতের দেশ থেকে উঠা কান্তেও বোধহয় কবি মন নিয়ে ঘোরেন। তার মনোজগতে হয়তো বিশ্বকাপটা স্রেফ একটা সোনার বস্তু। উদাস কান্তেকে তা কিভাবে ছোঁবে!