‘গ্রেপ্তার এড়াতে’ সিদ্ধান্ত পাল্টালেন প্রশান্ত হালদার

প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করেছেন, নিজেও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

পি কে হালদার- ফাইল ছবি

সে অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অর্থ পাচারের মামলা করে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের হেফাজতে দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে গত বুধবার হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পি কে হালদার দেশে ফেরামাত্র গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত আদালতে পাঠাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেয়া হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে পি কে হালদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী ই-মেইলের মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও দুদককে জানিয়েছেন, তিনি এখন দেশে ফিরছেন না।

এর আগে পি কে হালদারের আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারে তিনি যাতে নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারেন- এ জন্য হাইকোর্টে একটি আবেদন করে আইএলএফএসএল। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার একই বিচারকের আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির পর আদালত আদেশের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন।

পি কে হালদার আইএলএফএসএলের সিংহভাগ ঋণের সুবিধাভোগী। এই প্রতিষ্ঠানটি থেকেই প্রায় দেড় হাজার টাকা আত্মাসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া আরো প্রায় ২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের পর তিনি গোপনে দেশ ছেড়ে কানাডা চলে যান।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

সম্প্রতি বিএফআইইউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ও তার ঘনিষ্ঠরা চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন। দুদকে পাঠানো প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে, কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে কারসাজির মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়ে বিদেশে সরানো হয়।

প্রতিষ্ঠান চারটি হলো- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড ও ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এফএএস)।

এর মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের নামে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ফাস ফাইন্যান্সের নামে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ এ অপকর্মে চারটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ছাড়াও ২৫-৩০ জনের সহায়তা রয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এসব ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগে পি কে হালদারসহ ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের মালিকানাধীন মোট ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এনবিএফআইয়ের কাছে থাকা তথ্য বলছে, এই অর্থ পাচার হয়েছে কানাডা, সিঙ্গাপুর ও ভারতে।

প্রসঙ্গত, গেল বছর অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করলে এর মালিকদের সম্পদের তদন্ত শুরু করে দুদক। সে সময় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ সরানোর অভিযোগ উঠে। অজ্ঞাত উৎস থেকে ২৭৫ কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগে এ বছর ৮ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।