আপনি পড়ছেন

মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এবং ইলিশ রক্ষায় সফলতা থাকলেও বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমাণ দিন দিন কমছে এবং কিছু সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি অনেকটা নিঃশেষ হতে চলেছে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, নির্বিচারে শিকার, নিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ মাছ ধরা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগর মৎস্যশূন্য হয়ে যেতে পারে।

catch fish in bay of bengal

সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে গবেষকরা এই মূল্যায়ন করেছেন।

বিবিসির বিশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাগরে মাছের মজুদের কোনো সঠিক হিসাব নেই, আর কী পরিমাণ মাছ ধরা যাবে তারও সীমা পরিসীমা নির্ধারিত নেই। কারণ সাগরে মৎস্য সম্পদের জরিপ গবেষণা বন্ধ ছিল প্রায় দুই দশক। ২০১৬ সালে নতুন জাহাজ আরভি মীন সন্ধানী কেনার পর জরিপ শুরু হয়েছে। সাগরে ১০ থেকে ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মহীসোপান এলাকায় এই জরিপ চালানো হয়। গত তিন বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সামুদ্রিক মাছ নিয়ে একটি প্রতিবেদন সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মেরিন ফিশারিজ সার্ভে ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরিফ উদ্দীন বলেন, ‘২০০০ সালের পর থেকে আমাদের ভেসেল বেজড যে গবেষণা সেটা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের মাধ্যমে এটা আবার শুরু করা হয়েছে। মূলত ২০১৬ সাল থেকে এটা আমরা শুরু করেছি। তিন বছরের প্রাথমিক তথ্যে আমরা দেখেছি, আমাদের সমুদ্রের সার্বিক মজুদ ঠিক থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু মাছের অতিরিক্ত আহরণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

সামুদ্রিক মৎস সম্পদের অবস্থা নিয়ে গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানী সাইদুর রহমান চৌধুরী, যিনি মৎস্যসম্পদ জরিপ জাহাজ মীন সন্ধানীর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের সঙ্গেও যুক্ত আছেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের সায়েন্টিফিক কমিউনিটির জন্য খুবই উদ্বেগের। মাছের বংশবিস্তারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রেখে দেওয়া যেটা দরকার, সেটা যদি আমরা না রাখি তাহলে পরবর্তী সিজনে বংশবৃদ্ধি হবে না। পৃথিবীর অন্যান্য সমুদ্রের যেমন গালফ অব থাইল্যান্ড অনেকটা মৎসশূন্য হয়ে গেছে। আমরা চাই না, আমাদের বঙ্গোপসাগর সে রকম মৎসশূন্য হয়ে যাক।’

মাছের যেসব প্রজাতি হুমকিতে

সামুদ্রিক মাছের মধ্যে লাক্ষা, সার্ডিন, পোয়া, লইট্যা, ফলি, চান্দা, হরিণা চিংড়ি ও কাটা প্রজাতির মজুদ এবং পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। গবেষকরা বলছেন, এসব মাছ অতিরিক্ত আহরণ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত আহরণের কারণে যেকোনো মাছ বাণিজ্যিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করা না হলে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘লাক্ষা, তাইল্যা, রূপচান্দা, পোয়া টাইপের বেশ কিছু মাছ বিশেষ করে দামি এবং বড় আকৃতির মাছ এখন খুবই কম পাওয়া যাচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই, বেশ কিছু মাছের ধারাবাহিক ঘাটতি রয়েছে। এটা নির্দেশ করে যে, সমুদ্রে তাদের পরিমাণ কমে গেছে।

জেলেদের অভিজ্ঞতা

সামুদ্রিক মৎস আহরণে বাংলাদেশে কাঠের তৈরি ট্রলার, মাঝারি ট্রলার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ব্যবহৃত হয়। নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের হিসাবে নিবন্ধিত কাঠের নৌযানের সংখ্যা ১১ হাজার ৭১৫টি। তবে ধারণা করা হয়, অগভীর সাগরে মাছ ধরায় যুক্ত আছে ৬০-৬৫ হাজার নৌযান। এ ছাড়া রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার যেগুলো সাগরে ৪০ মিটার গভীরতার পরে মাছ শিকার করে। নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের হিসাবে ২৫১টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযান বর্তমানে সমুদ্রে মাছ আহরণ করছে।

চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে মাছ নিয়ে আসা বেশ কয়েকজন জেলেও বিবিসিকে জানান, তারা আর আগের মতো মাছ পান না। ছোট ট্রলারের জেলেদের অভিযোগ বড় এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণও কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে মাছ ধরার পদ্ধতি নিয়েও উদ্বেগ জানান তারা। জেলেদের অভিযোগ বড় নৌযানগুলোর জালে ছোট বড় নির্বিশেষে সব মাছই আটকা পড়ে। ফলে অনেক মাছের অকাল মৃত্যু ঘটে।

এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জেনে নির্বিচারে শিকার করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযানে মাছ শিকারের যে জাল সেটিরও নির্ধারিত মাপ আছে কিন্তু সেটি কতটা মানা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। সামুদ্রিক সাদা বা বড় মাছ এবং চিংড়ি ধরার জন্য জালের ম্যাশ সাইজ যথাক্রমে ৬০ মিলিমিটার ও ৪৫ মিলিমিটার নির্ধারিত থাকলেও অনেকেই এটি মেনে চলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় মৎস্য আহরণে ভারত ও মিয়ানমারের নৌযানের অনুপ্রবেশও মাছ কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ বলে জানান জেলেরা।

নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বিবিসিকে বলেন, সাগরে মাছের মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নৌযানের সংখ্যা বাড়ানোর বিপক্ষে তারা।

তিনি বলেন, ‘যতদিন মাছের মজুদ এবং পরিমাণ সম্পর্কে রিপোর্ট না পাচ্ছি আমাদেরকে নৌযানের এ সংখ্যা সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, না হলে আমাদের এই ফিশিং সেক্টর এবং সাগরে চারটা ফিশিং গ্রাউন্ড আছে সেগুলো মাছশূন্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

গবেষকরা বলেন, ইলিশকে টার্গেট করে যেভাবে সাফল্য এসেছে সামুদ্রিক অন্যান্য মূল্যবান অর্থকরী মাছের ক্ষেত্রেও আলাদা করে সুনির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা দরকার।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.