মালয়েশিয়ায় ৫১৫ বাংলাদেশি আটক: কী আছে তাদের ভাগ্যে?

সঠিক সময়ে কাজের অনুমতিপত্র সংগ্রহ না করায় মালয়েশিয়ায় ১০৩৫ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে ৫১৫ জনই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার দ্য স্টার পত্রিকা।

দেশটির ১৫৫টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই বিপুল সংখ্যক অভিবাসীকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এদের মধ্যে ৫১৫ জন বাংলাদেশি ছাড়াও, ১৩৫ জন ইন্দোনেশীয়, ১০২ জন ফিলিপিনো, ৫০ জন থাই ও দুজন ভিয়েতনামি নাগরিক আছেন।

এর আগে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বৈধ কাগজপত্রহীন শ্রমিকদেরকে পুনরায় নিয়োগের উদ্দেশ্যে গত চার মাস ধরে এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) বা সাময়িক অনুমতি পত্রের আবেদন আহ্বান করে মালয়েশিয়ান অভিবাসন দফতর। কিন্তু দেশটিতে অবস্থানরত খুব কম সংখ্যক অবৈধ শ্রমিকই এই আহ্বানে সাড়া দেয়।

৩০ জুন এই আবেদন পত্র গ্রহণের সময় শেষ হলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। এই সময় বৈধ কাগজপত্রহীন শ্রমিকদেরকে গ্রেফতার করা ছাড়াও ১৬ জন চাকরিদাতাকেও আটক করা হয়।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অবৈধ অভিবাসী নিয়ে এবার বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। যদিও পূর্বেও অবৈধ শ্রমিকদের নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করেছে দেশটি।

আটক এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসীদের ভাগ্যে কী আছে -এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো মালয়েশিয়ার চাকরিরত কয়েকজন বৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে।

এঁদের মধ্য হতে কুয়ালালামপুরের একটি রেস্টুরেন্টে কর্মরত মোঃ জাকারিয়া আলম জানান, আটক এইসব অবৈধ অভিবাসীদের সামনে খুবই খারাপ সময় আসছে। বিশেষ করে সাধারণ পুলিশের বদলে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে তারা আটক হওয়ায় এই শঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আটকের পর তাদের সবাইকেই ভয়ঙ্কর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

ইমিগ্রেশন পুলিশের নির্যাতনে প্রায়ই অনেক শ্রমিক পঙ্গুত্বের জীবন বরণ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায়ই পুলিশের নির্যাতনের কারণে অনেকে পঙ্গু হয়ে এ দেশ ত্যাগ করেন।

আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেলো, অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। দূতাবাস থেকে আটক শ্রমিকদের ছাড়িয়ে নিতে বেশ দৌড়ঝাঁপও করা হয়। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ দূতাবাস।

বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মীরা এখানকার শ্রমিকদের কোনো সাহায্যই করেন না উল্লেখ করে প্রবাসীরা বলেন, বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের ব্যাপারে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা এমনিতেই কমে আসতো। এছাড়া প্রবাসী শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি খেয়াল রেখে প্রতিটি সমস্যায় এগিয়ে আসলে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশের নির্যাতনও রোধ করা সম্ভব।

আটক এই ৫১৫ জন শ্রমিকের ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাস তড়িৎ কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা এখন আসলে সেটাই দেখার বিষয়। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বৈধ-অবৈধ শ্রমিকরাও দূতাবাসের হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।