আপনি পড়ছেন

বিশেষজ্ঞের মতে, ইতিবাচক ও ডিজিটালভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশকে এশিয়ার একটি ‘প্রধান পর্যটন গন্তব্যে’ পরিণত করা যেতে পারে। এমনটাই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আফজাল হোসেন।

tourism destination

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের যা আছে সেটি অসাধারণ, প্রাকৃতিক ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। কিন্তু আমাদেরকে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।’

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মোট জিডিপির ২.২ শতাংশ বা ৪২৭.৫ বিলিয়ন টাকা সরাসরি ভ্রমণ এবং পর্যটন খাত থেকে এসেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এটি ৬.১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১৭ সালে ভ্রমণ ও পর্যটন খাত ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ কর্মসংস্থান (মোট কর্মসংস্থানের ১.৮ শতাংশ) সৃষ্টিতে সরাসরি অবদান রেখেছে। ২০১৮ সালে এটি ৩.০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ড. আফজাল বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অবকাঠামোর সাথে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে সেহেতু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে পর্যটন খাতকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। পর্যটন খাত বাংলাদেশে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাত হতে পারে মনে করেন তিনি।

‘বাংলাদেশের মানুষ অতিথি পরায়ণ এবং বন্ধুসুলভ। আমাদের স্থিতিশীলতা রয়েছে। আমরা এখন আর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বা ভিক্ষুকদের দেশ নই। বাংলাদেশের ভালো দিকগুলো আমাদের বিদেশিদের কাছে উপস্থাপন ও প্রচারণা করতে হবে,’ বলেন তিনি।

এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যাপক প্রচারমূলক কার্যক্রম এবং বিদেশির কাছে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করে পর্যটন খাতের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কম সময়ে বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন স্থানগুলোতে যাওয়া সম্ভব হলে বিদেশিরা বাংলাদেশে আসতে আরও বেশি উৎসাহিত হবে।

সময় এবং বাজেট বিবেচনা করে কম সময়ে পর্যটন স্থানগুলোকে আরামদায়কভাবে যেতে চান বিদেশি পর্যটকরা, বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো পর্যটক স্পট সুন্দরভাবে উপভোগ করতে বিদেশি পর্যটকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১০ ঘণ্টা সময় নিতে পারি সে দিকে নজর দেয়া উচিৎ। শুধুমাত্র সমুদ্র সৈকতে বেশিক্ষণ সময় কাটানোর যথেষ্ট নয়। আমাদের এর সাথে আরও কিছু করার আছে। যেমন আমাদের থিয়েটার হল, স্থানীয়দের নাটক করার জন্য মুক্ত মঞ্চ, মিউজিকাল ব্যবস্থাপনা এবং থিম পার্ক করা দরকার।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে ‘নাইট লাইফ’ নামে কিছু নেই। আমাদের এক্সকুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে ‘বার’ থাকা দরকার। এটি সত্যি নয় যে বিদেশি পর্যটকরা শুধুমাত্র মদ খেতে বাংলাদেশে আসবেন। তবে কিছু পর্যটক মদ খেতে চাইতে পারেন। এক্সকুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে তারা মদ খেলে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

পর্যটনকে একটি স্মার্ট খাত উল্লেখ করে এ খাতের সরকারের বাজেট প্রসঙ্গে অধ্যাপক আফজাল বলেন, পর্যটন খাতের জন্য বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ মোটেও যথেষ্ট নয়। প্রায় ৮.৪ লাখ বিদেশি প্রতি বছর বাংলাদেশ সফর করেন। তবে তাদের মধ্যে পুরোপুরি পর্যটকদের খুবই সীমিত, ৫০ হাজারেরও কম। অন্যদিকে বছরে প্রায় ১.৩৭ কোটি দেশি পর্যটক পর্যটন স্থানগুলো ভ্রমণে যায়।

‘আমাদের বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরো অনেক বাড়ানো দরকার। এছাড়া আমরা আশা করি, দেশি পর্যটকদের সংখ্যা বছরে ৪-৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে,’বলেন ড. আফজাল।

এদিকে ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার জন্য শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল।

তিনি বলেন, অনেক দেশে পর্যটনকে অর্থনীতির একটি প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। আমরা যদি আমাদের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করতে হবে।’

বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, মন্ত্রী কামাল বলেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের আরো অনেক প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এম মহিবুল হক জানান, সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য বছরব্যাপী কাজ করতে চায় এবং বিদেশে বাংলাদেশি পর্যটন খাতের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করছে।

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাতগুলোর একটি হিসেবে, ভ্রমণ ও পর্যটন খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি এবং সারা বিশ্বে সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে ডব্লিউটিটিসি’র বার্ষিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এই খাতটি বিশ্বের জিডিপির ১০.৪ শতাংশ এবং ৩১৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান (মোট কর্মসংস্থানের ৯.৯ শতাংশ) সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।

একেএম মঈনুদ্দিন ও তানজিনা ইসলাম, ইউএনবি।