ফের পদদলিত স্বাস্থ্যবিধি, গ্রাম-গঞ্জে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা

দেশে আবারো উদ্বেগজনক হারে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন পালন করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই সময়ে জরুরি সেবা ব্যতীত যাবতীয় সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। বন্ধ থাকবে সকল প্রকার যানবাহন।

ফের পদদলিত স্বাস্থ্যবিধি, গ্রাম-গঞ্জে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা

লকডাউনের এই খবরে আবারো স্বাস্থ্যবিধিকে পদদলিত করে করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে গ্রাম-গঞ্জে ফিরছে মানুষ। ঈদুল আজহাকে সামনে ঢাকায় যাদের কাজকর্ম নেই তারা এবং যাদের কাজকর্ম রয়েছে তারা পরিবারের সদস্যদের আগেভাগে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর পর আজ শনিবার সকাল থেকেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। এমনকি ফেরি পারাপারও হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। যদিও ফেরিতে শুধু পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি যানবাহন পার করার কথা। কিন্তু এসবের চেয়ে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। আবার কারো মধ্যে নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। সাধারণ মাস্কটা পর্যন্ত নেই অনেকের মুখে।

ফের পদদলিত স্বাস্থ্যবিধি, গ্রাম-গঞ্জে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের টার্মিনাল সুপারিটেনডেন্ট মেহেদী হাসান জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ রুটের ১৫টি ফেরির মধ্যে ১৪টি চলাচল করছে। নিয়ম অনুযায়ী শুধু রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি পণ্য পরিবহনের গাড়ি পারাপারের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যাত্রীরা ঘাটে ভিড় জমাচ্ছেন।

শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ বলছেন, শনিবার সকাল থেকেই ঘাটে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। তবে গাড়ির চাপ কম। লকডাউনের নিয়ম অনুযায়ী শুধু লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারের কথা। কিন্তু তার পরও যাত্রীরা ঘাটে ভিড় করছেন। যাত্রী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের নয়।

ফের পদদলিত স্বাস্থ্যবিধি, গ্রাম-গঞ্জে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা

এ বিষয়ে মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে লকডাউনের নির্দেশনা মানার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি যাত্রীদের ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও বিভিন্নভাবে ঢাকা থেকে ঘাটে পৌঁছে যাচ্ছে যাত্রীরা। অন্যদিকে, বাংলাবাজার ঘাট থেকে আসা যাত্রীরা আবার ঢাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান জানান, আজ (শনিবার) সকাল ৯টার পর থেকেই মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। পদ্মায় বর্তমানে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। তবে শুধু ব্যক্তিগত যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করতে দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি করোনার যে ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ছে তার তেমন কোনো উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না। ফলে যেসব মানুষ এভাবে দলে দলে বাড়ি ফিরছে, তাদের কার দেহে করোনা আছে আর কার শরীরে নেই সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তার মানে এসব লোকের মধ্যে অনেকের দেহে যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে সেটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের মাধ্যমে যে ভাইরাসটির সংক্রমণ গ্রাম-গঞ্জে ছড়াবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

তাছাড়া আগে করোনার সংক্রমণ অনেকটা শহরকেন্দ্রীক হলেও এবার কিন্তু তা সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে ঈদুল আজহার আগে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।