কওমি শিক্ষকদের দুয়ারে বেতন-বোনাসহীন ঈদ

করোনার প্রভাবে দেশের বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ শিক্ষক। তবে ব্যতিক্রম চিত্র ছিলো কওমি মাদরাসাগুলোয়। করোনার সময়েও সরকারি নির্দেশ মোতাবেক কওমি মাদরাসা খোলা ছিলো। গেলো এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ থেকে চলমান বিধিনিষেধে কওমি মাদরাসাও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

মাদরাসা বন্ধ থাকার ফলে এবার অনেক শিক্ষকই বেতন-বোনাস না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, ফান্ডে টাকা নেই, তাই বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষক ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ একত্রে বসে সমাঝোতা হওয়া জরুরি। করোকালের অজুহাতে মাদারাসা শিক্ষক ও মালিকপক্ষের মাঝে দূরত্ব তৈরি হওয়া কাম্য নয়।

রাজধানীর চিটাগাং রোডের একটি ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদারাসার শিক্ষক মুফতি এহসান সিদ্দিকি। তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে। সেই প্রভাব আমাদের সবার ওপরও পড়েছে। কওমি মাদরাসাগুলো যদিও জনগণের টাকায় চলে, কিন্তু কওমি মাদরাসার ফান্ডিং এতটা দুর্বল নয় যে শিক্ষকদের বেতন বোনাস দিতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমি যে মাদরাসায় চাকরি করি, ওই মাদরাসার পক্ষে সব শিক্ষকের বেতন বোনাস নিশ্চিত করাটা কঠিন ছিলো না। কিন্তু আমরা পেলাম অর্ধেক বেতন।
রাজধানী ও মফস্বলের অন্তত ১০ জন কওমি শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তারা টুয়োন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে জানান, বোনাস পাইনি কেউই। অর্ধেক ও আংশিক বেতন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। বেতন বোনাস কোনোটিই পাননি এমন কথাও জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

রামপুরার একটি কওমি মাদরাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক মুফতি আফসারুল কবির বলেন, কওমি শিক্ষকদের এখন দুর্দিন চলছে। সারা দেশের শিক্ষকদের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে। বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে এমন মাদরাসার সংখ্যা নেই, তা বলব না। তবে এমন ঘটনা আমি শুনিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন কওমি শিক্ষবিদ বুধবার (১২ মে) সকালে একটি পোস্টে লিখেন, ‘কওমি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করুন।’ ওই পোস্টে মিরপুরের একটি কওমি মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা হাসান মাহমুদ কমেন্ট করেন, বোনাস তো দূরের কথা বেতনও পাইনি।

চট্টগ্রামের হাফেজ মুফতি ইলিয়াস হোসেন ওই পোস্টে লিখেন, ছেলে সন্তান নিয়ে আনন্দের সঙ্গে ঈদ করার অধিকার কওমি শিক্ষকদেরও আছে। এখন হয়ত করোনার অজুহাতে আমরা বেতন পাচ্ছি না। কিন্তু বেতন বোনাস নিয়ে এমন বৈষম্য সবসময় চলে কওমি মাদরাসাতে। এছাড়া শিক্ষকরা কমেন্টে আরো লিখেছেন, বেতন চাইলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলে কালেকশন করে নিন অথবা ফোন রিসিভ করে না।

এ প্রসঙ্গে কওমি শিক্ষাবিদ এবং দৈনিক ইনকিলাবের সহসম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী টুয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, বর্তমানে কওমি অঙ্গনে অস্থিরতা চলছে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করে না এমন কওমি মাদরাসার সংখ্যা আমি মনে করি খুব কমই আছে।

তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা জনগণের অর্থায়নে চলে। কোটি কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। কওমি শিক্ষকদের এ মুহুর্তে ধৈর্য ধরার পরামর্শ ছাড়া আর কী দেওয়া যায়। যাদের সামার্থ্য আছে তারা যেন শিক্ষকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেন সে অনুরোধও করেছেন এ কওমি রাহবার।