ভারতীয় সংস্থায় ‘আটকা’ রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন

বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি)। নির্মানাধীন এ প্রকল্প থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কথা রয়েছে। তবে ভারতের আর্থিক সংস্থা দরপত্র প্রক্রিয়ায় ‘অস্বাভাবিক’ সময় নেয়ায় ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মিতব্য দেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রুশ প্রতিষ্ঠান রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন। একটি চুক্তির আওতায় এতে সহায়তা করছে ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)।

রুশ নকশায় তৈরি সর্বাধুনিক নিরাপত্তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির রূপপুরের দুটি ইউনিটের প্রতিটিতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া

এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা ২০২৩ সালের মে-জুনে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসবে। দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)।

২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের অভিজাত ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করে। কংক্রিট ঢেলে দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্ধোধন করা হয় ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই।

প্রথম ইউনিটে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য ২০২২ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে ১.০৬ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি সই করে বাংলাদেশ।

আরএনপিপির পাঁচটি সঞ্চালন প্রকল্প রয়েছে, যার প্রথমটি ১৩ কিলোমিটার নদী পারাপারসহ মোট ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। অন্য চারটি হলো- ২০৫ কিলোমিটার (৭ কিলোমিটার নদী পারাপারসহ) ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন, ৪০০ কেভির পাঁচটি বে এক্সটেনশন, ২৩০ কেভির চারটি বে এক্সটেনশন এবং ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন ও জরুরি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কাজ।

এর মধ্যে প্রথম প্রকল্পটি সহজে ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চারটি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়। তা হলো- ১০২ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া লাইন, ১৪৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন, ১৪৭ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা লাইন ও ৫১ কিলোমিটার আমিনবাজার-কালিয়াকৈর লাইন। এছাড়া ১৩ কিলোমিটার নদী পারাপারের কাজ পদ্মা নদীতে ছয় কিলোমিটার এবং যমুনা নদীতে সাত কিলোমিটার ভাগ করা হয়।

পাঁচ প্রকল্পের দ্বিতীয়টি ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন তিনটি প্যাকেজে ভাগ করে রূপপুর-বাঘাবাড়ী লাইন (৬০ কিলোমিটার), রূপপুর-ধামরাই লাইন (১৪৫ কিলোমিটার) এবং যমুনা নদী পারাপার লাইন (৭ কিলোমিটার) করা হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পিজিসিবি সূত্রমতে, এসব প্রকল্পের কিছু প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়া এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকিগুলো ঝুলে আছে ভারতীয় আর্থিক সংস্থার ছাড়পত্রের অভাবে। ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে অস্বাভাবিক সময় নেয়ায় এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরএনপিপি প্রকল্পের কার্যক্রম বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের কাজের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সময় মতো প্রস্তুত করা না গেলে বিদ্যুৎ উৎপান যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হবে না।

বিষয়টি স্বীকার করে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া ভারতীয় আর্থিক সংস্থার দ্রুত ছাড়পত্র পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যথাসময়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

২০১৩ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য দেশটির কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার একটি চুক্তি হয়। ওই বছরের অক্টোবরে রূপপুরে এ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের আইয়ুব খানের সরকারের আমলে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিলো। ওই জমি পর্যাপ্ত না হওয়ায় আরও ৯৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। নতুনভাবে অধিগ্রহণ করা ওই চরে পুরোদমে এখন চলছে মাটি ভরাটের কাজ।