মাদ্রাসায় পড়া নারীরাও কর্মজীবনে ‘সফল’

বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসায় পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ মেয়ে। তার ওপর আবার ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের কাজের সুযোগ বেশ কম। এই সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়েই অনেক নারী কর্মজীবনে দারুণ সফল্য পাচ্ছেন।

মহিলা মাদ্রাসায় পাঠদান

এ বিষয়ে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগ একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বেশ কয়েকজন মাদ্রাসা পড়ুয়া নারীর সাক্ষাৎকার রয়েছে। তাদের আলাপচারিতায় নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে।

তাদের মধ্যে একজন নাশিদ কামাল রাইয়ান, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের সহাকারী পরিচালক পদে কর্মরত। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর জান্নাতুল বানাত মহিলা মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।

নাশিদ কামাল রাইয়ান বলেন, অনেকেই মনে করে থাকেন- মাদ্রাসায় লেখাপড়া হয় না, চাকরিও মেলে না। তাদের সেই ভুল ধারণা কেটে গেছে এখন।

দেশের অন্যতম প্রধান মহিলা কামিল মাদ্রাসা এটি

মাদ্রাসায় পড়ায় মানসিক বিকাশে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলছেন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি, সাফল্যও পেয়েছি। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসায় পড়ায় জীবন গঠনে সহায়ক ইসলামি শিক্ষা পেয়েছি। মাদ্রাসায় পড়ায় অনেক বেশি সহনশীল হয়েছি বলে মনে করি।

জান্নাতুল বানাত মহিলা মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহসেনা আক্তার কামিল (মাস্টার্স সমমান) পাস। আলিমের পর অনার্সে ইংরেজিতে ভর্তি হলেও শেষ করা হয়নি।

মাদ্রাসাটির অনেক মেয়ে সরকারি চাকরি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। আমেনা খাতুন নামে এক ছাত্রী রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েছেন।

মাদ্রাসায় পাঠদান

এ রকমই আরেকটি মাদ্রাসা নরসিংদীর লাখপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিয়মিত শরীর চর্চা করানো হয়। মাদ্রাসাটির সুপার মাওলানা নাজমুল হোসাইন জানান, মাদ্রাসাটি থেকে পাস করা ছাত্রীরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।

এমপিওভুক্ত এসব মাদ্রাসায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই ও সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান করা হয়। ফলে সাধারণ শিক্ষার মতোই এখানে আরবি ও ইসলামিক বিষয়ের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিতসহ সব বিষয় পড়ানো হয়।

দেশে তিনটি সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়াও এমপিওভুক্ত কয়েক হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসা সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়।

মহিলা কওমি মাদ্রাসায় পাঠদান

এর মধ্যে এবতেদায়ি (১ম-৫ম শ্রেণি) মাদ্রাসা ৩ হাজার ৪৩৩টি, দাখিল (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি) মাদ্রাসা ৬ হাজার ৪৯৩টি, আলিম (একাদশ ও দ্বাদশ শেণি) মাদ্রাসা এক হাজার ৫৫৮টি এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা ২১৮টি। ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসার সংখ্যাটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ছাড়া দেশে পুরোপুরি বেসরকারি ২৫ হাজারের মতো কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র অসংখ্য মহিলা মাদ্রাসাও রয়েছে। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার সিলেবাসে এসব মাদ্রাসা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (বেফাক) অধীনে পরিচালিত হয়।

সম্প্রতি কওমিদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরা হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে সরকার। এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা কওমি মাদ্রাসার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি খাতে সীমিত সংখ্যায় সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি চাকরিতে খুব একটা সুযোগ নেই। এমনটাই জানান হাটহাজারীর জামিয়া ইসলামিয়া ওবায়দিয়া নানুপুরি কওমি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরি।