জবির মার্কেটিং বিভাগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গবেষণায় হরিলুট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মার্কেটিং বিভাগে অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থ কেলেঙ্কারি, প্রকল্পের টাকা লুটপাট, শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ণের অভিযোগ, বিদেশ সফর নিয়ে নানান ভেল্কি চলছে এই বিভাগে। এক শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় মেয়াদ পূর্তির আগেই পদ ছেড়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মার্কেটিং বিভাগে কোটি টাকার গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন হেকাপ প্রকল্পের অর্থ লোপাটসহ অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কোটি টাকার এই গবেষণা প্রকল্পের টাকা লুটপাট হচ্ছে। বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন আরিফ নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেন। পরে প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট থেকে সেই টাকা তুলে নেন। বিভাগীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়া একসঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা খরচের বিধান না থাকলেও একক সিদ্ধান্তে ওই শিক্ষক এমনটা করেছেন।

এই গবেষণা প্রকল্পের অর্থ লোপাটের পথ সহজ করতে বিদেশি ডিগ্রি ও আন্তর্জাতিক গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি নিয়ে জোর আপত্তি দেখা দেয়।

অন্যদিকে হেকাপ প্রকল্পের আওতায় বিদেশ সফরেও ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দেয়া হয়। বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক মো. মাহাদি হাসান জুয়েলকে সুকৌশলে বাদ দিয়ে সেখানে সহকারি অধ্যাপক সাবরিন সুলতানাকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। সহযোগি অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফের নেতৃত্বে সহকারি অধ্যাপক মো. জাকির হাসান তালকুদার ও তার স্ত্রী সহকারি অধ্যাপক আফসানা হোসেন বিদেশ সফরে যান। অভিযোগ আছে, সাবেক চেয়ারম্যান দফতরে অনুপস্থিতির সুযোগে নিজ স্বার্থ হাসিলে বিদেশ সফরে অনাপত্তিপত্র ইস্যু করেন সহযোগি অধ্যাপক আরিফ। গবেষণা প্রকল্পে এ ধরনের অনিয়মের কারণে বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকরা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।

বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জহির উদ্দিন আরিফের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তৃতীয় ব্যাচের এক ছাত্রী। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনায় জবি কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফকে ভর্ৎসনা করেন। ওই শিক্ষক বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য এক অলিখিত নিয়ম চালু করেছিলেন।

ওই ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করলে জানান, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শেষে ট্রান্সক্রিপ্ট কিংবা সার্টিফিকেট কোনো কাজেই তারা বিভাগে প্রবেশ করতে পারেন না। এখন পর্যন্ত সবগুলো ব্যাচের মধ্যে তাদের পরীক্ষার ফলাফল শোচনীয়ভাবে খারাপ হয়েছে। ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাউকে দেখলেই আরিফ স্যার উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকুরিরত মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের এক ছাত্রী বলেন, 'যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সম্পূর্ণ সঠিক। তবে পদ্ধতিগত ভুলের কারণে ওই সময় ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছি। এরপর থেকে বিভাগে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন আমাদের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এখনো হচ্ছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। তিনি আরো বলেন, প্রায়শই আরিফ স্যার ক্লাসে এসে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করতেন।'

এর আগেও তার নানা স্বেচ্ছাচারিতায় বিভাগে অচলবস্থা সৃষ্টি হয়। তিন মাস পর্যন্ত বিভাগের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, প্রশ্নের ফটোকপি পর্যন্ত অন্য বিভাগ থেকে করাতে হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগত অপছন্দের কারণে যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাবের কোনো চেকে সই করেননি আরিফ। এতে করে ইভিনিং এমবিএ প্রোগ্রামের শিক্ষকদের সম্মানী পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাকির হোসেন পদত্যাগ করলে চেয়ারম্যান হন সহযোগি অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফ। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান ও ইভিনিং এমবিএ’র পরিচালকের পদ আকড়ে রাখতে চাইলে এই অচলবস্থা আরো দীর্ঘায়িত হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম ভূইয়া, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান বৈঠক করেও এর কোন সুরাহা করতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, আপনাদের অনুসন্ধানে সত্য বের হয়ে আসবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিষয়গুলো নিয়ে বেশি দূর যেতে চাই না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, 'শিক্ষকদের অর্ন্তকোন্দলে বিভাগে অচলবস্থা চলতে থাকলে ভিসি ও ট্রেজারার মহোদয় বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব দেন। ব্যক্তিগত তাদের সঙ্গে সম্পর্কের খাতিরে মধ্যস্থতার চেষ্টা করি। '

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মার্কেটিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক মো: জহির উদ্দিন আরিফ বলেন, 'অভিযোগগুলো সত্যিকার অর্থে সঠিক নয়। গবেষণা প্রকল্পের ডিসিশন মেকার আমি নই। তাই সব কিছু আমার একক সিদ্ধান্তে হয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়। এ ছাড়া যৌন হয়রানি নয়, ৬ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ বিলম্বের কারণে তারা নানাভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল।'

আপনি আরো পড়তে পারেন

বস্তি থেকে উদ্ধার হলো একে-২২

যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত

মারা গেলেন বিএনপি নেতা হান্নান শাহ

রাজধানীতে ৩ অক্টোবর থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ

'খ' ইউনিটের পরীক্ষায় মাদরাসা শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ প্রথম

হাছান মাহমুদ: ইউনেস্কোর প্রতিবেদন 'হাস্যকর'