এখনই টেস্ট দলে দেখা যাবে না সাব্বিরকে

জাতীয় দলে তুমুল প্রতিভা নিয়ে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে একজন সাব্বির রহমান রুম্মান। প্রতিভার সাথে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার দীর্ঘ অভিজ্ঞতাও ছিলো তার। ব্যাট হাতে কার্যকরিতার পাশাপাশি বল হাতে এবং ফিল্ডিংয়েও সমান ভরসা দিতে পারেন তিনি। সম্প্রতি ‘এ’ দলের ভারত সফরে তার ব্যাট থেকে দারুণ একটি সেঞ্চুরি (১২২*)। ওই একটি ইনিংসের কারণেই জাতীয় টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার কথা ছিলো তার। কিন্তু প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ এখনই জাতীয় দলে চান না সাব্বিরকে। তার মতে সাব্বিরের সামনে অফুরন্ত সম্ভাবনা। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আরো একটু পরিপক্কতা অর্জনের দরকার আছে তার।

সাব্বিরকে নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ জানান, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্য সাব্বিরসহ আরো কয়েকজনকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দলের দিকে তাকালে দেখা যাবে বেশ কয়েকজন সদস্য আছে, যারা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্য এখনো ঠিক প্রস্তুত নয়। তাদেরকে ‘এ’ দলে রেখে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ‘এ’ দলের অনেক খেলা আছে সামনে। আশা করি এখান থেকে তারা শিখবে। কয়েকজনকে আমরা সব ফরম্যাটে দেখতে চাই।’

‘এ’ দলের হয়ে ভারত সফরে ওই সেঞ্চুরিটাই শুধুমাত্র সাব্বিরকে আলোচনায় নিয়ে আসেনি। বর্তমান জাতীয় দলের অন্যতম সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান তিনি। তার ব্যাটিংয়ের ধরন বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিংয়ের ইতিহাস। সাব্বির দেখিয়েছে, দ্রুত রান তোলার ক্ষমতার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় উইকেটে টিকে থাকার ক্ষমতাও তার অর্জিত হয়েছে। গত সাত বছরে প্রথম শ্রেণির ব্যাটসম্যান হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি সাব্বির নিজেকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তার দুর্দান্ত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

‘এ’ দলের হয়ে ভারতে যে ইনিংসে সাব্বির সেঞ্চুরি করেছেন, ওই ইনিংসেই বাংলাদেশের ছয়জন ব্যাটসম্যান ফিরে গেছেন মাত্র শূন্য রানে। সাব্বিরের ইনিংসটা না হলে ভয়াবহ লজ্জায়ই পড়তে হতো সেদিন। সাব্বির সেদিন তার ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন স্পিন- পেস, শর্ট পিচ এমন কি ফুলার ডেলিভারিগুলো খুব সহজে মোকাবেলা করে। অন্য ব্যাটসম্যানদের রান করতে নাভিশ্বাস ছুটে গেলেও সাব্বির ছিলেন অবিচল। ও ইনিংসের বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের একজনই বলেছেন, সাব্বিরকে টেস্ট দলে দেখতে চাই।

গত বছর অভিষেকের পর সাব্বির ২০টি ওয়ানডে এবং আটটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। প্রতিটি ম্যাচেই তার কাজ ছিলো শেষ দিকে দ্রুত রান তোলা। সেটা সাব্বির ঠিকভাবেই করেছেন। তাতে কখনো দলের রান ধারণার চেয়েও বেশি হয়েছে, কখনো চেজ করা সহজ হয়ে গেছে। ক্রমে দ্রুত রান তোলার কাজটা সহজ বানিয়ে নিয়েছেন সাব্বির। যদিও তিনি সব সময় বলে এসেছেন, নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাটের ব্যাটসম্যান তিনি হতে চান না। তার ইচ্ছে সব ফরম্যাটেই খেলা।

নির্দিষ্ট ফরম্যাটে খেলাতে গিয়ে এর আগে বাংলাদেশ অনেক প্রতিভা নষ্ট করেছে। উদাহরণ দিতে গেলে মুমিনুল হক, এনামুল হক জুনিয়র এবং রবিউল ইসলামের নাম বেশ আগে চলে আসবে। টেস্ট বিশেষজ্ঞ বলে বলে তাদের এক রকম কোণঠাসা করে দেয়া হয়েছে। ফলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তারা কখনোই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। সাব্বিরকে নিয়ে ওই ভয়টা কম কাজ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ইতিহাস দেখেই। দ্রুত রান তোলায় দক্ষ হলেও লোয়ার মিডল অর্ডারে রাজশাহীর হয়ে সাব্বির ২০০৮ থেকে যা খেলেছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। জাতীয় ক্রিকেট লিগে সব সময় নিজের ধৈর্য্য ক্ষমতা দেখিয়েছেন সাব্বির। তার এমন অনেকগুলো ইনিংস আছে, যাতে অন্তত তিন ঘণ্টা ধরে খেলেছেন তিনি।

টেস্ট ক্রিকেটে সাব্বিরের মানিয়ে নেয়া নিয়ে আত্মবিশ্বাসী শোনা গেছে ম্যাল লয়ের কণ্ঠ। এ বছরের লম্বা একটা সময় সাব্বিরকে নিয়ে কাজ করা এই কোচ মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেটে মানিয়ে নেয়ার প্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে সাব্বিরের মধ্যে। তিনি টেস্টে সাব্বিরের সফল না হওয়ার কোনো শঙ্কা দেখেননি। একই সাথে তিনি সাব্বিরকে পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহীর হয়ে আরো একটু উপরের দিকে ব্যাটিং করতে। এতে বেশি সময় পেয়ে আরো বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পাবেন তিনি।

আপনি আরো পড়তে পারেন

চোখ বেধেও দুর্বার পিটারসেন!

টেস্ট খেলতে আসছে জিম্বাবুয়ে

নিজেকে ফিরে পাচ্ছেন মার্শাল আইয়ুব