বায়তুল মোকাররমের পিলার গায়েব করে দিলেন আ. লীগ নেতা

রাতের আঁধারে দেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মূল একটি পিলার গায়েব করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। একইসাথে পিলারের সাথে যুক্ত ১৫ ফুটের একটি দেয়ালও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা বায়তুল মোকাররমের ভার বহনকারী মূল পিলার হচ্ছে দু'টি। এই দুটি পিলারের ওপরেই মসজিদ ভবনের পুরোপুরি লোড নেয়া হয়।

মসজিদ ভবনের নিচের মার্কেটে স্ত্রীর মালিকানাধীন দোকান আয়তনে বড় করতে রাতের আঁধারে ওই দুটি পিলারের একটি ও ১৫ ফুট দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেন মো. সোহরাব হোসেন গাজী। তিনি আওয়ামী লীগের বায়তুল মোকাররম ইউনিট সভাপতি।

এই ঘটনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। গত ২৪ অক্টোবর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও মার্কেটের সিকিউরিটি সুপারভাইজার মো. নুরুল হক। তাছাড়া ঘটনা তদন্তে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

এদিকে মসজিদের ভার বহনকারী পিলার ও দেয়াল ভেঙে ফেলায় যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের জাতীয় দৈনিক আমাদের সময়।

মসজিদের পিলার ভেঙ্গে ফেলার ঘটনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন তদন্ত করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে বায়তুল মোকাররম মসজিদ-মার্কেট কমপ্লেক্সের ইলেকট্রনিক্স মার্কেটের ভেতরে বিকট শব্দ শোনা যায়। এ সময় দায়িত্ব পালনরত নৈশপ্রহরীরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু সব গেট ভেতর থেকে তালাবদ্ধ থাকায় তারা ঢুকতে ব্যর্থ হন। অনেক অনুরোধ করলেও ব্যবসায়ীদের নিয়োগ করা গার্ডরা ভেতর থেকে তালা খোলেননি।

এরপর সকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, মসজিদ ভবনের মূল লোড বহনকারী একটি পিলার অপসারণ করে নিউ সুপার মার্কেটের এইচ-৬ নম্বর দোকানের আয়তন বড় করা হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাতের আঁধারেই দোকানের ছাদে প্লাস্টার ও চুনকাম করা হয়েছে; ফ্লোরে বসানো হয়েছে টাইলস।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উপরোল্লিখিত দোকানটির ভেতরে ২৪.৭৭ বর্গফুট ব্যাসের একটি লোড বিয়ারিং পিলার ছিল। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পিলারটি অপসারণ করা হয়। এ পিলারের সঙ্গে সংযুক্ত ১৫ ফুট লোড বিয়ারিং দেয়ালটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। যে পিলারটি ভেঙে ফেলা হয়েছে এটির সমান্তরালে উত্তর পাশে আরেকটি পিলার রয়েছে। মূলত এ দুটি পিলারের উপরই মসজিদ ভবনটির লোড পড়েছে। পিলার ও দেয়াল অপসারণের ফলে মূল মসজিদ ভবনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। যে কোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব হোসেন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের যে পিলার ভেঙে গায়েব করার কথা বলছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন; প্রকৃত পক্ষে আমার দোকানে এমন কোনো পিলারের অস্তিত্বই নেই; ছিলও না। একটি মহল আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।