চারটি হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা পাননি, মারা গেলেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ

কুড়িগ্রামে প্রসবব্যথা নিয়ে সুজিনা বেগম (২৮) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগে ওই গৃহবধূকে নিয়ে সরকারি-বেসরকারি চারটি হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ সুজিনা বেগম (২৮)

মারা যাওয়া গৃহবধূ জেলার উলিপুর উপজেলার মিয়াজিপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। ওই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সুজিনার মৃত্যর জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করে শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রসবব্যথা শুরু হয় তার স্ত্রীর। রাতেই খালা শাশুড়ি আমিনা বেগমসহ তিনি সুজিনাকে উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো চিকিৎসকের দেখা পাননি তারা। পরে রাত ৯টার দিকে সেখানে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক তাদের স্থানীয় আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালে পাঠালে ৭০০ টাকার বিনিময়ে ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ সুজিনাকে ভর্তি করে।

এরপর হাসপাতাল থেকে তাদের সিজারিয়ান অপারেশনের কথা বলে ওষুধ কিনতে পাঠায়। কিন্তু পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক সুজিনাকে দেখতে আসেনি। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৮০০ টাকার বিনিময়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাদের কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখানেও চিকিৎসকরা সেবা না দিয়ে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি ক্লিনিক গ্রিন লাইফ জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।

উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে সুজিনাকে ভর্তি করে এবং নার্সরা সিজারিয়ান অপারেশনের কথা বলে ওষুধ কেনান। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও কোনো চিকিৎসক না আসায় রোগীর অবস্থা আরো অবনতি হয়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে ফের তাদের কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর স্বাস্থকর্মীরা সুজিনাকে একটি ইনজেকশন দেয়। যার কিছুক্ষণ পরেই মারা যান তিনি।

শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে আরো বলেন, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরেছেন তিনি। চিকিৎসক-নার্স যাকে পেয়েছেন তারা হাতে পায়ে ধরেছেন। অনেক টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু তারপরও কেউ তার স্ত্রীকে চিকিৎসা সেবা দেয়নি। তার আট বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। তিনি তার স্ত্রী হত্যার বিচার চান।

অভিযোগের বিষয়ে উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকলে কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে কোনো রোগী আসলে এমনটি হওয়ার কথা নয়।

আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক এরশাদুল হক চাঁদ বলেন, ভর্তি করার পর ওই গৃহবধূর প্রেসার বেড়ে যায় এবং খিঁচুনি শুরু হয়। এ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে অপারেশন করা সম্ভব ছিলো না। তাই তারা রোগীকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা রেদওয়ান ফেরদৌস সজিব বলেন, ঘটনাটি তার জানা নেই। এমনকি কেউ এ বিষয়ে অভিযোগও করেনি। তবে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।