হলি আর্টিজান স্মরণে...

২০১৬ সালের ১ জুলাই, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে বিভীষিকা নেমে এসেছিল গুলশান দুইয়ের হলি আর্টিজান বেকারিতে। অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকজন নাগরিককে জিম্মি করেছিল সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পর কাটে সেই এই রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকট। তবে তার আগেই দুই পুলিশ সদস্য, ১৭জন বিদেশি নাগরিকসহ মোট ২২ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। আজ বাংলাদেশ শ্রদ্ধার সাথে সেই ঝড়ে যাওয়া সেই আত্মাগুলোর শান্তি কামনা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জীবনবাজি অভিযানে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গিয়েছিল। তবে তার আগে ২২টি প্রাণ ঝড়ে যাওয়ার ঘটনায় বড় মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এক বছর পূর্তিতে সেই দিনটা আজ স্মরণ করছে বাংলাদেশ।

আজ সকাল থেকেই অনেকটা থমথমে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়ক। সকাল থেকে হলি আর্টিজানে গিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন বিভিন্নজন। জনসাধারণকে অবশ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ৭৯ নম্বর সড়কে যাওয়ার তিনটি পথেই ব্যারিকেড বসানো হয়েছে।

নিদৃষ্ট কিছু গাড়ীকেই ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমের কর্মীদেরও ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়কের মোড়ে রয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা।

সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ২২ জনের মধ্যে জাপানের নাগরিক ছিলেন সাতজন। আজ সকাল সাতটার দিকে হলি আর্টিজানের ভেতরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত। ইতালির রাষ্ট্রদূতেরও যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে ইতালি নাগরিক ছিলেন নয়জন।

এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নব্য জেএমবি নামে পরিচিত সংগঠন এই হামলা চালিয়েছিল বলে জানা যায়। নব্য জেএমবির প্রধান সংগঠক ছিলেন র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে নিহত হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী।

তার সাথে এই হামলায় সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, শরিফুল ইসলাম খালেদ, মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ও আবু রায়হান ওরফে তারেক প্রত্যাক্ষভাবে জড়িত ছিল বলে জানা যায়।

হামলার প্রায় চার মাস আগ থেকে পরিকল্পনা চলছিল তাদের মধ্যে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ফুটছড়ি চরে নিয়ে হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন মারজান। সেখানে ক্যাম্প করে ২৮ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায় জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পর। মেজর (অব.) জাহিদ ইসলাম ছিলেন প্রধান প্রশিক্ষক। তার সাথে তারেক বোমা বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ দেন।

প্রশিক্ষণ শেষে চূড়ান্ত হামলার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র নিয়ে আসেন সন্ত্রাসীরা। সীমান্ত দিয়ে চারটি পিস্তল ও পাঁচটি একে-২২ রাইফেল আনা হয় বলে জবানবন্দি দিয়েছে জঙ্গিরা। এসময় যশোরের চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে বোমা নিয়ে আসা হয় এবং অস্ত্র সংগ্রহের পরে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তামিম চৌধুরী বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেয় বলে জানান জঙ্গিরা।

মে মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ই-ব্লকে পাঁচ কক্ষের একটি বাসা ভাড়া করেন সন্ত্রাসীরা। শেওয়াড়াপাড়াতেও একটি বাসা ভাড়া নেন সন্ত্রাসীরা। পরে রূপনগর ও নরারয়ণগঞ্জেও বাসা ভাড়া করেন জঙ্গিরা। এই বাসাগুলোতে বসে হলি আর্টিজানকে টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা করা হয়।

পরে ১ জুলাই সকাল ১০টার দিকে প্রত্যেকের ব্যাগে একটি করে একে-২২ রাইফেল, একটি করে পিস্তল, একটি করে চাপাতি এবং বিপুল পরিমাণ গুলি নিয়ে হামলার জন্য বেড়িয়ে পরেন পাঁচজন সন্ত্রাসী। বসুন্ধরার বাসায় জোহরের নামাজ পড়েন পাঁচজন। সেখান থেকে হলি আর্টিজানে ঢুকে পড়েন তারা।