সার্বিয়াকে উড়িয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল

ম্যাচজুড়ে অসাধারণ সব সুযোগ পেলো সার্বিয়া। কিন্তু তারা কাজে লাগাতে পারলো না একটা সুযোগও। অন্য দিকে নেইমার বেশ কিছু সুযোগ মিস করলেও ব্রাজিল দুইবার কাঁপিয়ে দিলো সার্বিয়ার জাল। পৌলিনহো ও থিয়াগো সিলভার দারুণ দুটি গোলে ভর করে সার্বিয়াকে উড়িয়ে গ্রুপসেরা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে গেলো ব্রাজিল।

‘ই’ গ্রুপের অন্য ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করেছে সুইজারল্যান্ড ও কোস্টারিকা। ফলে পরের রাইন্ডে ব্রাজিলের সঙ্গী হলো সুইসরা। শেষ ১৬তে ব্রাজিলকে এখন খেলতে হবে মেক্সিকোর বিপক্ষে। আর সুইজারল্যান্ডের প্রতিপক্ষ সুইডেন।

এ দিকে, সার্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতলেও ম্যাচের মাত্র নবম মিনিটেই একটা ধাক্কা খায় ব্রাজিল। চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তাদের রক্ষণের অন্যতম প্রধান প্রহরী মার্সেলো। তার বদলে মাঠে নামেন ফিলিপে লুইস। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে মার্সেলোকে।

মার্সেলোর মাঠে না থাকতে পারা অবশ্য ব্রাজিলকে দমাতে পারেনি। শুরু থেকে বলের নিয়ন্ত্রণে সার্বিয়াকে পিছনে ফেলে দেয়া ব্রাজিল এগিয়ে যায় স্কোরশিটেও।

ফিলিপে কোতিনহোর অসাধারণ এক পাস থেকে টোকা দিয়ে গোল করেন সার্বিয়ার গোলবারের দিকে এগোতে থাকা পৌলিনহো। শুরু থেকেই ব্রাজিলের খেলায় যে মোহনীয় সৌন্দর্য্যের ছটা দেখা যাচ্ছিলো, তাতে গোলটা হয়ে উঠেছিলো তাদের সমীচীন ও যৌক্তিক পাওনা। বার্সেলোনার দুই তারকার প্রচেষ্টায় সেটাই পেয়ে যায় তারা।

ব্রাজিলের বর্তমান কোচ তিতের অধীনে এটি পৌলিনহোর অষ্টম গোল। তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন কেবল নেইমার ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। তারা দুজনই ১০টি করে গোল করেছেন। সার্বিয়ার বিপক্ষে ৩৬ মিনিটের গোলটি করে তাদের আরো কাছে চলে যান বার্সেলোনা তারকা।

ব্রাজিলের এই গোলের পরপরই জোরালো এক আক্রমণ করে সার্বিয়া। কিন্তু কর্নারের বিনিময়ে আক্রমণটি নস্যাৎ করে দেন মার্সেলোর বদলে নামা ফিলিপে লুইস। এই কর্নার থেকে দারুণ এক সুযোগ পায় সার্বিয়া। কিন্তু দুসান টেডিচের বাঁ পায়ের জোরালো শট ব্রাজিলের গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়।

৪০তম মিনিটে সার্বিয়ার এই মিসের পরের চার মিনিটে দুই দল দুটি ফাউল করে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত এক মিনিটে গিয়ে দারুণ এক সুযোগ পান নেইমার। কিন্তু লুইসের দেয়া বলটি গোলে পরিণত করতে ব্যর্থ হন পিএসজি তারকা। ডান পায়ের শটটি তিনি তুলে দেন গোলবারের উপর দিয়ে। প্রথমার্ধ শেষ হয় ব্রাজিলের ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায়।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম তিন মিনিটেই তিনটি ফাউল করেন দুই দলের ফুটবলারা। প্রথম মিনিটে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে সুযোগ হারান নেইমার। ম্যাচে তখন বিরাজ করছিলো চরম উত্তেজনা। ৫৬ থেকে ৫৮ মিনিটে সেই উত্তেজনা উঠে যায় চরমে। এ সময় টানা তিনটি কর্নার পায় ব্রাজিল। এর মধ্যে, ৫৭ মিনিটে কোতিনহোর দেয়া পাস থেকে দারুণ এক সুযোগ পান নেইমার। কিন্তু আবার হতাশ করেন তিনি।

৬১ থেকে ৬৫ মিনিটে চারটি সুযোগ তৈরি করে সার্বিয়া। এ সময় ব্রাজিলের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় তারা। কিন্তু অ্যাডেম জাজিচ দুইবার সুযোগগুলোকে দারুণ পরিণতি দিতে ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হন টেডিচ ও ম্যালিনকোভিচ সেভিচও।

৬৬ মিনিটে গিয়ে প্রথম গোল দেয়া পৌলিনহোকে তুলে নেন তিতে। তার বদলে নামেন ফার্নান্দিনহো। এই পরিবর্তন যেনো ভাগ্যই বদলে দেয় ব্রাজিলের। ৬৮ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া ক্রসে হেড করে গোল করেন থিয়াগো সিলভা। ম্যাচে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় ব্রাজিলের অসাধারণ আধিপত্য।

৭৮ মিনিটে আরো একটা গোলের সুযোগ পায় ব্রাজিল। কিন্তু ফার্নান্দিনহোর পাস গোলবারের উপর দিয়ে মেরে দেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্যাসমিরো। পরের মিনিটেই ব্রাজিলের পিলে কাঁপিয়ে দেয় সার্বিয়া। আন্দ্রেজা জিভকোভিজচের ক্রস বক্সের মাঝামাঝিতে পেয়েও তা উপর দিয়ে মেরে দেন নেমানজা মেটিচ। ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটেও চলতে থাকে দুই দলের আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ। কিন্তু আর গোল হয়নি। ২-০ গোলের ব্যবধানে জিতে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।

জিতলে বা ড্র করলে পরের রাউন্ড নিশ্চিত আর হারলে এবং কোস্টারিকার বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড জিতলে বিদায়; এমন সমীকরণ নিয়ে সার্বিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে ব্রাজিল। জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ড, ড্র করলেও দ্বিতীয় রাউন্ডের সুযোগ থাকবে, যদি সুইজারল্যান্ড অন্তত এক গোলের ব্যাবধানে হারে, আর হারলে বিদায়; এমন সম্ভাবনা নিয়ে নামে সার্বিয়া।

টানা ১৩ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে এই ম্যাচটি খেলতে নামে ব্রাজিল। আগের ১৩ ম্যাচে মাত্র তারা হজম করে মাত্র তিনটি গোল। কোস্টারিকার বিপক্ষে জেতা একাদশেই এই ম্যাচে ভরসা করেন ব্রাজিলের কোচ। অন্য দিকে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে সার্বিয়া। এতো পরিবর্তনও অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিতে পারলো না!