আপনি পড়ছেন

রাজধানীর রামপুরার মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা জাহিদ আকন গলির মোড়ের দোকানে গেলেন চাল কিনতে। বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদ যে চাল খান, সেটি গত সপ্তাহেও কিনেছেন ৫৪ টাকা কেজি দরে। এখন দোকানি সেই চালের দাম বলছেন ৬০ টাকা।

price hike newনিত্যপণ্যের দামে কোনো লাগাম নেই

কিছুটা কমের আশায় জাহিদ গেলেন রামপুরা কাঁচাবাজারে। সেখানকার চালের দোকানগুলোতেও একই দাম। ‘গলির দোকানে যে দাম, বাজারের বড় দোকানেও সেই দাম’- কথাটি বলতেই দোকানিও কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠেই জবাব দিলেন, ৬০ টাকার নিচে কোনো চাল নেই।

বাধ্য হয়ে ৬০ টাকা করেই লতা আটাশ নামের মোটা চাল কিনলেন জাহিদ। এক সপ্তাহের মাথায় কেজিতে চালের দাম বেশি দিতে হলো ৬ টাকা। ডিম কিনতে গিয়েও তিনি দেখলেন, হালি ৫০ টাকা।

শুধু চাল বা ডিমই নয়, মাছ, মুরগী, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনি, আটা, পেঁয়াজ-মরিচসহ এমন কোনো পণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। এতে জাহিদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের বাজারে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠার দশা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের বাড়বাড়ন্ত অবস্থার মধ্যেই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এতে আরও হুহু করে বাড়ছে পণ্যমূল্য।

রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব রাখে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি)। সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর গত এক সপ্তাহে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ, আদা, এলাচ, ব্রয়লার মুরগি, চিনি ও ডিমের দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে বাজারে কাঁচা মরিচ, শাকসবজি, মাছ, দেশি মুরগি, ফলমূলসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম আরও বেশি। এমনকি গুঁড়া দুধ, সাবান, নারকেল-সরিষার তেল ও বিভিন্ন প্রসাধনীর দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। টিসিবির তথ্যে থাকে না এসব পণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব।

টিসিবি বলছে, এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম ৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকা কেজি দরে, যা আগে ৫০ টাকার মধ্যে ছিল। চিকন চালের দামও ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা হয়েছে।

তবে বাজারের বাস্তব চিত্রে চালের দাম আরও বেশি। মোটা চালই বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়। চিকন চাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা শহীদুল্লাহ মিয়া মোটা আউশ চাল খান। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে চাল কিনেছি ৫২ টাকায়। সেটা শনিবার রাতে কিনেছি ৬০ টাকা কেজি।

পণ্যের দামে লাগাম নেই: পণ্যের দাম বাড়ার কোনো লাগাম নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। এতদিন দুই কেজির প্যাকেট আটা কেনা যেত ১০০ টাকায়। এখন আরও ১০ টাকা বেড়েছে দাম। খোলা আটার দামও পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীরা। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও তেলের দাম বেড়ে গেছে বাজারে। শনিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৮৫ থেকে ১৯০ এবং পাম অয়েল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বোতলজাত তেলের গায়ে লেখা থাকা মূল্যের চেয়েও লিটারে পাঁচ টাকা বেশি নিচ্ছেন অনেক দোকানি।

একইভাবে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পরই বেড়েছে চিনির দামও। চলতি মাসের শুরুতে চিনির দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীরা। এ ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও এরই মধ্যে বাজারে দাম বেড়েছে চিনির। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা চিনির কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

দাম নিয়ে বিভ্রান্তি: নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে সরকারি সংস্থাগুলোই। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে রয়েছে একইদিনে বাজারদরের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। খুচরা বাজারে পণ্যের দামের ক্ষেত্রে এক প্রতিষ্ঠানের তালিকারে সঙ্গে মিল নেই অন্যটির তালিকার।

তিন প্রতিষ্ঠানের তালিকার সঙ্গে বাস্তবে বাজারের দামেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। বাজারে নিত্যপণ্যের প্রকৃত দরের চেয়ে কম দেখাচ্ছে এই সরকারি সংস্থাগুলো । ফলে তাদের নিত্যপণ্যের দরের তালিকা বিভ্রান্তি তৈরি করছে মানুষের মাঝে ।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীর বাজারদর দেওয়া আছে ১১ আগস্টের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ছুটির দিনে বাজারদর হালনাগাদ করা হয় না। ১১ আগস্টের তালিকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দর দেওয়া আছে ১৮৫-১৯০ টাকা। এই একই পণ্য একই দিন টিসিবির বাজারদরের তালিকায় ১৭০-১৯০ টাকা লিখে রাখা আছে।

আবার ব্রয়লার মুরগি সিটি করপোরেশনের বাজারদরে দেওয়া ১৭৫-১৮৫ টাকা। তবে ওই দিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা। বাজারদর নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এই হ য ব র ল পরিস্থিতিতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।

এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিদিন বাজারে গিয়ে পণ্যের দর জেনে তালিকা প্রকাশ করি। কোন বাজারে কোন পণ্যের দাম কত এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারের পার্থক্যও তুলে ধরি। তবে অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে।

দামের পার্থক্য নিয়ে টিসিবির চেয়ারম্যান মো. আরিফুল হাসান বলেন, রাজধানীর কয়েকটি বাজার থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিদিন বাজারদরের তালিকা প্রকাশ করি আমরা। পণ্যের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দামকে গড় করে তালিকা করি। তবে সব বাজারের তথ্য সংগ্রহ করা টিসিবির পক্ষে কঠিন। এ ছাড়া বাজারভেদে দামের হেরফেরও ঘটে থাকে।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিকে। তাছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় বেশকিছু পণ্যের আমদানি-রপ্তানিতে দাম বেড়ে গেছে। 

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল চালের দাম। এরপর তেল, চিনির দাম বেড়েছে এবং শেষে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। এ নিয়ে বিক্রেতারা নানা অজুহাত তুললেও ক্রেতাদের অভিযোগ অভিযোগ, জ্বালানি তেলের বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট করে সাধারন মানুষের পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি চালের আড়তে আলেক চাঁন রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আলেক হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের কারণে ট্রাকভাড়া বেড়েছে। আগে যেখানে কুষ্টিয়া থেকে ১৭ হাজার টাকায় বড় ট্রাক আসতো, সেটা এখন ২৫ হাজার লাগছে।

তবে মালিবাগ কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা একটি কোম্পানির বিক্রয়কর্মী মাইনুল বলেন, ব্যবসায়ীরা যতই যুক্তি দেখাক, জিনিসপত্রের দাম নিয়ে তারা সবাই মিলে সিন্ডিকেট করছে। দেশে লুটপাট চলছে। এমন চলতে থাকলে নিম্নআয়ের মানুষকে পথে বসতে হবে। চলে যেতে হবে শহর ছেড়ে। মাসের বেতন দিয়ে মাসের অর্ধেক চলছে মানুষের।

দেখার যেন কেউ নেই: মানুষের অভিযোগ, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যে ধরনের নজরদারি দরকার, সেটি নেই। নজরদারির যে চর্চা চলছে, সেটি লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয়।

এ নিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যৌক্তিক কারণেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যৌক্তিকভাবে যতটুকু বেড়েছে, ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তারা হয়ে গেছেন মুনাফাখোর।

তিনি বলেন, দেশে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ঠেকাতে কিছু আইন বিদ্যমান। তবে সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন না থাকায় দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় সরকারকে অত্যন্ত কঠোর না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠবে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.