সেই উহানে বিয়ের ধুম

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। দিন দিন বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলেও, এখন কিছুটা থিতু হয়েছে চীন। তাইতো টানা দুই মাস লকডাউনে থাকার পর গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে উহানে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপরই বিয়ের ধুম লাগে শহরটিতে।

লকডাউন শেষে বিয়ের ধুম পড়েছে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে।

বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় টানা দুই মাস অবরুদ্ধ ছিলেন উহানবাসী। অবরুদ্ধ দশা কাটিয়ে ওঠার পর যেসব জুটি প্রাণে বেঁচে গেছেন তারা আর দেরি না করে দ্রুত বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাইছেন। 'নতুন জীবন' পাওয়াকে উদযাপন করছেন বিয়ের পিঁড়িতে বসে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউন প্রত্যাহারের পর পরই বিয়ের পিড়িতে বসেছেন জু লিন। তিনি জানান, উহান এবং তার জন্য আজ একটি বিশেষ দিন। উহান শহর এবং তিনি নতুন জীবন শুরু করছেন।

উহানে বিয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়া গত শুক্রবারই পুনরায় চালু করা হয়। কিন্তু এতদিন শহরজুড়ে লকডাউন থাকায় কেউ বিয়ে করতে পারছিলেন না। লকডাউন প্রত্যাহারের পর পরই অনেকে শুভ কাজটি সেরে ফেলতে শুরু করেছেন। ফলে বিয়ের ধুম পড়েছে শহরটিতে।

উহানের সরকারি বিভিন্ন অ্যাপ পরিচালনা করা আলি পে জানায়, শহরটিতে বিবাহ নিবন্ধনের গতি আগের তুলনায় ৩০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনেকে অ্যাপে ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

লকডাউন শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে উহানবাসী।

মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে উহানের ওপর জারি থাকা সকল বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয় দেশটির সরকার। এর আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি পুরো শহরটি লকডাউন করে দেওয়া হয়।

লকডাউন তুলে নেওয়ার পর থেকে উহান শহর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। চালু করা হয়েছে গণপরিবহন। হেলথ অ্যাপে সবুজ সংকেত পাওয়া সুস্থ বাসিন্দা ও পর্যটকরা এখন শহরটিতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছেন। চাইলে শহর ছেড়ে অন্য কোনো স্থানেও যেতে পারছেন। ফলে সুযোগ পেয়ে বিয়ের পিঁড়িতেও বসছেন অনেকে।

এর আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে উহানের সঙ্গে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় চীন। শহরটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে চলা লকডাউনে শহরটিতে অবরুদ্ধ থাকেন ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা। এ সময় পুরো শহর পরিণত হয় এক ভূতুড়ে নগরীতে।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮১ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৩৫ জন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৭ হাজার ৩৭০ জন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে এই উহান শহরেই।