নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সাফল্যে ভরা বছর কাটালো বাংলাদেশ। এ বছরই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন মাশরাফিরা। এ বছরই পাকিস্তান-ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে দেশের মাটিতে হারানোর স্বাদ পেয়েছেন সমর্থকরা। এ বছরই উঠে এসেছেন মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকারের মতো ক্রিকেটার। ২০১৫ সাল আসলে বাংলাদেশের জন্য সোনায় মোড়ানো বছর।

এ বছরই প্রথমবার ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তানের উপরে উঠে যায় বাংলাদেশ। র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলের একটি হয়ে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলাও নিশ্চিত হয় এ বছর। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির প্রমাণ হিসেবেই নিয়েছে বিশ্ব।

spectators of bangladesh with national flag

এ বছর মোট ১৮টি ওয়ানডে খেলে ১৩টিতেই জিতেছেন মাশরাফিরা। পাঁচ টেস্টে এসেছে চার চারটি ড্র। যদিও বৃষ্টির কারণে কয়েকটি ম্যাচ খেলাই হয়নি পুরোপুরি। তাতে কী! পরিসংখ্যানে তো লেখা আছে ড্র-ই। এই সাফল্যের তুলনায় টি-টোয়েন্টি রেকর্ডটা অবশ্য একটু মন খারাপ করে দেয়ার মতো। এ বছর বাংলাদেশ মোট পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে। তার মধ্যে জয় এসেছে মাত্র দুটি ম্যাচে। বাকি তিনটিই হারতে হয়েছে। এমনকি হারতে হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ম্যাচেও। যা ছিলো বছরের শেষ ম্যাচ।

তারপরও ২০১৫ সাল তর্কাতীতভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেট বছর। এ বছরের আগে মোট ২৯৪ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৮৫টি ম্যাচে। জয়-পরাজয়ের আনুপাতিক হারটা কেমন বেখাপ্পা, তাই না?

২০১৫ সালটা এমন সোনায় মোড়ানো হবে, বছরের শুরুটা কিন্তু সে রকম আভাস দেয়নি। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ হেরে বসে বাংলাদেশ। তখন তো মনে হয়েছিলো বিশ্বকাপটা বোধহয় চরম লজ্জা নিয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু আসলে তা হয়নি। আফাগনিস্তানের পর স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ উঠে গিয়েছিলো কোয়ার্টার ফাইনালে। ভারতের বিপক্ষে বিতর্কিত আম্পায়ারিং না হলে অন্য রকম কিছুও হতে পারতো।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ওয়ানডে ব্যাটসম্যান

নাম ম্যাচ রান সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি হাফ সেঞ্চুরি
মুশফিকুর রহিম ১৮ ৭৬৭ ১০৭
তামিম ইকবাল ১৮ ৭৪২ ১৩২
সৌম্য সরকার ১৫ ৬৭২ ১২৭*
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১৫ ৫০৬ ১২৮*
সাকিব আল হাসান ১৬ ৪২১ ৬৩

 

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যই ছিলো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠা। এ ছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করাটাও ছিলো বাংলাদেশের বিরাট প্রাপ্তি। বিশ্বকাপের আগে ফর্মহীনতায় ভোগা রিয়াদ বিশ্বকাপে দারুণভাবে জ্বলে উঠেন এবং রাতারাতি বিশ্ব তারকায় পরিণত হন।

বিশ্বকাপ সাফল্য শেষে দেশে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ সিরিজ জয়ের গৌরবে দেশবাসীকে গর্বিত করেছেন মাশরাফিরা। অথচ ওই জয়ের আগের ১৬ বছরে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো জয়-ই ছিলো না! ভাবা যায়? পরপর তিন ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছে, সময় এখন আমাদের!

পাকিস্তানকে নিয়ে ছেলেখেলা করার পর ভারতকেও একই কায়দায় ‘ধরে’ ফেলে বাংলাদেশ। ওই সিরিজেই বিস্ময় ভাণ্ডার নিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষেক ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট নেয়ার পরের ম্যাচে নেন ছয় উইকেট; তার কাছেই সিরিজ হেরে বসে ভারত।

বছর শেষেও নিজের বোলিংয়ের ধার ধরে রাখেন মুস্তাফিজ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের একটিতে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে করেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ওয়ানডে বোলার

