মিথ্যা অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা তাজ উদ্দিনকে অব্যাহতি

গত ১৭ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ২১ নেতাকে অব্যাহতি এবং ১১ জনকে নিজ আবেদনের প্রেক্ষিতে অব্যাহতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি। এর মধ্যে ধর্ম সম্পাদক তাজ উদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে। তবে তাজ উদ্দিন এই অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছেন, ভুল তথ্যের কারণে বঙ্গবন্ধু অন্তপ্রাণ হওয়া সত্বেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে বা কোন কিছুই অবগত না করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ম বহির্ভূত ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলেও মনে করেন তিনি।

তাজের এলাকার স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও বলেন, তাজ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান এবং তার বাবা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমেদের নামানুসারে নাম ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক (অব্যাহতি) তাজ উদ্দিন। যিনি শৈশব থেকেই বাবা আলহাজ্ব আবদুল মুনাফের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের ১নং ওয়ার্ড সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তাজ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র। তার রাজনীতির সক্রিয় পদচারণা শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। রিপন-রোটনের সময় তিনি সুমন-রাহাতের জহুরুল হক হল কমিটিতে সদস্য মনোনীত হন। এরপর সোহাগ-নাজমুল কমিটির সময় বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের স্বাক্ষরে হল কমিটির সহ-সভাপতি মনোনীত হন। পরে সোহাগ-জাকির কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক মনোনীত হন। সর্বশেষ জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকাসহ বঙ্গবন্ধু আদর্শে বলীয়ান হয়ে বানোয়াট অভিযোগ খণ্ডন করেই শোভন-রাব্বানী কমিটিতে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন।

তাজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনে প্রার্থী হওয়ার পরই একটি কুচক্রীমহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। একটি অখ্যাত ভূয়া অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত। পরবর্তীতে পদবঞ্চিতদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমার দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা না করেই আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমার এলাকার সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে খোঁজ নিলেই আমার রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট হবে। এসময় তিনি বেশকিছু প্রমাণাদি ও প্রত্যয়ন পত্র প্রতিবেদককে দেখান।

প্রমাণাদি ঘেঁটে দেখা যায়, যে তথ্যের ভিত্তিতে তাজকে শিবির সংশ্লিষ্ট দেখিয়ে যে নিউজটি করা হয়েছে সেখানে অনেক গড়মিল রয়েছে। তাজের বাবার নাম আবদুল মুনাফ, মাতার নাম শাহ্ জাহান বেগম। কথিত ওই ভুয়া ফর্মে বাবার নাম লেখা হয়েছে আব্দুল মোনাফ (বানানে হেরফের) এবং মাতার নাম সাজেদা বেগম (কোন মিলই নেই)। ফরমটি পূরণের তারিখ দেখানো হয়েছে ০৪.০৪.২০০৮ এবং কর্মী হওয়ার তারিখ উল্লেখ আছে ০৩.০২.০৮। মাত্র দু'মাসের ব্যবধানে তাজ কীভাবে তিনটি সম্পাদকীয় পদসহ চারটি পদে আসীন হতে পারেন সে ব্যাপারেও সন্দেহ থেকে যায়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, তাজ উদ্দিনের বাবাসহ সকলেই আমার পরিচিত। সে আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। সে ছাত্রলীগের পদ পাওয়ায় কক্সবাজারবাসী অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু তাকে মিথ্যা শিবির ট্যাগ দিয়ে অপসারণ করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমার জানামতে সে ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবেই ছাত্রলীগ করতো। তাজ শিবির সংশ্লিষ্ট নয় এমন মর্মে তিনি একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেছেন।

তাজ উদ্দিন সম্পর্কে কক্সবাজার এক (চকরিয়া -পেকুয়া) সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, তাজ উদ্দিনের বাবা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আর তাজ কোনভাবেই শিবিরের সঙ্গে জড়িত নয়। আমাদের এই অঞ্চলে কোন মন্ত্রী-মিনিস্টার নেই। তাজ পরিশ্রম করে ছাত্রলীগের একটা সম্পাদকীয় পদ পেয়েছে। এলাকার সবাই কত খুশি সেখানে ছেলেটাকে শিবির বলা হচ্ছে এটা দুঃখজনক। দলের স্বার্থেই তাকে পুণরায় বিবেচনা করা উচিত। তাজ শিবির সংশ্লিষ্ট নয় এমন মর্মে তিনিও একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের দেখভালে দায়িত্বে থাকা চার একজন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, কাউকে মিথ্যা অভিযোগে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা বিষয়টা পর্যালোচনা করবো।