স্থানীয় সরকারের অধীনে থাকা তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে তিন ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৪টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট হবে তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায়।
আওয়ামী লীগের নৌকা, বিএনপির ধানের শীষ ও নির্বাচন কমিশনের লোগো
প্রথম ধাপের ২৪ পৌরসভার মধ্যে ১৯টিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা জয় পান মাত্র দুটিতে। দ্বিতীয় ধাপের ৫৬টির মধ্যে আওয়ামী লীগ জিতেছে ৪৫টিতে, বিএনপি মাত্র ৪টিতে।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪টিতে মেয়র প্রার্থী আগেই নির্বাচিত হয়েছে। গত শনিবার ভোট হয়েছে বাকি ৫৬টি পৌরসভায়। এর মধ্যে ৩০টি পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে প্রার্থী হলে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জামানত হিসেবে ভোটার সংখ্যা অনুপাতে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিতে হয়। মেয়র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বিএনপির দলীয় পতাকা
নিয়ম অনুযায়ী, মোট প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগের কম পেলে কোনো প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সে হিসেবে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা জামানত রক্ষার জন্য এই পরিমাণ ভোটও পাননি দ্বিতীয় ধাপের ৩০টি পৌরসভায়।
জামানত হারানো পৌরসভাগুলো হলো
কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা, মিরপুর ও শৈলকুপা; দিনাজপুরের জেলার বিরামপুর ও বীরগঞ্জ; গাইবান্ধার সদর ও সুন্দরগঞ্জ; রাজশাহী জেলার ভবানীগঞ্জ ও আড়ানী; নাটোর জেলার গোপালপুর ও গুরুদাসপুর; নরসিংদী জেলার বেলকুচি ও রায়গঞ্জ; মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া; চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ ও বান্দরবানের লামা পৌরসভা।
এ ছাড়া ঢাকার সাভার, নরসিংদীর মনোহরদী, শরীয়তপুর সদর, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, মেহেরপুরের গাংনী, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, ফেনীর দাগনভূঞা, বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট, মাগুরা সদর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভায় জামানত হারিয়েছেন বিএনপি প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা
নৌকার প্রার্থীর জামানতও বাজেয়াপ্ত
দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা এ নির্বাচনে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের একচেটিয়া জয়জয়কার লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে এর মধ্যেও একটি পৌরসভায় জামানত হারিয়েছেন দলটির এক প্রার্থী।
সিলেটেন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্ত জামানত হারিয়েছেন। মোট প্রদত্ত ১৩ হাজার ১০৫টি ভোটের মধ্যে জামানত রক্ষা করতে দরকার ছিল ১ হাজার ৬৩৮টি ভোট। কিন্তু নৌকা প্রতীকে শ্রীধাম দাশ গুপ্ত পেয়েছেন মাত্র ৬০৮টি ভোট।
মাধবপুর পৌরসভায় এবার ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্ত হয়েছেন চতুর্থ। এখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়ী পান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশন ভবন
কোন দল কত ভোট পেল
ইসি ঘোষিত এ ধাপের নির্বাচনী ফলাফল বলছে, দুই ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে যা ছিল ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বিএনপি প্রার্থীরা ভোট পেয়েছে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে দল দুটি ভোট পেয়েছে যথাক্রমে ৬০ দশমিক ০৩ শতাংশ ও ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ।
দ্বিতীয় ধাপের ভোটে নৌকা প্রতীকে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬১২টি ভোট পড়েছে। এর বিপরীতে ধানের শীষে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৮২টি।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জাসদ, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ২২ দশমিক ০৬ শতাংশ ভোট।
দুই ধাপের নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটে ‘বিশাল’ বা ‘অস্বাভাবিক’ ব্যবধান লক্ষ করা গেছে। নৌকার প্রার্থীরা একচেটিয়া জয় পেলেও ধানের শীষের অনেক প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।