হয়তো এই লেখাটা পড়ার সময়ই মারা যাবে আরেকটি শিশু...
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বর্তমান বিশ্বের সাক্ষাৎ জাহান্নাম বলে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন। আন্তর্জাতিক অবরোধ, সৌদি জোটের মুহূর্মুহূ বিমান হামলা এবং শিয়া-সুন্নি কর্তৃক গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে দেশটি এখন পুরোপুরি বসবাসের অযোগ্য। অবরোধ, হামলা আর গৃহযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হলেও এই সংঘাতের সরাসরি ভিকটিম হচ্ছে দেশটির শিশুরা।
সৌদি আরবের অবরোধের ফলে ইয়েমেনে এখন খাদ্যসংকট চরমে। দেশটি দুর্ভিক্ষের দোরগোড়ায় প্রায়। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ইয়েমেনে প্রায় ৫২ লাখ শিশু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে।
দুর্ভিক্ষ ছাড়াও দেশটির লক্ষ লক্ষ শিশু এখন অপুষ্টির শিকার। খাবারের অভাবে ন্যূনতম পুষ্টির যোগান পাচ্ছে না যুদ্ধ কবলিত এই দেশটির শিশুরা। ফলে খুব সহজেই দেশে বাসা বাঁধছে কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানারকম মরণব্যাধি রোগ। তাতেও শেষরক্ষা নেই। কারণ দেশটিতে চিকিৎসাব্যবস্থা বলতে কিছুই এখন বর্তমান নেই।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর সমর্থনে হুতি বিদ্রোহীদের দমনে এবং পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সরকারকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে দেশটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বোমা ফেলছে সৌদি সামরিক জোট। এইসব বোমা হামলায় সবসময় যে বিদ্রোহীরা মারা পড়ছে তা নয়, বরং অধিকাংশ সময় বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়ার পাশাপাশি মারা পড়ছে কোলের শিশু থেকে শুরু করে স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা।
চলতি বছর আগস্ট মাসের নয় তারিখে দেশটির সাদা প্রদেশে একটি স্কুলবাসে বোমা হামলা করে সৌদি সামরিক জোট। ওই হামলায় প্রায় ৪৩ জন মারা যায় যার অধিকাংশই স্কুলশিশু। এছাড়া সৌদি জোটের প্রতিদিনের হামলা থেকে বসবাসের বাড়িঘর, স্কুলবিল্ডিং, হাসপাতাল কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত হামলায় দেশটিতে মারা পড়েছে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ আর আহত হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার।
বাড়ির ছাদের নিচেও নিশ্চিন্তে বসবাসের উপায় নেই। বিদ্রোহ কবলিত অঞ্চলে বসবাস না করলেও বোমা যে কখনো মাথার ওপর এসে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কেউ কখনো দিতে পারবে না। বরং বিগত হামলাগুলোতে বেসামরিক লোকজনই মারা পড়েছে বেশি।
ভয়ে ভয়ে রাতটা কোনরকম বাড়িতে কাটিয়ে ভোর সকালে স্কুলে উপস্থিত হয়ে দেখা গেলো গত রাতে বিমান হামলায় স্কুলভবন মাটির সাথে মিশে গেছে।
আহত হয়ে হাসপাতালে গেলেও নিস্তার নেই হামলা থেকে। জাতিসংঘের আইনে যুদ্ধের কোনো পক্ষই হাসপাতালে হামলা করতে পারবে না বলা থাকলেও সৌদি সামরিক জোট এই আইনের থোড়াই কেয়ার করে। ইয়েমেনে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে হামলা হয়েছে। ফলে নিরাপদ কোনো জায়গা বলতে দেশটিতে আসলে কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই।
ভবিষ্যত ও মনুষ্যসভ্যতার প্রতি যে ক্ষোভ, হতাশা আর অভিমান নিয়ে ইয়েমেনের শিশুরা বড় হচ্ছে তা আগামী পৃথিবীর জন্য সুখকর কিছু বয়ে আনবে বলে কেউই বিশ্বাস করে না। তারপরও থেমে নেই সৌদি সামরিক জোট ও তার মিত্ররা।
এই দুর্যোগকালীন ইয়েমেনে সবচেয়ে বেশি যেটির দরকার ছিলো সেটি হচ্ছে খাবার। কিন্তু দুর্ভিক্ষপীড়িত ইয়েমেনে খাবার নয়, প্রতিদিন বিমান থেকে হাজার হাজার টন ওজনের বোমা ফেলা হচ্ছে, যাতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির বেসামরিক মানুষ, সর্বোপরি শিশুরা।
সাম্প্রতিক সময়ে উপর্যুপরি বিমান হামলা আর খাদ্যাভাবে শিশুদের মারা যাওয়ার হার পূর্বের চেয়ে ভয়ানকভাবে বেড়েছে। অথচ এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কেউ নেই। জাতিসংঘ তিন বার চেষ্টা করেও এই যুদ্ধ থামাতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা সামরিক অস্ত্রের তালিকা দিন দিন লম্বাই হয়েছে সৌদি আরবের। ইয়েমেনকে ঘিরে রচনা করেছে অবরোধ। যার ফলে বহির্বিশ্বের কোনো সাহায্যই পোছেনি ইয়েমেনের এই শিশুদের কাছে। ফলে ধীরে ধীরে কেবল বড় হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। হয়তো আপনি এই লেখাটা পড়তে পড়তেই ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিমান হামলায় মারা পড়লো কোনো শিশু!
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.
360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.
Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.