বিজ্ঞানীদেরও চমকে দিয়েছে ভয়ংকর এই সুনামি!

ইতিহাসের ভয়ংকর ভুমিকম্পের একটি। এরপরই সুনামির আঘাত। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা গিয়ে টেকেছে ১২৩৪-তে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। চারদিকেই ধ্বংসস্তুপ। এখনো চলছে প্রাণের খোঁজে উদ্ধার কাজ। 

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের একজন মৎসজীবী রবি। খুব কাছ থেকে যারা এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি জানালেন, জোরালো ভূমিকম্পের পরই তিনি দেখেছিলেন সাগরের পানি হঠাৎ পিছিয়ে যাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে কি ঘটতে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় ছয় মিটার উঁচু পানির ঢেউ এসে তাকে ধাক্কা দিলো, তিনি গাছের সঙ্গে আঁটকে গেলেন।

ববি জানান, আমি আশ্চর্য হয়েছি। অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। ভূমিকম্পের পর কখনো এমনটা ঘটেনি। এতো উঁচুতে পানি আসবে স্বপ্নেও ভাবিনি।

ববির মতোই গত শুক্রবারে পালু শহরের ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে সৃষ্ট ঢেউয়ে বেশ চমকে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ‘এ ধরনের সুনামিতে সর্বোচ্চ এক মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হতে পারে। কিন্তু ছয় মিটার...! অন্য কিছু ঘটতে পারে।’

বিজ্ঞানীদের চমকে ওঠার কারণ অনুসন্ধান করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামি হয়। যার উচ্চতা ছিল প্রায় ছয় মিটার (২০ ফুট)।

বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, ভূতাত্ত্বিকেরা এই সুনামিকে ‘স্ট্রাইক-স্লিপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যাতে ভূত্বক পরিবর্তিত হয় অনুভূমিকভাবে। এ ধরনের নড়াচড়ায় সাধারণত সুনামি হয় না। এ ঘটনায় ওই দ্বীপের চ্যুতির পূর্ব দিকের শিলা উত্তর দিকে ঘুরে গেছে। এ ধরনের ঘটনায় সুনামি হলেও ছয় ফুট উচ্চতার ঢেউ সাধারণত দেখা দেয় না। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্পের পর বিশাল ঢেউয়ের আঘাত পালু শহরের সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, সাগরতলে যে স্থানচ্যুতি ঘটেছে, এটি উল্লেখযোগ্য হলেও তা এত বড় ঢেউ তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। তাহলে ঠিক কী কারণে এত বড় ঢেউ সৃষ্টি হলো?

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর মোহাম্মদ হায়দারজাদেহ জানান, ‘তার হিসাব অনুযায়ী ভূমিকম্পের ফলে ৪৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিকৃত হতে পারে। যার কারণে সর্বোচ্চ এক মিটার পর্যন্ত উচ্চাতায় পানি লোকালয়ে তেড়ে আসতে পারে। কিন্তু ছয় মিটার পর্যন্ত নয়, নিশ্চয় সেখানে অন্য কিছু ঘটতে পারে।’

এর দুটি কারণ দেখছেন এই প্রফেসর। তা হলো- বিশাল ভূমিধস ও উপসাগরে তৈরি ফানেল। পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝতে বাথিমেট্রিক জরিপ করতে হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে ঘটে যাওয়া গত শুক্রবারের এই সুনামিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া খবরে ১২৩৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে ৩৪ জন স্কুল শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রায় দুই লাখ মানুষ।