মিয়ানমারে শান্তি: সবচেয়ে বড় বাধা সেনাবাহিনী

'মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আইনের ঊর্ধ্বে থাকলে দেশটিতে শান্তি ফিরবে না।' এমনই মন্তব্য করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে। রোহিঙ্গা নিপীড়নের তদন্ত শেষে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মিশনটি। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নিপীড়নের তদন্তে তিন সদস্যের একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠন করে জাতিসংঘ। এই মিশনের নেতৃত্বে ছিলেন, ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমান। এছাড়া সদস্য হিসেবে ছিলেন, নারী অধিকার বিশেষজ্ঞ শ্রীলঙ্কার আইনজীবী রাধিকা কুমারস্বামী এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক মানবাধিকার কমিশনার ও দেশটির আইন সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য ক্রিস্টোফার ডমিনিক সিডোটি।

প্রতিবেদনে জেনারেল দারুসমান বলেছেন, “মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যতদিন আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে, ততদিন দেশটিতে শান্তি ফেরানো সম্ভব হবে না।” দেশটির উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের আধুনিকায়নে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় বাধা বলেই মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, দীর্ঘ ১৫ মাসের তদন্ত শেষে ৪৪০ পৃষ্ঠার এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিয়েছেন মিশন। তাতে রাখাইনসহ মিয়ানমারের তিনটি রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ভয়ঙ্কর সব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর (তাতমাদো) মানবাধিকার ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর স্পষ্ট একটি ‘ধরণ’ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এসব অপরাধের জন্য দেশটির সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান বলছেন, মিয়ানমারে শান্তি চাইলে সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ তাতমাদোর শীর্ষ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিতে হবে। সেইসঙ্গে এই বাহিনীকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে এর পুরো নিয়ন্ত্রণ বেসামরিক প্রশাসনের হাতে থাকে। দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করেন জাতিসংঘের এই তদন্তকারী।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলা চালায়। এরপর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। চলতে থাকে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও। যা পরবর্তিতে আরো ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। আর এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ঢল।