অর্ধশতক ধরে সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি..

তরুণ বয়সে সাগরের তলদেশের বিস্ময়কর প্রাণীজগত প্রবলভাবে আকর্ষণ করত ‘গডফাদার অব কোরাল’ নামে পরিচিত চার্লি ভেরনকে। জলের গভীরের বিশাল এক জগতের রহস্য উন্মোচন করতে তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে ডাইভিং শুরু করেন।

এখন চার্লি ভেরনের বয়স বাহাত্তর। তিনি গত পঞ্চাশ বছর ধরে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে ডাইভিং করছেন এবং বিশ্বে পরিচিত সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও বেশি প্রজাতি তিনি আবিষ্কার করেছেন। সমুদ্রের তলদেশে প্রানীজগত ও প্রবালের জীবন চক্র সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণা অনেকটাই তিনি বদলে দিয়েছেন।

সমুদ্র বিজ্ঞানী চার্লি ভেরনের জীবনের যাত্রাটি ছিল খুবই ঘটনাবহুল ও রোমাঞ্চকর। আর সেই গল্প নিজ মুখে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সে সময় এ ধরণের কাজ কেবল পাগলাটে ধরণের মানুষেরাই করতো।’

১৯৭২ সালে চার্লি ভেরন অস্ট্রেলিয়ার উপকুলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রথম পূর্ণকালীন সমুদ্র বিজ্ঞানী হিসেবে নিয়োগ পান। প্রায় তিন হাজারের বেশি একক প্রবাল প্রাচীরের সমন্বয়ে গঠিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবাল রিফ। জীবনের অধিকাংশ সময় এই রিফে কাটানোর অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে ভেরন বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই সমুদ্রের নতুন রূপ ও সৌন্দর্য দেখতাম। সাগরের এতো গভীরে যে এতো প্রাণ থাকতে পারে আর সেগুলো এতোটা জীবন্ত, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কেন, আমাদেরই তখন তেমন ধারণা ছিল না। আমরা একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ আর অসাধারণ সব প্রাণী আবিষ্কার করতে থাকলাম।’

মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটি বস্তু দৃশ্যমান তার মধ্যে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অন্যতম। প্রবাল, পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি ক্ষুদ্র অর্গানিজমস দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত যেখানে রয়েছে হাজারও প্রাণের অস্তিত্ব। ১৯৮১ সালে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এই রিফে অর্ধশতাব্দী ধরে কাজ করা প্রসঙ্গে চার্লি ভেরন বলেন, ‘আমি তখন একদম নতুন একটা পৃথিবী দেখছিলাম যা কেউ আগে কখনও দেখেনি। অনেকটা চাঁদে যাবার মতোই ছিল ব্যাপারটা।’

কিন্তু ভেরনের এই যাত্রার সবটাই আনন্দের ছিল না। সমুদ্রের তলদেশে থাকা অসংখ্য প্রাণী প্রজাতি নানা ধরণের হুমকির মুখে রয়েছে। ১৯৮০র শুরুর দিকে, চার্লি খেয়াল করলেন সেখানে একটি অদ্ভুত সাদা প্রবাল প্রাচীর। এখন আমরা জানি, সাগরের পানি খুবই গরম হয়ে গেলে সেখানকার প্রবাল সাদা হয়ে ওঠে এবং দীর্ঘ সময় ধরে পানির অবস্থা একই রকম থাকলে প্রবাল মরে যায়। কিন্তু সে সময়ে বিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে কিছু জানতেন না। চার্লি ভেরন বলেন, ‘সাদা প্রবালটি দেখে মনে হয়েছিল ব্লিচ করা। ছবি তুললাম সেটার। আর ওটাই ছিল সাদা হয়ে যাওয়া প্রবালের প্রথম প্রকাশিত কোন ছবি। আমি তখনও জানতাম না সেটা কি। ধারণা করেছিলাম, হয়তো অসুস্থ কোন প্রবাল হবে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পর লক্ষ করলাম, পুরো জাতের প্রবালই সাদা হয়ে উঠেছে।’

তারপর থেকেই সমুদ্রের তলদেশের প্রাণ রক্ষার জন্য ভেরন সচেতনতা বাড়াতে শুরু করেন। প্রবাল নিয়ে তার মতো দীর্ঘ সময় ধরে লেগে থেকে আর কেউ কাজ করেনি। নিজের সেই জ্ঞান থেকে চার্লির সুপারিশ, সমুদ্রের নিচের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যদি কর্তৃপক্ষ সচেতন না হয় তাহলে অচিরেই এসব প্রবাল প্রাচীরের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না।