আপনি পড়ছেন

গত শতাব্দীর অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল ভারতে একদল উগ্রবাদী হিন্দুর জিঘাংসার শিকার হওয়া ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙচুর। প্রায় ২৫ বছর আগে অযোধ্যার সেই বাবরি মসজিদের মিনারে উঠে যে হিন্দু যুবক শাবলের ঘা মেরেছিলেন তিনি এখন পুরোদস্তুর মুসলমান। বাবরি মসজিদ ভাঙা সেই বলবীর এখন মোহাম্মদ আমির।

bolobir now md amir

২৫ বছর আগে বাবরি মসজিদে শাবল দিয়ে আঘাত করা সেই হিন্দু যুবকের মুসলমান এবং আল্লাহর সেবক হয়ে যাওয়ার গল্প গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে ভারতীয় প্রভাবশালী গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দ বাজার। আনন্দ বাজার এই সংবাদের শিরোনাম করেছেন 'বাবরির প্রায়শ্চিত্ত! আমির হয়ে মসজিদ সারাচ্ছেন বলবীর'। বাস্তব জীবনের সেই উগ্র হিন্দু যুবকের এখন লম্বা দাঁড়ি। যেন পুরোপুরি মাওলানা। মুসলমান হওয়ার পর নিজের নাম রেখেছেন মোহাম্মদ আমির। শপথ নিয়েছেন ভেঙে পড়া শ’খানেক মসজিদ মেরামত করবেন তিনি। ভারতীয় মিডিয়া এই ঘটনাকে বলছে প্রায়শ্চিত্ত!

মোহাম্মদ আমির এক সময় ছিলেন শিবসেনার সক্রিয় কর্মী বলবীর সিংহ। বাবরি মসজিদের মিনারে শাবলের ঘা দেওয়ার পর নিজের সবকিছু খুইয়েছিলেন বলবীর। এমন ঘৃণ্য ঘটনার পর তাকে তার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেন। স্ত্রীও তার কাছে থাকেননি। তার বাবার মৃত্যুর পর বাড়ি ফিরে শুনেন, 'বাবা নাকি বলে গেছেন- বলবীর যেন নিজের মুখ বাড়ির কাউকে না দেখান। এমন কি, বলবীর যেন তার বাবার মুখাগ্নিও না করেন।'

এরপর পরিবারের সঙ্গ ছেড়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মহান আল্লাহতালা এবং নবী রাসুলের প্রেমে পড়েন। বর্তমানে বলবীর সবসময় আল্লাহর নাম জপেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন।

শুধু বলবীরই নয় তার সঙ্গে মুসলমান হয়েছেন তার বন্ধু যোগেন্দ্র পাল। এই যোগেন্দ্রও ২৫ বছর আগে বলবীরের সঙ্গে উঠেছিলেন বাবরি মসজিদের মিনারে। শাবলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছিলেন মসজিদ।

জানা গেছে, বলবীরের পরিবার কোনও দিনই উগ্র হিন্দু ছিলো না। বলবীর নিজে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইংরেজি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি মা, বাবা, ভাই, বোনদের সাথে থাকতেন পানিপথের কাছের একটা গ্রামে। বলবীরের বয়স ১০ হলে তার বাবা ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য পানিপথে বসবাস শুরু করেন।

বলবীর বলেন, 'আমার বাবা গাঁধিবাদ অর্থাৎ মহাত্মা গাঁধির দেখানো তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। দেশভাগের সময়কার পরিস্থিতি তিনি দেখেছিলেন। আমাদের বাড়ির আশেপাশের মুসলমানদের তিনি আগলে রাখতেন। তবে পানিপথের পরিবেশটা সেরকম নয় হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা লোকজন এখানে তেমন মর্যাদা পেতেন না। মুসলমানদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হতো।'

বলবীর বলেন, 'পড়াশোনার একপর্যায়ে শিবসেনা করতে করতেই বিয়ে করি। পরে এমএ শেষ করি রোহতকের মহর্ষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তখন প্রতিবেশীরা ভাবতেন আমি একজন কট্টর হিন্দু। এদিকে আমার বাবা মূর্তি পূজায় কোনরকম বিশ্বাসী ছিলেন না। কখনোই যেতাম না মন্দিরে। বাড়িতে গীতা থাকলেও কখনো খুলে দেখা হয়নি।'

Babri Masjid broke

বাবরি মসজিদ ভাঙার সেই ঘৃণিত কাজ সম্পর্কে বলবীর বলেন, 'শিবসেনার লোকজন আমাকে সম্মান করতো। শিবসেনাই আমাকে ও বন্ধু যোগেন্দ্রকে অযোধ্যায় পাঠিয়েছিল বাবরি ভাঙতে। এরপর বাবরি ভেঙে পানিপথে ফেরার পথে আমাকে ও যোগেন্দ্রকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হয়। আমরা বাবরির যে দুটি ইট এনেছিলাম সেগুলো পানিপথে শিবসেনার স্থানীয় অফিসে স্থান পায়।'

বলবীর আরো বলেন, 'বাবরি ভাঙার পর বাড়িতে ঢুকতেই চেঁচিয়ে ওঠে বাবা দৌলতরাম। বাবা বললেন, হয় তুই এই বাড়িতে থাকবি, না হলে আমি থাকবো। অগ্যতা বের হয়ে গেলাম কিন্তু আমার স্ত্রীও সেদিন আমার হাত ধরে বেরিয়ে এল না। এরপর কিছুদিন ভবঘুরে হয়ে দিন কাটে। লম্বা দাড়ি দেখে অনেকেই ভয়ে আঁতকে উঠতেন। পরে বাড়িতে ফিরে জানতে পারি, বাবা আর নেই। আমি বাবরি ভাঙার দুঃখেই নাকি মারা যান তিনি।'

মুসলমান হওয়ার গল্পটি জানতে চাইলে বলবীর বলেন, 'বাবা হারিয়ে পুরনো বন্ধু যোগেন্দ্রের কাছে যাই। জানতে পারি, যোগেন্দ্র মুসলিম হয়ে গেছে। যোগেন্দ্র জানায়, বাবরি মসজিদ ভাঙার পর মাথা বিগড়ে (পাগল) যায়। পাপ করেছি বলেই এমনটা হয়েছে ধারণা থেকে মুসলিম হয় সে। যোগেন্দ্রর কাহিনী শুনে দেরি না করে সোনেপতে গিয়ে মুসলিম ধর্মে দীক্ষা নেই। মাওলানা কালিম সিদ্দিকির হাত ধরে হয়ে যাই মোহাম্মদ আমির।'

বলবীর গণমাধ্যমকে বলেন, ১৯৯৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ভেঙে পড়া মসজিদ মেরামত করেছেন তিনি। এমন কমপক্ষে শ'খানেক মসজিদ মেরামত করতে চান বলবীর। আল্লাহর রাস্তায় নিজের বাকি জীবনটা উৎসর্গ করতে চান।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.