নাম ম্যাচ উইকেট সেরা বোলিং চার উইকেট পাঁচ উইকেট
মুস্তাফিজুর রহমান ২৬ ৬/৪৩
সাকিব আল হাসান ১৬ ২৪ ৫/৪৭
মাশরাফি বিন মর্তুজা ১৬ ২১ ৩/২০
রুবেল হোসেন ১৪ ১৮ ৪/৫৩
নাসির হোসেন ১৫ ১৬ ৩/২৬

 

মুস্তাফিজের আবির্ভারের পরের সিরিজে বাংলাদেশের সামনে নাস্তানাবুদ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে যায় তারা। পাকিস্তান- ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারানোর পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। সেই প্রতিষ্ঠার নতুন প্রকাশের সম্ভাবনা ছিলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিরিজটি স্থগিত হয়ে যায়। নিরাপত্তা শঙ্কার কথা প্রকাশ করে সিরিজ বাতিল করে অজিরা।

বছরের শেষে এসে নিরাপত্তা জনিত সমস্যার কারণে আলোচনায় উঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট। সাফল্যের সমান্তরালে আসা এই আলোচনা দারুণভাবে ব্যথিত করে তুলে বাংলাদেশ সমর্থকদের। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির পরও বাংলাদেশে আসেনি অস্ট্রেলিয়া। যদিও তারা পরে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে। একই কারণে পরপর দুইবার সিরিজ পিছিয়ে দিয়ে সিরিজ স্থগিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলও।

জয় পরাজয়ের খতিয়ান

ফরম্যাট ম্যাচ জয় পরাজয় ড্র
টেস্ট
ওয়ানডে ১৮ ১৩
টি-টোয়েন্টি

 

নিরাপত্তার কারণে এই দুই দল সফরে না এলেও জিম্বাবুয়ে ঠিকই ভরসা করেছে বাংলাদেশের উপর। জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৯ দল এবং জাতীয় নারী দল; এই তিন দলকে প্রায় এক সাথেই বাংলাদেশে পাঠিয়েছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড। কোনো রকম নিরাপত্তা ঝুঁকি ছাড়াই বাংলাদেশ সফর করছে তারা। এ জন্য জিম্বাবুয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশের সীমিত ওভারের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সমর্থকরাও প্রাণ ভরে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাদেরকে।

বছর শেষে বাংলাদেশ জিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র হয় ১-১ ব্যাবধানে।

মূল জাতীয় দলের পাশাপাশি সাফল্য বয়ে এনেছে যুব ক্রিকেট দলও। যুব ক্রিকেটে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেশের মাটিতে হারানোর পর তাদের দেশে গিয়েও হারিয়ে এসেছে যুবরা। আগামী বছর বাংলাদেশেই অনুষ্ঠিত হবে যুব বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর। তার আগে যুব দলের দারুণ সাফল্য প্রথম কোনো বৈশ্বিক শিরোপার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে।

২০১৫ সালের সাফল্য নিশ্চিতভাবেই বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। এমনই প্রত্যাশা করছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। শেষ সিরিজের শেষ ম্যাচের পরের সংবাদ সম্মেলনে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অধিনায়ক। তার সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দলের কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহেও। ক্রিকেটের আগামীতে সাফল্য স্রোতে ভাসার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন সমর্থকরাও!

২০১৫ সালের ব্যক্তিগত সেরা ব্যাটিং- বোলিং

{tab ওয়ানডে ইনিংস}

১৭ এপ্রিল ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের খেলা ১৩২ রানের ইনিংসটিই এ বছর খেলা বাংলাদেশের সেরা ওয়ানডে ইনিংস। 

{tab টেস্ট ইনিংস}

২০১৫ সালে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ইনিংসটিও খেলেছেন তামিম ইকবাল। খুলনা টেস্টে তার করা ২০৬ রান বাংলাদেশের ইতিহাসেরই সেরা টেস্ট ইনিংস।

{tab ওয়ানডে বোলিং}

২৭ জুন ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে ৪৩ রানে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২০১৫ সালে এটাই বাংলাদেশের সেরা ওয়ানডে বোলিংয়ের রেকর্ড।

{tab টেস্ট বোলিং}

২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে ১৬৩ রান দিয়ে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এটাই বাংলাদেশের ২০১৫ সেরা টেস্ট বোলিংয়ের রেকর্ড।

{/tabs}

 

আপনি আরো পড়তে পারেন

বিজয়কে নিয়ে বিতর্ক, সামাল দিলেন অধিনায়ক

মাশরাফি: টি-টোয়েন্টিতে আমরা এখনো শক্তিশালী নই

সোনায় মোড়ানো বছর শেষ হলো যন্ত্রণায়

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.