বাদীর ভুলে পুলিশের চাকরি হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সোয়েব!

মারামারির একটি মামলায় বাদীর ভুলের কারণে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি হারিয়ে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান যশোরের চৌগাছার যুবক সোয়েব আক্তার। বিগত এক বছর ধরে ঘুরেও চাকরি ফিরে পাচ্ছেন না তিনি। অথচ মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের সুপারিশ করেছে।

সোয়েব আক্তার

এমতাবস্থায় বৃহস্পতিবার যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে চাকরি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভুক্তভোগী এই যুবক। তার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামে। বাবার নাম মোশারেফ হোসেন।

সোয়েব জানান, ২০১৭ সালের ৬ মার্চ চৌগাছা থানায় তিনিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বারুইহাটি গ্রামের শাহজাহান আলী বাদী হয়ে এটি দায়ের করেন। সেই মামলার ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে জামিরা গ্রামের মোশারেফ হোসেন ওরফে ফাজুর ছেলে মো. সাইফকে।

একই বছরের ২৭ মার্চ আদালতে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলা চলাকালীন পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট শিক্ষানবিশ কনস্টেবল হিসেবে প্রশিক্ষণে যোগ দেন সোয়েব। পরে ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর এক রায়ে মামলার সব আসামিকে খালাস দেয়া হয়। রায় দেন যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাইফুদ্দীন হোসাইন।’

২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন খুলনার সহঅধিনায়ক মো. সাজ্জাদুর রহমান রাসেল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মো. সোয়েব আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতির ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, তার নামে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। সে কারণেই এ ব্যবস্থা।

ভুক্তভোগী এই যুবক আরো দাবি করেন, তিনি মামলার আসামি ছিলেন না। ১০ নম্বর আসামির বাবা ও গ্রামের নামের সঙ্গে তার মিল রয়েছে। কিন্তু ওই ব্যক্তি তিনি নন। তবুও তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ সময় নিজেকে নিরাপরাধ দাবি করেন সোয়েব।

তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে অভিযোগ করে বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে চাকরিটা পান। কিন্তু এখন সেটি হারিয়ে বহু কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদনও করেছেন।

জানা গেছে, মাছের ঘের নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে মারধরের শিকার হন মামলার বাদী শাহজাহান আলী। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৬ মার্চ তিনি চৌগাছা থানায় মামলা করেন এবং ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর এফিডেভিট করে মামলাটি মীমাংসাও করেন।

এফিডেভিটে বাদী শাহজাহান খান বলেন, মামলার এজাহারে ১০ নং আসামি হিসেবে চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামের মোশারফ হোসেন ফাজুর ছেলে মো. সাইফের নাম উল্লেখ করলে পরে তদন্ত কর্মকর্তা ওই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সাইফ এ ঘটনায় জড়িত নন। তার নামে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। এমনকি মারামারির সময় সাইফ ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তিনি একজন ছাত্র এবং ওই সময় চৌগাছা ডিগ্রি কলেজে উপস্থিত ছিলেন।

চাকরিতে যোগদানের সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনে সোয়েবের নামে কোনো মামলার তথ্য ছিল না জানিয়ে চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজিব বলেন, বাদীপক্ষের লোকজন সোয়েব আক্তারকেই সাইফ বলে দাবি করেন। তাই আবার তদন্ত করা হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। এমনকি সে নিয়মিত হাজিরাও দিয়েছে। পরবর্তীতে খালাস পায়।