আপনি পড়ছেন

নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসার অনুমতি নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলো রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল। সম্প্রতি এই প্রতারণা ধরা পড়লে জানা যায়, হাসপাতালটির নিবন্ধনও অনেক বছর ধরে নবায়ন করা নেই। তবে শুধু এই রিজেন্ট হাসপাতালই নয়, কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য বেসরকারি যেসব হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার, সেগুলোর বেশিরভাগেরই লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ। নানা অজুহাতে নির্বিঘ্নে বছররের পর বছর ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো।

anwar khan mordern hospitalআনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল- ফাইল ছবি

নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন বেশ কয়েকটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ আবার লাইসেন্স নবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন। অনেকে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাননি। তবে এ সবই অবগত ছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু জেনেশুনেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। উল্টো দেশের এ সংকটকালে এসব হাসপাতালকেই দেওয়া হয়েছে করোনা চিকিৎসার অনুমতি।

ফলে করোনা চিকিৎসার নাম করে সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে হাসপাতালগুলো। পাশাপাশি রোগীদের কাছ থেকেও আদায় করছে অতিরিক্ত অর্থ।

লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং নবায়ন পদ্ধতির ত্রুটিকেই দুষছেন হাসপাতালগুলোর পরিচালক ও চিকিৎসকরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালের নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করা হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন। তখন তারা নানা ধরনের ত্রুটির কথা বলে অবৈধ অর্থ দাবি করেন। যা না দেওয়ায় আটকে আছে লাইসেন্স নবায়ন।

bongobondhu memorial hospitalবঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল- ফাইল ছবি

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি হাসপাতালকে লাইসেন্স নবায়নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি দেখাতে হয়। পাশাপাশি পরিবেশগত ছাড়পত্র, সিটি কর্পোরেশনের নিষ্পত্তিসহ চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ হাসপাতালই এসব র্শত পূরণ করতে পারে না। তাই মালিকরা নানা অজুহাতে নিবন্ধন নবায়নের ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবায় মোট হাসপাতাল রয়েছে ২৮টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতাল ১৯টি এবং বেসরকারি হাসপাতাল ৯টি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ৪টি রাজধানী ঢাকাতে, ৪টি চট্টগ্রামে এবং ১টি নারয়ণগঞ্জে।

রাজধানীর চারটি হাসপাতাল হলো- আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল (উত্তরা ও মিরপুর শাখা), হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বসুন্ধরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এর মধ্যে সম্প্রতি নতুন করে করোনা চিকিৎসায় উদ্বোধন করা হয়েছে বসুন্ধরা হাসপাতাল। বাকি তিনটি পুরোনো। তবে তাদের কারোরই নিবন্ধন নবায়ন করা নেই।

bangladesh risky health department

সম্প্রতি করোনা পরীক্ষার নাম করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার করায় রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৪ সালেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এরপর আর সেটি নবায়ন করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অথচ এই হাসপাতালটিকেই করোনা চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৯ সালে। হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে পুনরায় লাইসেন্স নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানা সত্ত্বেও সম্প্রতি তাদের কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। একই অবস্থা রাজধানীর কলাবাগানে অবস্থিত আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। হাসপাতালটির নিবন্ধনের মেয়াদ গত বছর শেষ হয়ে গেছে। তারপরও তাদের করোনা চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের করোনা চিকিৎসার অনুমতি পাওয়া ৪টি বেসরকারি হাসপাতাল হলো- চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, ভাটিয়ারির ফিল্ড হাসপাতাল, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল। এর মধ্যে ভাটিয়ারির ফিল্ড হাসাপতালটি সম্প্রতি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাকিগুলো পুরানো। যাদের মধ্যে দুটিরই লাইসেন্স নবায়ন করা নেই।

গত ৩ বছর ধরেই লাইসেন্স নবায়ন করেনি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। অথচ হাসপাতালটিকে করোনা চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে হাসপাতালটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল ও সরকারি ব্যবস্থাপনা পরিচলানা করা হচ্ছে। একই অবস্থা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের। এই হাসপাতালটিরও ২০১৮ সাল থেকে নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি। তারপরও এটিকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।

এ বিষয় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. কামরুল হাসান বলেন, লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা পুনরায় নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু অনলাইনে নবায়নের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার কারণে এতে দেরি হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু শর্ত পূরণ করতে না পারায় এতে দেরি হচ্ছে।

তবে বন্দরনগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা আছে। হাসপাতালটির পরিচালক ডা. নুরুল হক জানিয়েছেন, তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল শর্ত পূরণ করে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। সকল শর্ত পূরণ করায় নিবন্ধন নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তাদের কোনো সমস্য হয়নি।

নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি হাসপাতালটি হলো ৪৪ শয্যা বিশিষ্ট সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। গত ১১ বছর ধরে রোগীদের সেবা দিচ্ছে এ হাসপাতালটি। তবে চলতি বছরের জুন মাসে তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর পুনরায় নবায়নের জন্য আবেদন করা হলেও এখনো তা পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করা আছে মাত্র ৪ হাজার ১৫৯টির। ৩ হাজারের কিছু বেশি হাসপাতাল পুনরায় লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে। বাকি সাড়ে ৭ হাজার বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, যেসব হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ এবং পুনরায় আর নবায়ন করেনি, তাদের তালিকা প্রস্তুত করছে অধিদপ্তর। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.