মুসলিম ছেলের প্রেমে ব্যর্থ হয়েই সু চির এত রোহিঙ্গা বিদ্বেষ?

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বছরের পর বছর ধরে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর চলছে নানারকম নির্যাতন নিপীড়ন। জ্বালাও-পোড়াও আর নির্মম নির্যাতন থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। কিন্তু তারপরও ঘুমভাঙেনি দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী ও নোবেল জয়ী অং সান সু চির। সবমিলিয়ে মুসলমানদের ওপর সু চির একধরণের বিদ্বেষী মনোভাব ফুটে উঠেছে। কিন্তু কেন এতো বিদ্বেষ?

বিভিন্ন মহলে কানাঘুষা চলছে, রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অং সান সু চির আক্রোশের অন্যতম কারণ ৫০ বছরে আগে এক মুসলমান ছেলের সঙ্গে প্রেমে ব্যর্থতা। অনেক ভালোবেসেও মনের মানুষকে পাননি সু চি। রাখাইনে চলমান নিপীড়নে তার চুপ থাকা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কোন পদক্ষেপ না নেওয়া এবং জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণেও কোন সহমর্মিতা না দেখানোতে সু চিকে নিয়ে এমন গুঞ্জন উঠেছে। অন্যদিকে, ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার রেশ কি আদৌ মানুষের মনে কোন প্রভাব রাখে? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এখানেও।

জানা গেছে, আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৬৪ সালে সু চি যখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন তখন তারেক হায়দার নামে এক পাকিস্তানি ছাত্রের প্রেমে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারেক হায়দার নামের মুসলমান সেই ছেলে সু চিকে বিয়ে করতে রাজি হননি। ফলে প্রেমে ব্যার্থ হন সু চি। বলাবলি হচ্ছে, তখন থেকেই ইসলামবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন সু চি।

সেই সু চি মূলত ইংরেজি এবং বনবিদ্যা নিয়ে পড়তে অক্সফোর্ডে গিয়েছিলেন। কিন্তু পছন্দমতো বিষয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি তার। শেষপর্যন্ত ভর্তি হতে হয় দর্শন বিদ্যায়। সেখানেই তারেকের প্রেমে পড়েন সুদর্শনা সু চি। জানা গেছে, তারেক তখন পাকিস্তানের কূটনীতিক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমতি নিয়েই অক্সফোর্ডে পড়তে যান তিনি। অন্যদিকে সু চির মাও কূটনীতিক। ফলে সহজেই তারেকের ঘনিষ্ঠ হন সু চি।

সু চির জীবনী লেখক ও সাংবাদিক পিটার পপহ্যাম জানান, সংস্কৃতি আর ধর্মীয় পার্থক্য থাকার পরও সু চি তারেকের গভীর প্রেমে পড়েন। ৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালিন তারেককে খুশি করতে ভারতীয় সকল ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেন সুচি। মূলত প্রেমে পড়েন সু চি। প্রেমে ব্যস্ততার কারণেই পরীক্ষায় ভালো করতে পারেননি সু চি। অক্সফোর্ডে পড়াশোন শেষ হলে তারেক সরাসরি পাকিস্তানে ফিরে যান। সু চি প্রেমিককে বিয়ে করতে চাইলেও প্রস্তাবে সাড়া দেননি তারেক।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সু চি কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির এই নেত্রী তখন থেকেই ধীরে ধীরে মুসলিমবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। মুসলমানদের আর্তনাদ তার হৃদয়কে স্পর্শ করে না।

পপহ্যাম লিখেন, 'সু চি প্রায় এক বছর বিরহে বিমর্ষ ছিলেন। এলোমেলো হয়ে যায় তার জীবন। এরপরই ইংল্যান্ডে তাদের পারিবারিক বন্ধু স্যার পল গর বুথ ও তার স্ত্রী, ছেলে ক্রিস্টোফার এবং সু চির প্রয়াত স্বামী মাইকেল অ্যারিসের সঙ্গে পরিচয় হয় বর্তমানের প্রভাবশালী এই নেত্রীর।

পপহ্যাম 'দ্য লেডি অ্যান্ড পিকে' বইয়ে লিখেছেন, সু চির ব্যক্তিগত জীবন অনেক ধরণের জটিলতা আর বৈপরীত্যে ভরপুর।' এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই বিভিন্ন মহল রোহিঙ্গা নির্যাতনে সু চির নিশ্চুপ থাকার পেছনে তার ব্যর্থ প্রেমের কাহিনীকে জড়াচ্ছেন। তবে ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার রেশ কি আদৌ কোন প্রভাব রাখে? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এখানে।