আপনি পড়ছেন

দু্ই হাতের কনুই পর্যন্ত নেই। নেই দু'টি পা-ও। তারপরও দমে যাননি। জীবনের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে নেই ক্লান্তি বা বিষন্নতা। স্বাভাবিক জীবন-যাপন, উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা নিয়ে সমাজের আট-দশজন মানুষের মতো তিনিও একজন। বলছি ইন্দোনেশিয়ায় জন্ম নেয়া বিকলাঙ্গ বালক আহমদ জুলকারনাইন। যিনি প্রতিনিয়ত ক্যামেরার ল্যান্সে ধারণ করছেন আকর্ষণীয় সব ছবি। মুখ দিয়ে ক্যামেরা খুলে ছবি তোলেন কনুইয়ে জমাট বাঁধা চামড়া দিয়ে। আর সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। এমন একজন মানুষের জীবন সংগ্রাম এবং সফলতা নিয়ে এই আয়োজন।

zulkarnain photographer

জীবনযুদ্ধ: আহমদ জুলকারনাইন জন্মেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তবে অন্য অনেক শিশুর মতো স্বাভাবিক জন্ম হয়নি তাঁর। জন্মলগ্ন থেকেই সে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ। তাই ছোট থেকেই কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়েছে জুলকারনাইনকে। এভাবেই পার করলেন জীবনের ২৫টি বসন্ত। পঁচিশ বছরের জীবনে হাত-পা না থাকায় বাল্যকাল থেকেই সংগ্রাম আর প্রত্যয়ই নিত্যসঙ্গী।

প্রতিবন্ধকতা জয়: সহস্র প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবনযুদ্ধে সফল হয়েছেন জুলকারনাইন। ছোটবেলা থেকেই পরিবারে তাকে নিয়ে ছিল নানা চিন্তা। কী করবে সে? হাত-পা তো নেই, তবে কী ছেলের ভবিষত অন্ধকার? এমন নানান প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বিষন্ন হয়ে পড়তেন পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনরা। অনেকে তাকে প্রতিবন্ধী বলে মশকরা করতো। এতে মনে কষ্টও পেতেন কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে ইচ্ছাশক্তি, প্রবল মনোবল আর আত্মবিশ্বাসের এক জলন্ত উদাহরণ হতে চলেছেন জুলকারনাইন। সকল বঞ্চনা উপেক্ষা করে, জীবনের প্রতিটি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পৌঁছেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বিকলাঙ্গ হয়েও চমৎকার ছবি তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে। রীতিমত ছবি তোলার গুরুর খেতাব পেয়েছেন ২৫ বছরের দুরন্ত তরুণ জুলকারনাইন।

zulkarnain photographer 2

যেভাবে এলেন ফটোগ্রাফিতে: এক সময় স্থানীয় একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে কাজ করতেন জুলকারনাইন। সেখানে ছিল একটি ফটোগ্রাফি সার্ভিসও। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ক্যাফেটিতে ছবি তুলতে আসতেন। আর তা দেখেই ছবি তোলার প্রেমে পড়েন তিনি। পরিবার ততটা স্বচ্ছল ছিল না তাঁর। আর তাই ক্যামেরা কেনার টাকাও ছিল না। একটা সময় ধার করা টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন একটি ক্যামেরা এবং নেমে পড়েন ছবি তোলার কাজে। প্রথম প্রথম নিজের এলাকার জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্ডের ছবি তুলতেন তিনি। এক সময় পেশাদার ফটোগ্রাফার হয়ে উঠেন। শুধু সমতলেই নয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার উঁচুতেও ছবি তুলেছেন। একবার একটি জলপ্রপাতের ছবি তুলতে গিয়ে পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতাও হয়েছিল তাঁর। প্রাণে বেঁচে গেলেও পেয়েছিলেন চোট।

জুলকারনাইন এখন কোম্পানির মালিক: ভালবাসা ও শখের বসে যে ছবি তোলা শুরু করেছিলেন তা এখন পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন নিজের কোম্পানি। নাম দিয়েছেন ‘ব্যাঙ ডেজোয়েল’। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমেও ছাপা হচ্ছে তাঁর তোলা ছবি। আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জুলকারনাইন বলেন, “যদি সেরা হতে চাও, তাহলে তোমার সীমাবদ্ধতাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। তুমি যা করো সেখানে সেরা হতে তোমাকে নিখুঁত হতে হবে না।”

তাঁর ছবি এখন ভাইরাল: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ছবি এখন ভাইরাল। হাত-পা না থেকেও যে এত ভাল ছবি তুলতে পারেন সেজন্যই রাতারাতি তাঁর দৃষ্টিনন্দন ফটোগ্রাফিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। তাকে এখন পুরো বিশ্বের মানুষই চিনে এক নামে। ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে সমস্ত সামাজিক মাধ্যমেই তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। যে ছেলেটির জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল পরিবার, সে ছেলেটিই এখন অনেক বিজ্ঞ লোকের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কথায় ফুটে উঠে অনুপ্রেরণা: যারা ফটোগ্রাফি শিখতে চান, তাঁদের সাহায্য করতে চান জুলকারনাইন। তিনি বলেন, যারা স্বাভাবিক, শুধু তাদের কাছ থেকেই নয়- যারা ভিন্নভাবে সক্ষম তাঁদের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা নেয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। তিনি বলেন, আমি আমার সীমাবদ্ধতা নিয়ে গর্বিত। আমি ডিজাবলড; কিন্তু পরাজিত নই।

রিফাত কান্তি সেন, ইউএনবি।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.