অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশের আকাশে বিদেশি বিমান, চলছে তদন্ত

অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের (এসআইএ) একটি যাত্রীবাহী বিমান। ঘটনাটি নিয়ে সক্রিয় তদন্ত করছে বিমান সংস্থাটি। পাশাপাশি রুট পরিবর্তনের কারণে এমন ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে এসআইএ।

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স- ফাইল ছবি

গত সোমবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে (সিএনএ) জানায়, গত ১৯ মে ফ্রাঙ্কফুর্ট যাওয়ার উদ্দেশে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে রওনা দেয় এসকিউ-৩২৬ ফ্লাইটটি। তখন বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান' অবস্থান করছিল। তাই ঘূর্ণিঝড় এড়াতে গতিপথ পরিবর্তন করে ফ্লাইটটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।

এ সময় ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) থেকে বার বার বিমানের পাইলটের কাছে এয়ার ডিফেন্স ক্লিয়ারেন্স (এডিসি) নম্বর জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু পাইলট এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্টো অস্পষ্ট বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিচ্ছিলেন। এ সময় এটিসি বিমানের পাইলটকে হুঁশিয়ারি দেন এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেন। পরে প্রায় ৩০ মিনিট দেশের আকাশসীমায় থাকার পর বিষয়টি অমীমাংসিত রেখেই প্রতিবেশী দেশের আকাশ সীমায় প্রবেশ করে ফ্লাইটটি।

পাইলটের কাছে এডিসি না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বিমানের গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি আগেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিকল্পনায় উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি ফ্লাইটের এডিসি প্রয়োজন হয়, যার অনুমতি তারা নেননি। তাই ঢাকার এটিসি থেকে বার বার এডিসি নম্বর চাওয়া হলেও পাইলট তা দিতে পারেননি।

এসআইএ কর্তৃপক্ষ ওই সংবাদমাধ্যমকে আরো জানান, তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে পদক্ষেপ তারা নিবেন এবং তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়াগুলো আরো জোরদার করবেন।

সাধারণত ফ্লাইটটি প্রতিবার চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের আকাশসীমা হয়ে ভারতের বঙ্গোপসাগর অংশের ওপর দিয়ে কলকাতা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাজাখস্থান, রাশিয়া, বেলারুশ ও পোল্যান্ডের আকাশসীমা অতিক্রম করে ফ্রাঙ্কফুর্ট যায়।

তবে ওইদিন স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইটটি গতিপথ পরিবর্তন করে মিয়ানমারের আকাশসীমা হয়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়ে। পরে ৩০ মিনিটে দুবলার চর, সুন্দরবন পার হয়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ফ্লাইটটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। এ সময় বিশ্বের অনেক দেশের ফাইটার জেট দিয়ে ধাওয়া করার নজির থাকলেও ঢাকার এটিসি থেকে শুধু হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক সার্কুলারে নির্দেশনা দেয়, অন্য কোনো দেশের বিমান যদি বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে চায়, তাহলে তাদের আগে থেকেই এডিসি নম্বর জোগাড় করতে হবে। পাশাপাশি দেশের আকাশসীমায় প্রবেশে অন্তত ১০ মিনিট আগে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া সর্বশেষ যে দেশের ওপর দিয়ে বিমানটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করবে, সেই দেশের এটিসিকে তা বাংলাদেশের এটিসিকে অবগত করতে হবে।

কিন্তু সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ওই বিমানের ক্ষেত্রে কোনটিই করা হয়নি। বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারের জন্য এডিসি নম্বর জোগার করা হয়নি, আকাশসীমায় প্রবেশের আগে তা ঢাকার এটিসিকে অবহিত করা হয়নি এবং সর্বশেষ ফ্লাইটটি মিয়ানমারের ওপর দিয়ে আসলেও দেশটির এটিসি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।