হলি আর্টিজান: এখনো বাজে বেদনা হয়ে

এক বছর হয়ে গেলো। তারপরও হলি আর্টিজান হামলা বাংলাদেশের বুকে যে ক্ষত তৈরি করেছিলো, তা এখনো শুকায়নি। বরং এক বছরে সেই ক্ষতটা আরো গভীর হয়েছে। ২০১৬ সালের দুঃসহ পহেলা জুলাই রাতটা এখনো বাংলাদেশে বেজে উঠে বেদনা হয়ে।

ঢাকার অভিজাত পাড়া গুলশান দুই নম্বরের ৭৯ নম্বর রোডে ছিলো হলি আর্টিজান বেকারিটি। সেখানে গত বছরের পহেলা জুলাই রাতের প্রথম ভাগে ভয়াবহ জিম্মির ঘটনা ঘটে। সেই রাতে সন্ত্রাসীরা ১৭জন বিদেশিসহ মোট ২০ জনকে মেরে ফেলে। পরের দিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের অভিযানে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর এক ঘটনার।

কমান্ডোদের অভিযানে সন্ত্রাসীদের মৃত্যু হয়। তাদের সঙ্গে মৃত্যু হয় আরো অনেক কিছুর। যার জের এখনো টানছে বাংলাদেশ। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বার্ষিক এডিপিতেও। সব মিলিয়ে হলি আর্টিজান হামলা ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা।

ওই ঘটনার পর গুলশান দুই নম্বরের ইতিহাসটাই যেনো বদলে গেছে। ঘটনার পর এক বছর চলে গেলেও গুলশান দু্ই নম্বরের ৭৯ রোডটা এখনো প্রাণ ফিরে পায়নি। জায়গাটা আর আগের মতো প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠেনি। ওই এলাকায় বিদেশিদের আনাগোনা ছিলো সব সময়। কিন্তু হামলার পর থেকে সেখানে আর বিদেশিদের সেভাবে দেখা যায় না। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগে কাজ করতে বিদেশির আগ্রহও গেছে কমে।

হলি আর্টিজানে ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছিলো পুরো বিশ্বকেই। ঘটনার সময়ই বিশ্বের বড় বড় নেতারা জিম্মি হওয়াদের জীবিত উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। তৎকালীন মার্কিন বারাক ওবামা ঘটনার সময় বারবার হালনাগাদ তথ্য খোঁজ করেছেন।

হলি আর্টিজানের ঘটনার পর বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায় সারা বিশ্বে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করতে থাকে। দেশজুড়ে পরিচালিত হয় সন্ত্রাস বিরোধী নানা অভিযান।

এ দিকে হলি আর্টিজানের সেই ঘটনার পর গুলশান দুই নম্বর এলাকার বাড়ি ভাড়া কমে গেছে। এমন কি ওই অঞ্চলে ভাড়াটিয়াদের আনাগোনাও আর নেই। ওই এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া অর্ধেক করে দেয়ার পরও সেখানে তেমন কোনো ভাড়াটিয়া আসছেন না। ফলে মাসের পর বহু অ্যাপার্টমেন্ট ফাঁকা পড়ে আছে।

হলি আর্টিজানের ঘটনা যে ক্ষত তৈরি করে দিয়ে গেছে, তা শুকাতে নিশ্চয় আরো সময় লাগবে। তারপরও, বহুদিন পরও নিশ্চয় হলি আর্টিজান নামটা বাংলাদেশের মানুষের মনে বাজিয়ে যাবে বেদনার করুণ ভায়োলিন।