‘সহনীয় মাত্রা’র কথা বলে ৫১ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি!

শেষ কয়েকদিনে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছিল, দেশে জ্বালানির দাম বাড়তে চলেছে। তবে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গিয়েছিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর কথায়। গতকাল শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছিলেন, দাম বাড়ানো হলেও তা ‘সহনীয় পর্যায়ে’ রাখা হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

এরপর রাত ১০টার দিকে ঘোষণা আসে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। এতে দেখা যায় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে পেট্রোল ও অকটেনের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৫১.১৬ ও ৫১.৬৮ শতাংশ। 

শুক্রবার সকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ‘যৌক্তিক পর্যায়ে’ নিয়ে আসার সময় এসেছে। যেহেতু বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী, তাই এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা করে এগুতে হবে। কারণ এর সরাসরি প্রভাব পড়ে জনগণের ওপর। তাই ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন এগুলোর দাম যেন একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে, দেশ ও দশের কথা চিন্তা করে আমরা এমনই একটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব।

দাম বেড়েছে সব জ্বালানি তেলের

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে জনজীবনে যে প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে সরকারও ‘চিন্তাভাবনা’ করছে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। এজন্য আমরা বিআরটিএ, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক মালিক সমিতি সবার সাথে বসে আলোচনা করে ঠিক করার চিন্তা করছি। সবমিলিয়ে তেলের দামের খুব বেশি পরিবর্তন হবে না বলে আমরা হিসাব করে দেখেছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার তেলের দাম বাড়ানোর কথা ভাবেনি। এখন অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা এডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।

সরকার যে চার ধরনের তেলের দাম বাড়িয়েছে, তার মধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর। তখন প্রতি লিটারে দাম ৬৫ টাকা থেকে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৮০ টাকা। নয় মাসের মাথায় তা এক লাফে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকায় নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অকটেন ও পেট্রোলের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল। সময়ের হিসাবে ৬ বছর ২ মাস পর বাড়ল এ দুই তেলের দাম।

সরকারি হিসেবে বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিক্রি করা মোট জ্বালানি তেলের ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে পরিবহন খাত। প্রায় ১৬ শতাংশ ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। এছাড়া শিল্প খাতে ৭ শতাংশ ও বিদ্যুৎ খাতে ১০ শতাংশ তেল ব্যবহৃত হয়।